আফগানদের গুঁড়িয়ে হাসল বাংলাদেশ

খেলাধুলা

হারলেই বিদায়। জিতলে সুপার ফোরের হাতছানি। এমন সমীকরণের ম্যাচে সুযোগ হাতছাড়া করল না বাংলাদেশ। জোড়া সেঞ্চুরিতে ব্যাট হাতে দ্যুতি ছড়ালেন মিরাজ-শান্ত। বোলিংয়ে জ্বললেন শরিফুল-তাসকিনরাও। দুই বিভাগের দাপটে আফগানিস্তানকে পাত্তাই দিল না বাংলাদেশ। ৮৯ রানের দাপুটে জয়ে এশিয়া কাপের সুপার ফোরের পথে বাংলাদেশ।

এশিয়া কাপের শুরুটা দুঃস্বপ্নের মতো হয় বাংলাদেশের। শ্রীলঙ্কার সামনে স্রেফ উড়ে যায় লাল-সবুজরা। সে হতাশা কাটিয়ে দ্বিতীয় ম্যাচেই জ্বলে উঠল পুরো বাংলাদেশ। তাতে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ল সাকিব আল হাসানের দল। প্রায় নিশ্চিত করা হলো শেষ চারও। সুপার ফোরে যাওয়ার রাস্তা সহজ করতে আফগানদের ২৭৯ রানে থামাতে হতো বাংলাদেশের। সেই লক্ষ্যে সফল বাংলাদেশ। তাসকিন-শরিফুলরা মিলে আফগানিস্তানকে ২৪৫ রানের বেশি করতে দেননি।

৩৩৫ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে যদিও ভিন্ন আশা জাগায় আফগানিস্তান। যে টার্গেট কখনও টপকাতে পারেনি তা আজ করে দেখানোর আভাস দেয়। কিন্তু সেই আভাসে জল ঢেলে দেন শরিফুলরা। শুরুতে রহমানউল্লাহ গুরবাজকে হারানোর পর থিতু হওয়া রহমত শাহের প্রতিরোধ ভাঙেন তাসকিন।

এর পর লড়াই করা ইব্রাহিম জাদরানের প্রতিরোধ ভাঙেন হাসান মাহমুদ। যদিও সেখানে মুশফিকুর রহিমের দুর্দান্ত ক্যাচ বড় ভূমিকা রাখে। তরুণ পেসার হাসানের সিম-আপ ডেলিভারিতে ব্যাট চালান ইব্রাহিম। তা হয়ে যায় এজড। ক্যাচ চলে যায় স্লিপে। ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে ক্যাচ লুফে নেন মুশফিক। ৭৪ বলে ৭৫ রান করে বিদায় নেন ইব্রাহিম।

হাফসেঞ্চুরি করা শাহীদিকে নিজের দ্বিতীয় শিকার বানান শরিফুল। বাংলাদেশি পেসারের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে আউটসাইড-এজড হয়ে ডিপ থার্ডম্যানে ধড়া পড়েছেন আফগান অধিনায়ক। ৬০ বলে ৫১ করে থামে তার প্রতিরোধ। মাঝে নাজিবুল্লাহকে মাঠছাড়া করেন মিরাজ। একের পর এক উইকেট হারিয়ে জয়ের নাগাল পায়নি আফগানরা। শেষ পর্যন্ত ২৪৫ রানে অলআউট হয়ে বাংলাদেশের কাছে হার মেনেই মাঠ ছাড়েন রশিদ খানরা।

এর আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৫ উইকেটে স্কোরবোর্ডে ৩৩৪ রান তোলে বাংলাদেশ। আজ রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) লাহোর গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে ম্যাচটি টস জিতে ব্যাটিং  নেন সাকিব। নাঈম শেখের সঙ্গে ওপেন করেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ওপেনিং নিয়ে আজ আর হতাশ হতে হয়নি বাংলাদেশকে। দুর্দশার বদলে ওপেনিংয়ে মিরাজ ও নাঈম উপহার দেন চমৎকার ইনিংস।

শুরু থেকেই দুজনে খেলেন আগ্রাসী ঢংয়ে। দলীয় ৫ ওভারেই স্কোরবোর্ডে তোলেন ৩৩ রান। দলীয় ৬০ রানে থামে এই জুটি। নাঈমকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন মুজিবুর রহমান। দশম ওভারে মুজিবের গুগলিতে লাইন মিস করে ফেলেন নাঈম। বল গিয়ে আঘাত হানে স্টাম্পে। ৩২ বলে ২৮ রান করে ফেরেন নাঈম।

গত ম্যাচে ফ্লপ হওয়া হৃদয় আজও ব্যর্থ হন। ১১তম ওভারে গুলবদিন নাঈবের বলে প্রথম স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন হৃদয় (০)। তাঁকে ফেরানো ক্যাচটি ছিল দুর্দান্ত। অনেকটা ঝাঁপিয়ে পড়ে ক্যাচটি নিয়েছেন হাশমতউল্লাহ শহীদি।

দলীয় ৬২ রানে দুই উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় বাংলাদেশ। সেখান থেকে দলকে উদ্ধার করে মিরাজ ও শান্তর জুটি। নির্ভার থেকে ৬৫ বলে মিরাজ স্পর্শ করেন হাফসেঞ্চুরি। এরপর শান্তকে নিয়ে ছুটতে থাকেন মিরাজ। দুজনেই তুলে নেন সেঞ্চুরি।

প্রথমে শতকের দেখা পান মিরাজ। এরপর শান্ত। ৪০.৪ ওভারে নাইবের বলে সিঙ্গেল নিয়ে তিন অঙ্কের ঘরে যান মিরাজ। এরপর ৪২.৪তম ওভারে ১০১ বলে সিঙ্গেল নিয়ে সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন শান্ত। শতক ছোঁয়ার পর বেশিদূর গেল না তাদের ইনিংস। ১১২ রানে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন মিরাজ। ১১৯ বলে ৭ বাউন্ডারি ও তিন ছক্কায় সাজান নিজের ইনিংস। অন্যদিকে ১০৫ বলে ১০৪ রানে রান আউটে কাটা পড়েন শান্ত। তিনি ইনিংস সাজান ৯ বাউন্ডারি ও দুটি ছক্কায়।

সেট দুই ব্যাটার ফিরলে বাকিটা টানেন সাকিব-মুশফিক। দুজনের ব্যাটে বাংলাদেশ পায় লড়াইয়ের পুঁজি। সাকিব করেন ১৮ বলে ৩২ রান। আর মুশফিক করেন ১৫ বলে ২৫ রান। ৬ বলে শামিম করেন ১১ রান।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশ : ৫০ ওভারে ৩৩৪/৫ (নাঈম ২৮, মিরাজ ১১২*, তাওহিদ ০, শান্ত ১০৪, মুশফিক ২৫, সাকিব ৩২*, শামিম ১১, আফিফ ৪*; ফারুকি ৬-১-৫৩-০, মুজিব ১০-০-৬২-১, নাইব ৮-০-৫৮-১, করিম ৬-০-৩৯-০,নবি ১০-০-৫০-০, রশিদ ১০-১-৬৬-০)।

আফগানিস্তান : ৪৪.৩ ওভারে ২৪৫/১০ (রহমানউল্লাহ ১, ইব্রাহিম ৭৫, রহমত ৩৩, শাহিদী ৫১, নাজিবুল্লাহ ১৭, নবি ৩, নাইব ১৫, রশিদ ২৪, করিম ১, মুজিব ৪, ফারুকি ১; শরিফুল ৯-১-৩৬-৩, তাসকিন ৮.৩-০-৪৪-৪, সাকিব ৮-০-৪৪-০, মিরাজ ৮-০-৪১-১, হাসান ৯-১-৬১-১, শামীম ১-০-১০-০, আফিফ ১-০-৬-০)।

ফল : ৮৯ রানে জয়ী বাংলাদেশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *