ইসিতে চলছে মনোনয়নপ্রার্থীদের আপিল শুনানি

বাংলাদেশ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপ্রার্থীদের আপিল আবেদনের শুরু হয়েছে। আজ রোববার (১০ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে এসব আপিল আবেদনের ওপর শুনানি শুরু করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন কমিশন।

প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র নিয়ে রিটার্নি কর্মকর্তার সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আপিল করার সময়সীমা শেষ হয়েছে গতকাল শনিবার। মোট পাঁচ দিনে নির্বাচন কমিশনে ৫৫৮টি আপিল জমা পড়েছে, যা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে ১৮টি, অর্থাৎ তিন দশমিক ৩১ শতাংশ বেশি।

এ নির্বাচনে অংশ নিতে সারা দেশের ৭৪৭ স্বতন্ত্রসহ মোট দুই হাজার ৭১৬ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। বাছাই শেষে রিটার্নিং কর্মকর্তারা এক হাজার ৯৮৫টি মনোনয়নপত্র বৈধ এবং ৭৩১টি বাতিল ঘোষণা করেন। মনোনয়নপত্র বাতিলের হার ২৬ দশমিক ৯২ শতাংশ। আর বৈধ মনোনয়নপত্রের হার ৭৩ দশমিক শূন্য আট শতাংশ।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে তিন হাজার ৬৫ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিল। পরে রির্টানিং কর্মকর্তাদের বাছাই শেষে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ ৭৮৬ জনের প্রার্থিতা বাতিল হয়েছিল। প্রার্থিতা ফিরে পেতে মনোনয়নপত্র বাতিলের ও বৈধ প্রার্থীর প্রার্থিতা বিরুদ্ধে আপিল করেন ৫৪৩ জন। সেই হিসাবে একাদশের চেয়ে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে ১৫টি আপিল বেশি পড়েছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হওয়া আপিলের মধ্যে ৩০টিরও বেশি আবেদন হয়েছে বৈধ ঘোষিত প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল চেয়ে। যার মধ্যে গতকাল শনিবারই পড়েছে ১৯টি। আর গত শুক্রবার পড়েছিল আটটি আপিল আবেদন।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে গতকাল ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেন, ‘গত পাঁচদিনে আপিল আবেদন গ্রহণ করে ইসি। এবার মোট ৫৬১টি আপিল আবেদন পড়েছে। এর মধ্যে বৈধ হওয়া প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল চেয়েও আবেদন করা হয়েছে।’

ইসির তথ্যমতে, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থিতা ফিরে পেতে ও বাতিল চেয়ে প্রথম দিন ৪২ জন, দ্বিতীয় দিন ১৪১ জন, তৃতীয় দিন ১৫৫ জন, চতুর্থ দিন ৯৩ জন এবং পঞ্চম দিনে ১৩০ জন আপিল করেছেন।

এদিকে, আপিলের শেষ দিনে নিজের প্রার্থিতা ফেরত এবং প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য পংকজ দেবনাথের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে আপিল করেছেন আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ। দ্বৈত নাগরিকত্বের অভিযোগে রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তে প্রার্থিতা বাতিল হয় আওয়ামী লীগ মনোনীত এই প্রার্থীর।

এ ছাড়া হলফনামায় মামলার তথ্য গোপন করার অভিযোগ তুলে ঝালকাঠি-১ আসনের আলোচিত আওয়ামী লীগ প্রার্থী শাহজাহান ওমরের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে আপিল করেছেন একই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুজ্জামান মনির। প্রতিনিধির মাধ্যমে তিনি আপিলটি  করেন। শাহজাহান ওমরের প্রার্থিতা বাতিলের আগে মনিরুজ্জামান মনির নিজের প্রার্থীতা ফেরত পেতে ইসিতে আপিল করেছেন। এক শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষরের তালিকা সঠিক না হওয়ায় রিটার্নিং কর্মকর্তা মনিরের প্রার্থীতা বাতিল করেছেন।

বরিশাল-৫ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাহিদ ফারুক ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ পাল্টাপাল্টি আপিল করেছেন। আপিলে দুজনেই দুজনের প্রার্থিতা বাতিল চেয়েছেন।

ইসির ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ছিল ৩০ নভেম্বর। ১ ডিসেম্বর থেকে বাছাই শুরু হয়, যা শেষ হয় ৪ ডিসেম্বর। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল ও শুনানি ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত এবং ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে ১৮ ডিসেম্বর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *