ওয়াসা ভবন, ১ম তলা, ৯৮ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫, বাংলাদেশ
ফোনঃ 01767000000
Design & Developed by:
এ সম্পর্কিত আরও খবর g
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একহাত দেখে নিতে আমেরিকার শত্রুদেশ চিন, রাশিয়ার সঙ্গে এবার হাতে হাত মিলিয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। চীনের তিয়ানজিনে সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের শীর্ষ সম্মেলনে দেখা গেল বিরল দৃশ্য—একসঙ্গে দাঁড়িয়ে খোশালাপে মেতেছেন শি জিনপিং, ভ্লাদিমির পুতিন আর নরেন্দ্র মোদি। তাতে যেন বিশ্ব সাক্ষী হলো ভুরাজনীতির মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া অনন্য এক মুহূর্তের। আর এই দৃশ্যে কারযত ঘুম হারাম হয়ে গেছে ট্রাম্পের। রোববার চীনের তিয়ানজিনে মুখোমুখি বসে কথা বলেছেন সিজিংপিং ও মোদি। তাদের দুজনের কন্ঠেই ছিল বিভেদ ভুলে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার বড় বার্তা। দুই নেতার এমন বার্তায় আমেরিকা যে ভুগতে যাচ্ছে তা যেন বলাই বাহুল্য। কিন্তু কিভাবে এক হলেন মোদি-পুতিন আর শি জিনপিং? মূলত ট্রাম্পের শুল্কচাপই তাদের সুযোগ করে দিয়েছে। ২০০১ সাল থেকে আমেরিকা ভারতকে ব্যবহার করে এসেছে চীনের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে। কিন্তু ট্রাম্পের একের পর এক কূটনৈতিক ভুলে সেই পরিকল্পনা আজ ভেস্তে যেতে বসেছে। ভারতের রপ্তানির উপর ২৫% শুল্ক চাপানো, রাশিয়ার তেল কেনায় দ্বিগুণ শাস্তি আর পাকিস্তানের সেনাপ্রধানকে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ দিয়ে মোদিকে অপমান—সব মিলিয়ে দিল্লিকে দূরে ঠেলে দিয়েছেন ট্রাম্প নিজেই। বিশ্লেষকদের মতে, এটাই সেই সুযোগ যা কাজে লাগাচ্ছে বেইজিং ও মস্কো। বন্ধুত্বের খাতিরে নয়, বরং ঠাণ্ডা মাথার হিসাব-নিকাশে তারা টেনে নিচ্ছে নয়া দিল্লিকে। ইন্দো–প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ঠেকাতে ভারত ছিল ওয়াশিংটনের প্রধান হাতিয়ার। কিন্তু যদি চীন-ভারত দ্বন্দ্ব প্রশমিত হয়, তবে আমেরিকার কৌশল কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়বে। এর সরাসরি প্রভাব পড়বে QUAD জোটের ওপর, যেখানে ভারত ছিল জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান অংশীদার। চীন–ভারতের ঘনিষ্ঠতা মানে কোয়াডের উদ্দেশ্য ভেস্তে যাওয়া, আর এতে দুর্বল হয়ে পড়বে চীন-বিরোধী অবস্থান। এমন পরিস্থিতিতে এ বছরের শেষ দিকে ভারতের সফর বাতিল করেছেন ট্রাম্প। ভারতকে বিকল্প সরবরাহ শৃঙ্খল হিসেবে দেখত যুক্তরাষ্ট্র, যাতে চীনের উপর নির্ভরশীলতা কমানো যায়। কিন্তু দিল্লি যদি বেইজিংয়ের সঙ্গে গভীর অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলে, তবে আমেরিকার প্রভাব স্পষ্টতই কমবে। একইসঙ্গে বহুমেরু বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারে এই ত্রয়ী—চীন, ভারত ও রাশিয়া—যা সরাসরি চ্যালেঞ্জ হবে আমেরিকার বৈশ্বিক নেতৃত্বের জন্য। তবে প্রশ্ন উঠেছে—ভার-চিন-রাশিয়ার এই ত্রয়ী জোট কি স্থায়ী হবে? নাকি তা কেবলই বর্তমান স্বার্থে গড়া এক অস্থায়ী সম্পর্ক? কারণ তাদের সাথে জোট গড়লেও দিল্লি এখনো যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজারের উপর নির্ভরশীল। আর প্রতিরক্ষা সহযোগিতাও কম নিচ্ছে না তারা। ফলে সম্পর্ক পুরোপুরি ছিন্ন হওয়ার সম্ভাবনা কম। অনেকেই মনে করছেন, চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা দেখিয়ে আসলে ট্রাম্পের কাছে নিজের দর কষাকষির শক্তি বাড়াচ্ছেন মোদি। ট্রাম্প প্রশাসনের একক সিদ্ধান্ত হয়তো আপাতত দিল্লিকে দূরে ঠেলে দিয়েছে। কিন্তু ভূরাজনীতির খেলায় প্রতিটি পদক্ষেপই গুরুত্বপূর্ণ। সাংহাই সম্মেলনে শি–পুতিন–মোদির একসাথে হাসিমুখে ছবি নিঃসন্দেহে ওয়াশিংটনের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ। তাহলে কি সত্যিই এশিয়া হাতছাড়া হতে যাচ্ছে আমেরিকার? নাকি মোদি কেবল কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টির জন্যই এই নতুন সমীকরণে হাঁটছেন? এমি/এটিএন বাংলা