
এআই চ্যাটবটকে কখনোই এই ১০ তথ্য দেবেন না
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক (এআই) চ্যাটবট মানুষের প্রযুক্তি ব্যবহারের ধরন দ্রুতগতিতে বদলে দিচ্ছে। প্রশ্নের উত্তর দেওয়া, ই–মেইল খসড়া তৈরি কিংবা সঙ্গী হয়ে কথোপকথনে অংশ নেওয়া—এসব কারণে অনেকের দৈনন্দিন জীবনে জায়গা করে নিয়েছে এই টুল। সহজ ব্যবহার ও মানুষের মতো উত্তর দেওয়ার ক্ষমতার কারণে এগুলোকে অনেকেই নির্ভরযোগ্য ভেবে থাকেন।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই স্বস্তি অনেক সময় ভ্রান্ত ধারণা তৈরি করে। চ্যাটবটের সঙ্গে অতিরিক্ত বা সংবেদনশীল তথ্য শেয়ার করলে গুরুতর ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। এতে ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস, পরিচয় চুরি, এমনকি আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কাও থাকে। কারণ, চ্যাটবটের সঙ্গে কথোপকথন মোটেও গোপন থাকে না। ব্যবহারকারীর দেওয়া তথ্য সংরক্ষিত হতে পারে। কখনো কখনো তা অজান্তেই প্রকাশ হওয়ার ঝুঁকিও থাকে। তাই সতর্ক থাকার বিকল্প নেই। দেখে নেওয়া যাক, চ্যাটবটকে যে ১০ তথ্য কখনোই দেওয়া যাবে না।
পূর্ণনাম, বাসার ঠিকানা, ফোন নম্বর বা ই–মেইল আলাদা আলাদা মনে হলেও একত্র করলে সহজেই পরিচয় শনাক্ত করা যায়। এগুলো ফাঁস হলে প্রতারণা, ফিশিং বা শারীরিকভাবে অনুসরণের মতো ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
ব্যাংক হিসাব নম্বর, ক্রেডিট কার্ডের তথ্য কিংবা জাতীয় পরিচয়পত্র বা সোশ্যাল সিকিউরিটি নম্বর সাইবার অপরাধীদের প্রধান লক্ষ্য। চ্যাটবটে এসব দিলে তা সংরক্ষিত থেকে হ্যাকড হতে পারে। ফলে ব্যবহারকারী প্রতারণা বা আর্থিক ক্ষতির শিকার হতে পারেন।
চ্যাটবটের সঙ্গে কোনো পাসওয়ার্ড শেয়ার করা একেবারেই অনিরাপদ। একবার ফাঁস হলে ই–মেইল, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রোফাইল হ্যাকড হওয়ার আশঙ্কা থাকে। নিরাপত্তাবিশেষজ্ঞরা পাসওয়ার্ড কেবল নির্ভরযোগ্য পাসওয়ার্ড ম্যানেজারে রাখার পরামর্শ দেন।
অনেকে মানসিক চাপ কমাতে চ্যাটবটে ব্যক্তিগত কথা বলেন। কিন্তু এটি বন্ধু বা কাউন্সেলর নয়। ব্যক্তিগত গোপন তথ্য লগ হয়ে থেকে যেতে পারে, যা পরবর্তী সময়ে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে প্রকাশ পেতে পারে।
চ্যাটবট চিকিৎসক নয়। তাই রোগের লক্ষণ, প্রেসক্রিপশন বা স্বাস্থ্যবিমার তথ্য শেয়ার করা ঝুঁকিপূর্ণ। এতে ভুল পরামর্শ পাওয়ার পাশাপাশি ব্যক্তিগত চিকিৎসাসংক্রান্ত তথ্য ফাঁস হয়ে যেতে পারে।
যৌনবিষয়ক কনটেন্ট, অশ্লীল মন্তব্য বা অবৈধ কোনো তথ্য চ্যাটবটে শেয়ার করলে তা রেকর্ড হয়ে থাকতে পারে। এর ফলে শুধু অ্যাকাউন্ট ব্লক হওয়ার আশঙ্কা নয়, ভবিষ্যতেও তথ্য ফাঁস হতে পারে।
কোনো প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক কৌশল, গবেষণা বা গোপন নথি চ্যাটবটে কপি ও পেস্ট করা ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, অনেক চ্যাটবট ব্যবহারকারীর ইনপুট মডেল ট্রেনিংয়ে ব্যবহার করে। এতে প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।
চুক্তি, মামলা বা ব্যক্তিগত বিরোধ নিয়ে চ্যাটবটকে তথ্য দেওয়া উচিত নয়। এটি আইনজীবী নয়, ফলে ভুল বা বিভ্রান্তিকর তথ্য দিতে পারে। আবার এসব তথ্য প্রকাশ হলে ব্যক্তির আইনি অবস্থানও দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।
জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স বা ব্যক্তিগত ছবি কোনোভাবেই চ্যাটবটে আপলোড করা উচিত নয়। মুছে ফেললেও এসবের ডিজিটাল চিহ্ন থেকে যেতে পারে। পরে তা হ্যাক হয়ে পরিচয় চুরি বা প্রতারণার কাজে ব্যবহার হতে পারে।
সবচেয়ে বড় নিয়ম হলো, যে তথ্য আপনি প্রকাশ্যে দেখতে চান না, তা কখনোই চ্যাটবটে দেবেন না। সাধারণ কথোপকথনও অনেক সময় সিস্টেমে থেকে যায়, যা ভবিষ্যতে অপ্রত্যাশিতভাবে প্রকাশ হতে পারে।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া