ওয়াসা ভবন, ১ম তলা, ৯৮ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫, বাংলাদেশ
ফোনঃ 01767404822
Design & Developed by:
এ সম্পর্কিত আরও খবর
বজ্রপাতকে আমরা সাধারণত একটি প্রাকৃতিক ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করি। বজ্রপাতের ভয়াবহতা আমাদের সামনে পরিচিত। বজ্রপাতের কারণে নতুন ধরনের দূষণ তৈরি হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, বজ্রপাত কেবল আলো ও শব্দের ঝলকানি নয়। বজ্রপাতের কারণে বায়ুমণ্ডলে ব্যাপক পরিমাণে রাসায়নিক পদার্থ তৈরি হয়। এতে বায়ুদূষণ বাড়ছে। সম্প্রতি একদল বিজ্ঞানী নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রথমবারের মতো এই অদৃশ্য দূষণকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। বজ্রপাতের সময় বিদ্যুৎপ্রবাহ অনেক শক্তিশালী হয়। এতে বাতাসের নাইট্রোজেন ও অক্সিজেন অণু ভেঙে যায়। এরপর সেই মুক্ত অণুগুলো নতুনভাবে একত্র হয়ে নাইট্রোজেন অক্সাইড তৈরি করে। এই নাইট্রোজেন অক্সাইড বায়ুদূষণের একটি প্রধান উপাদান। এটি সূর্যের আলোর সংস্পর্শে এসে বিষাক্ত ওজোন গ্যাস তৈরি করে। মাটির কাছাকাছি তৈরি হওয়া এই ওজোন গ্যাস মানবস্বাস্থ্য ও উদ্ভিদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। দীর্ঘদিন ধরে বিজ্ঞানীরা এই দূষণের সঠিক পরিমাণ নিয়ে নিশ্চিত ছিলেন না। বজ্রপাতের সময় বিভিন্ন গ্যাস খুব দ্রুত তৈরি হয় ও মিশে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ডের গবেষকেরা একটি নতুন ও কার্যকর পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন গ্যাসের তথ্য জানার জন্য। ২০২৫ সালের জুনের শেষ দিকে বিজ্ঞানী অধ্যাপক কেনেথ পিকারিং ও সহযোগী বিজ্ঞানী ডেল অ্যালেন নাসার ট্রপোস্ফিয়ারিক এমিশনস: মনিটরিং অব পলিউশন (টেম্পো) যন্ত্রের তথ্য বিশ্লেষণ শুরু করেন। মাটিতে থাকা লাইটনিং ডিটেক্টর বা বজ্রপাত শনাক্তকারী যন্ত্রসহ স্যাটেলাইটের তথ্য–উপাত্ত ও বায়ুমণ্ডলীয় মডেলকে যুক্ত করে তথ্য সংগ্রহ করছেন বিজ্ঞানীরা। বিভিন্ন স্যাটেলাইট মেঘের ওপর থেকে বায়ুমণ্ডলের রাসায়নিক উপাদানগুলোর পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করে। নাইট্রোজেন অক্সাইডের তথ্য নানাভাবে সংগ্রহ করা হয়। দেখা যায়, একক বজ্রপাতের কারণেও বায়ুমণ্ডলে অপ্রত্যাশিতভাবে বেশি পরিমাণে নাইট্রোজেন অক্সাইড তৈরি করতে পারে।বিজ্ঞানী পিকারিং বলেন, ‘এই প্রথমবারের মতো এ ধরনের গবেষণা পরিচালিত হয়েছে। বজ্রঝড় দ্রুত বিকশিত হয়। প্রায়ই তারা এক ঘণ্টার মধ্যে তৈরি হয়। দ্রুত তীব্রতা প্রদর্শন করে হারিয়ে যায়। গবেষণার তথ্য আমাদের বায়ুদূষণের কারণ সম্পর্কে পুরোনো ধারণাকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। এই গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, বজ্রপাতও বায়ুদূষণে একটি বড় ভূমিকা পালন করে।’ বিজ্ঞানী অ্যালেন বলেন, ‘এই গবেষণার মাধ্যমে জিওস্টেশনারি লাইটনিং ম্যাপার স্যাটেলাইট যন্ত্র থেকে পাওয়া তথ্য ব্যবহার করছি। আমরা বজ্রপাতের সংখ্যা গণনা করার মাধ্যমে ঝড়ের সময় প্রতিটি বজ্রপাত কতটা নাইট্রোজেন ডাই–অক্সাইড উৎপন্ন করে এবং পরে কতক্ষণ ধরে থাকে, তার আরও সঠিক ধারণা পেতে পারি। নতুন তথ্য গবেষকদের বিদ্যমান জলবায়ু মডেলকে উন্নত করতে ও বজ্রপাত কীভাবে আমাদের শ্বাসপ্রশ্বাসের বাতাসকে প্রভাবিত করছে, তার সম্পর্কে ধারণা দিতে পারে।’নাইট্রোজেন অক্সাইড ও এর থেকে তৈরি হওয়া ওজোন মানুষের শ্বাসযন্ত্রের বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি করছে। এতে ফসলের ক্ষতি হয়। অম্ল বৃষ্টি তৈরির পর মাটি ও জলজ বাস্তুতন্ত্রের ওপর নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করে। বিজ্ঞানীদের হাতে এমন এক ডেটা সেট আছে, যার মাধ্যমে এখন আরও নিখুঁতভাবে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বায়ুর গুণগত মান ও জলবায়ু পরিবর্তনের পূর্বাভাস জানা যাচ্ছে। বিজ্ঞানী পিকারিং বলেন, বিশ্বব্যাপী বায়ুমণ্ডলে নির্গত মোট নাইট্রোজেন অক্সাইডের ১০ থেকে ১৫ শতাংশ আসে বজ্রপাতের কারণে। মানুষের কারণেও বায়ুদূষণ হয়। অন্যদিকে বজ্রপাত অনেক বেশি উচ্চতায় নাইট্রোজেন অক্সাইড নির্গত করে। এতে ওজোন উৎপাদনে অনুঘটক হিসেবে বজ্রপাত কাজ করছে। সূত্র: ফিজিস ডট অর্গ