বিশ্বের সবচেয়ে বড় ‘মুরগি’র ভেতরে রাতও কাটাতে পারবেন

বিনোদন

দূর থেকে হঠাৎ দেখলে চোখ কয়েকবার কচলেও নিতে পারেন, ভুল দেখেছেন ভেবে। তবে একটু ভালোভাবে খেয়াল করলেই বুঝবেন কল্পকথার কোনো মুরগি-দানো হাজির হয়নি। এটি মুরগির আকারের বিশাল এক কাঠামো। ফিলিপাইনের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত এই দালানটি আসলে একটি হোটেল। কাজেই চাইলে মুরগির ভেতরে থাকতেও পারবেন।

ফিলিপাইনের নেগ্রোস অক্সিডেন্টাল দ্বীপের পাহাড়ি এলাকায় পাবেন হোটেলটিকে। ক্যাম্পুয়েস্টোহান হাইল্যান্ড রিসোর্টে অবস্থিত এই ভবনটি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে জায়গা করে নিয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুরগি আকৃতির ভবন হিসেবে।

এই ছয় তলা ভবনটির উচ্চতা প্রায় ৩৫ মিটার (১১৪ ফুটেরও বেশি)। ভেতরে আছে ১৫টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ। তবে মজার বিষয় হলো, এর কোনো কক্ষেই জানালা নেই। মুরগির পালকের নকশা নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকেই জানালা শূন্য রাখা হয়েছে হোটেলটিকে।

হোটেলটির নির্মাতা রিকার্ডো কানো গুয়াপো তান, যিনি নেগ্রোস অক্সিডেন্টালের একজন সাবেক রাজনীতিবিদ। বয়স সত্তরের কোঠায়, কিন্তু মন এখনো শিশুর মতো। তিনি বলেন, ‘আমার স্বপ্ন ছিল এমন কিছু তৈরি করা যা মানুষকে অবাক করবে এবং আমার জীবনের স্মৃতি হয়ে থাকবে।’

তান এই ভবনটি উৎসর্গ করেছেন ফিলিপাইনের গেম ফাউল বা মোরগ লড়াইয়ের শিল্পকে, যা নেগ্রোস অঞ্চলে একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক খাত। এখানে মুরগি পালন এবং স্থানীয়ভাবে সবং নামে পরিচিত মোরগ লড়াই বহুদিনের ঐতিহ্য। যদিও এটি বিতর্কিত খেলা, তবুও এটি লক্ষাধিক মানুষের জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম। এই এলাকায় গেম ফাইল প্রজনন খামার আছে দুই হাজারের মতো।

ফিলিপাইনের বিভিন্ন মোরগ লড়াইয়ের মাঠে লাখ লাখ পেসো অর্জিত হয়, যেখানে উত্তেজিত দর্শকেরা লড়াইরত মোরগগুলিকে চিৎকার করে উৎসাহিত করে যতক্ষণ না একটি মারা যায়। যদিও পশু অধিকার সংগঠনগুলির প্রতিবাদ রয়েছে।

‘মোরগ লড়াই আমাদের প্রদেশের জন্য বিশাল অর্থনৈতিক গুরুত্ব বহন করে। আমি চাই ফিলিপাইনের এই মুরগি আকৃতির ভবনটি আমাদের গর্বের প্রতীক হয়ে উঠুক।’ বলেন তান।

ছোটবেলার কথা স্মরণ করে তান বলেন, বড়দিনের সময় সকালে মোরগের ডাক পরিবারের জন্য ‘মিসা দে গ্যালো’ বা ‘রোস্টার’স মাস’ নামে পরিচিত ভোরের প্রার্থনায় যোগ দেওয়ার কথা মনে করিয়ে দিত।

রিসোর্টের জায়গাটি ছিল একসময় একটি শান্ত পাহাড়ি এলাকা। তানের স্ত্রী অনিতা, কয়েক দশক আগে কিনেছিলেন। কিন্তু ২০১০ সালে পাঁচ হেক্টর জমি উন্নয়নের পর ক্যাম্পুয়েস্টোহান রিসোর্ট তৈরি করা হয়। যেখানে রয়েছে দুটি বিশাল ওয়েভ পুল, একটি রেস্তোরাঁ, একটি ক্যাফে এবং শত শত ডাইনোসর ও কার্টুন চরিত্রের মূর্তি। পুরো পরিবার নিয়ে আনন্দ করতে চাইলে এটি আদর্শ জায়গা।

এখন নিশ্চয় জানতে চাইবেন এই মুরগি-হোটেলে থাকতে কেমন খরচ গুনতে হবে? ভাড়া খুব বেশি নয়। চারজনের একটি কক্ষের ভাড়া প্রায় ৮০ ডলার বা সাড়ে নয় হাজার টাকা। আর যদি সাতজনের একটি দল নিয়ে আসেন, তবে ভাড়া হবে ১২০ ডলার বা ১৪ হাজার টাকার বেশি।

এই রিসোর্টে যেতে হলে প্রথমে ম্যানিলা বা সেবু থেকে একটি অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে বাচোলড-সিলায় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসতে হবে। সেখান থেকে ১৭ মাইল পথ গাড়িতে পাড়ি দিয়ে পৌঁছে যাবেন পাহাড়চূড়ার রিসোর্টে।

তবে ওই হোটেলে রাত কাটাতে চাইলে লম্বা লাইনে পড়তে হবে আপনাকে। শীতের ছুটিতে এই হোটেল এখন পুরোপুরি বুকড। ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির শেষ পর্যন্ত এখানে থাকার একটি কামরাও ফাঁকা নেই।

এবার ফিলিপাইনে ঘুরতে গেলে ক্যাম্পুয়েস্টোহান রিসোর্টে একবার ঢুঁ মারতে ভুলবেন না। আর আগে থেকে বুক করে গেলে এখানে থাকার সুযোগও মিলতে পারে। বিশাল এক মুরগির ভেতরে রাত কাটানোর অভিজ্ঞতা যে মোটেই সাধারণ কিছু হবে না বুঝতেই পারছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *