ওয়াসা ভবন, ১ম তলা, ৯৮ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫, বাংলাদেশ
ফোনঃ 01767404822
Design & Developed by:
এ সম্পর্কিত আরও খবর
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে বসে আছেন তিন বোন। ভেতরে তাঁদের ভাই মহরম আলীর (৩৫) লাশের ময়নাতদন্ত হচ্ছে। একটু পরপরই ভাইয়ের জন্য বিলাপ করতে করতে মুর্ছা যাচ্ছেন বোনেরা। আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় গিয়ে এই দৃশ্য দেখা যায়। তিন বোনের মধ্যে দ্বিতীয় রুনা আক্তারের কিছুতেই কান্না থামছে না। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘মহরম আমরার ছোড (ছোট) ভাই। আমি তারে ভাই মনে করছি না; সব সময় তারে দেখছি আমার সন্তানের মতো। আমার সেই ভাইডারে এমন নির্মমভাবে খুন করল পাষাণেরা। তারায় পরিকল্পনা কইরা আমার ভাইডারে খুন করছে। আমি খুনিরার ফাঁসি চাই।’ গতকাল শনিবার রাত আটটার দিকে কুমিল্লা নগরের কাটাবিল এলাকার মসজিদের সামনে মহরম আলীকে কুপিয়ে হত্যা করে এক দল দুর্বৃত্ত। মহরম নগরের মুরাদপুর এলাকার চারু মিয়ার ছেলে। তিনি শ্বশুরবাড়ি কাটাবিল এলাকায় ভাড়া থাকতেন। পুলিশ জানিয়েছে, মহরমের বিরুদ্ধে মাদক, হত্যা, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, চুরিসহ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অন্তত ১৮টি মামলা রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, মাদক কারবার নিয়ে দ্বন্দ্বে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এদিকে ওই ঘটনায় গতকাল রাতে নিহত মহরমের বোন রুনা আক্তার বাদী হয়ে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। মামলায় ৮ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ৮–৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে মহরমের সঙ্গে মোটরসাইকেলে থাকা অপু হোসেনকে (৪০) মামলায় আসামি করা হয়েছে। গতকাল রাতেই পুলিশ তাঁকে হেফাজতে নিয়েছে। এ ছাড়া কাটাবিল এলাকার ইমরান, বাপ্পি, শ্যামল, জাবেদসহ সাতজনকে আসামি করা হয়েছে। ঘটনার পর আসামিরা এলাকা থেকে গা-ঢাকা দিয়েছেন। তাঁরা সবাই মাদক কারবারি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। আজ দুপুর ১২টার দিকে দ্বিতীয় মুরাদপুরের বাসায় গিয়ে দেখা যায় দোচালা একটি টিনের ঘরের ভেতরে দুই সন্তানকে জড়িয়ে ধরে স্বামীর জন্য বিলাপ করছেন নিহত মহরমের স্ত্রী শারমিন আক্তার। শারমিন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘সন্ত্রাসী আর মাদক ব্যবসায়ীরা আমার জামাইরে খুন করছে। আমার তো সব শেষ হইয়া গেল। অহন আমি পোলাপান লইয়া কেমনে থাইক্কাম, কই যামু। তারায় পরিকল্পনা করে ঘরেরতে ডাইক্কা আইন্যা আমার জামাইডারে নৃশংসভাবে খুন করছে। আমি তাঁরার ফাঁসি চাই।’ শারমিন আক্তার আরও বলেন, ‘দেড় মাস হয়েছে আমরা জগন্নাথপুরের ভাড়া বাসায় থাকি। শনিবার সন্ধ্যার পর আমার স্বামী খাবার খাচ্ছিলেন। এ সময় কাটাবিলের অপু আমার স্বামীকে ইমুতে কল দিয়ে বলে, “কি মহরম আমাদেরকে ভুলে গেছো? একটু আসো, তোমাকে নিয়ে এক জায়গায় যাব।” তখন সে (মহরম) বলল, “শারমিন, অপু কাকায় কল দিছে, একটু কাটাবিল থেকে ঘুরে আসি।” রাত ৮টার দিকে স্বামীকে খুন করার খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যাই।’ শারমিন আক্তার বলেন, ‘মহরম কয়েক মাস ধরে আমাকে প্রায়ই বলত, “শারমিন কাটাবিলের ইমরান, বাপ্পি, শ্যামল, জাবেদরা আমারে মাইরা ফালাইব। আমি তারার ভয়ে আতঙ্কে আছি।” এদের সঙ্গে কয়েক মাস আগে আমার স্বামীর ঝামেলা ও কথা-কাটাকাটি হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত মহরমের আশঙ্কাই সত্য হলো। আমার স্বামীকে তারাই কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করছে। মাথার মধ্যে গুলি করছে চারটি। আমার স্বামীর মাথার মগজ পর্যন্ত বের করে ফেলেছে খুনিরা।’ অপু হোসেনকে আসামি করার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মামলার বাদী রুনা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘অপু কাটাবিল এলাকার প্রভাবশালী। তিনি না চাইলে তাঁর সামনে আমার ভাইকে খুন করার মতো সাহস কারও নেই। আমাদের বিশ্বাস তিনিসহ পরিকল্পনা করেই আমার ভাইকে খুন করিয়েছেন। তিনি আমার ভাইকে ঘর থেকে ডেকে এনেছেন। অপুর বাইকে একই সঙ্গে তারা ছিল, কিন্তু খুনিরা অপুকে কিছুই করল না। এটা কীভাবে হতে পারে? এ ছাড়া আমার ভাই তো এখন কাটাবিল থাকে না, খুনিরা কীভাবে জানল ওই সময়, ওই পথ দিয়ে আমার ভাই যাবে?’ হত্যাকাণ্ডের পর গতকাল রাতে অপু হোসেন দাবি করেন, তাঁদের মোরটসাইবেল কাটাবিল মসজিদের সামনে এলে ২০ থেকে ২৫ জনের একটি দল অতর্কিত হামলা করে। এ সময় তাঁকে (অপু) ধরে টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে দেওয়া হয়। চালকের আসনে থাকা অবস্থায় মহরমকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। পরে পাশের একটি দোকানে নিয়ে তাঁকে এলোপাতাড়ি কোপানো হয়। আজ দুপুরে কুমিল্লা কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মহিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে অপুকে আদালতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। অন্য আসামিদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। নিহত মহরমের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ড, চাঁদাবাজি ও মাদক, চুরি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধে ১৮টি মামলা রয়েছে। প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি মাদক কারবারসংক্রান্ত দ্বন্দ্বে এই খুনের ঘটনা ঘটেছে। তদন্ত চলছে, আশা করছি হত্যার নেপথ্যের কারণ দ্রুতই বেরিয়ে আসবে। মহরমকে গুলি করার বিষয়ে তিনি বলেন, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে সেটি নিশ্চিত হওয়া যাবে।