ট্রেনে ২৬ মিনিটে কক্সবাজার থেকে রামু গেলেন প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশ

কক্সবাজার রেলস্টেশন থেকে ট্রেনে করে মাত্র ২৬ মিনিটে রামু পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।শনিবার (১১ নভেম্বর) দুপুরে কক্সবাজার-দোহাজারী রেললাইন ও কক্সবাজারের আইকনিক রেলস্টেশন প্রকল্পের উদ্বোধনের পর স্টেশনের টিকিট কাউন্টার থেকে টিকিট কাটেন প্রধানমন্ত্রী। পরে নিয়ম অনুযায়ী পতাকা উড়িয়ে ও হুইসেল বাজানোর মাধ্যমে এ রুটে ট্রেনের যাত্রা শুরু করেন তিনি।

বেলা ১টা ২৮ মিনিটে কক্সবাজার স্টেশন থেকে ট্রেনটি রামুর উদ্দেশ্যে রওনা হয়। বেলা ১টা ৫৪ মিনিটে ট্রেনটি রামু স্টেশনে পৌঁছায়। ২৬ মিনিটের ট্রেন যাত্রায় অন্য বগিতে থাকা যাত্রীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী।

ট্রেনযাত্রায় প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, কৃষক, শ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।এর আগে, বেলা ১১টায় বিমানের বিশেষ ফ্লাইটে কক্সবাজারে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। এরপর কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশনে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি। এ সময় রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান।

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের কাছে ঝিলংজা ইউনিয়নের চান্দের পাড়ায় ঝিনুক আকৃতির দৃষ্টিনন্দন ছয়তলাবিশিষ্ট আইকনিক রেলস্টেশন নির্মিত হয়েছে। ২৯ একর জমির ওপর গড়ে ওঠা এই আইকনিক রেলস্টেশন ভবনটি ১ লাখ ৮৭ হাজার ৩৭ বর্গফুটের। রেলস্টেশনটিতে থাকছে তারকা মানের হোটেল, শপিংমল, রেস্তোরাঁ, শিশুযত্ন কেন্দ্র, লাগেজ রাখার লকারসহ অত্যাধুনিক সুবিধা।

দৈনিক ৪৬ হাজার মানুষের ধারণক্ষমতার শীতাতপনিয়ন্ত্রিত আইকনিক রেলস্টেশনে আরও আছে ডাকঘর, কনভেনশন সেন্টার, তথ্যকেন্দ্র, এটিএম বুথ ও প্রার্থনার স্থান।

মূল ভবনের নিচতলার রাখা হয়েছে টিকিট কাউন্টার, অভ্যর্থনা কক্ষ, লকার, তথ্যকেন্দ্র, মসজিদ, শিশুদের বিনোদনের জায়গা, প্যাসেঞ্জার লাউঞ্জ ও পদচারী সেতুতে যাতায়াতের পথ। দ্বিতীয় তলায় শপিংমল, শিশুযত্ন কেন্দ্র, রেস্তোরাঁ ইত্যাদি। তৃতীয় তলায় ৩৯ কক্ষবিশিষ্ট তারকা মানের হোটেল, চতুর্থ তলায় রেস্তোরাঁ, শিশুযত্ন কেন্দ্র, কনফারেন্স হল ও কর্মকর্তাদের কার্যালয়।

১০১ কিলোমিটারের দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হচ্ছে আইকনিক এই রেলস্টেশন। জানুয়ারি থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে বহু প্রতীক্ষার যাত্রীবাহী ট্রেন চলবে। দৈনিক একটি ট্রেন ঢাকা থেকে রাত সাড়ে ১০টায় যাত্রা করে ঢাকা বিমানবন্দর এবং চট্টগ্রাম স্টেশনে বিরতি দিয়ে সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে কক্সবাজার পৌঁছাবে। কক্সবাজার থেকে দুপুর ১টায় যাত্রা করে রাত ৯টা ১০ মিনিটে ফিরবে ঢাকায়। ফিরতি পথেও চট্টগ্রাম এবং ঢাকার বিমানবন্দরে যাত্রা বিরতি করবে। মঙ্গলবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকবে ট্রেনটির।

এ ছাড়া শুরুর দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে যাতায়াত করবে দুটি ট্রেন। চট্টগ্রাম থেকে একটি ট্রেন ছাড়বে সকাল ৭টায়, এটি কক্সবাজার পৌঁছাবে সকাল ১০টা ২০ মিনিটে। দ্বিতীয় ট্রেনটি বিকেল ৩টা ১০ মিনিটে ছেড়ে কক্সবাজার পৌঁছাবে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়।

অন্যদিকে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামের পথে প্রথম ট্রেনটি ছেড়ে যাবে সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে, যেটি চট্টগ্রামে পৌঁছাবে দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে। দ্বিতীয় ট্রেননি সন্ধ্যা ৭টায় কক্সবাজার থেকে রওনা দিয়ে চট্টগ্রামে পৌঁছাবে রাত ১০টা ৫ মিনিটে। এসব ট্রেন রামু, ডুলহাজারা, চকরিয়া, সাতকানিয়া, দোহাজারী, পটিয়া, জানআলী হাট, ষোলশহর স্টেশনে যাত্রী ওঠানামা করাবে।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২২ সালের ৩০ জুন। পরে এক দফা বাড়িয়ে প্রকল্পের মেয়াদ করা হয় ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। এতে ব্যয় বেড়ে হয় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *