গাজীপুরে লড়াই হবে জায়েদা-আজমতের

গাজীপুরে লড়াই হবে জায়েদা-আজমতের

বাংলাদেশ

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে লড়াইটা হওয়ার কথা ছিল সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আজমত উল্লা খানের মধ্যে। সিটির ভোটাররাও মুখিয়ে ছিলেন সেই দৌরাত্ম্য দেখার জন্য। তবে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে জাহাঙ্গীর আলমের প্রার্থিতা বাতিল হওয়ায় তা আর সম্ভব হচ্ছে না। তবে এলাকাবাসী ও বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা বলছেন, জাহাঙ্গীর আলম না থাকলেও আজমত উল্লা খানের জন্য তেমন কোনো স্বস্তির খবর নেই। কারণ নির্বাচনের এই সিটির একমাত্র নারী প্রার্থী জায়েদা খাতুনের সঙ্গেও তার লড়াইটা হবে হাড্ডাহাড্ডি। জাহাঙ্গীরের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও জনপ্রিয়তা জায়েদা খাতুনকে দেবে বাড়তি সুবিধা।

এদিকে গতকাল মঙ্গলবার গাজীপুর শহরের বঙ্গতাজ অডিটোরিয়ামে প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রতীক বরাদ্দকে কেন্দ্র করে পুরো শহর মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে। কাঙ্ক্ষিত প্রতীক পেয়ে প্রার্থীরা স্লোগান দিতে দিতে দলীয় কার্যালয়ে যান, কেউ কেউ ফেরেন এলাকায়। সকাল পৌনে ১১টার দিকে বঙ্গতাজ অডিটোরিয়ামে আসেন গাজীপুর সিটি নির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। মায়ের হাত ধরে জাহাঙ্গীর আলম রিটার্নিং কর্মকর্তার হাত থেকে প্রতীক বরাদ্দ নেন। টেবিল ঘড়ি প্রতীক পাওয়া জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন সাংবাদিকদের বলেন, আমি সবার কাছে ভোট চাই। উন্নয়নের জন্য ঘড়ি মার্কায় ভোট চাই।

এক প্রশ্নের জবাবে জায়েদা খাতুন বলেন, শহরের সবচেয়ে বড় সমস্যা রাস্তাঘাট ও ড্রেনেজ। আমি জয়লাভ করলে আগে এই সমস্যার সমাধান করব। আমি লড়াই করছি জনগণের জন্য। আমার সঙ্গে সিটি করপোরেশনের জনগণ রয়েছে।

এ সময় জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি গাজীপুর সিটিকে গ্রাম থেকে শহরে রূপান্তর করতে চেয়েছিলাম। সেই কাজে হাতও দিয়েছিলাম। এখন মায়ের পাশে থেকে সেই সব কাজ করে যেতে চাই। আজ দুপুরে স্বামীর কবর জিয়ারতের মধ্য দিয়ে প্রচারে নেমেছেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী জায়েদা খাতুন।

সাবেক এই মেয়র বলেন, মায়ের নির্দেশেই ৮০০ কিলোমিটার রাস্তা করেছিলাম। এখন মা যখন দেখেছেন, কাজগুলো থেমে গেছে; তখন মা আমাকে হুকুম করে বলেছেন, বাবা আমি কাজগুলো করতে চাই। এজন্য মায়ের কথায় এই শহরকে সুন্দর রাখতে মায়ের পাশে দাঁড়িয়েছি।

এর আগে ১০টার দিকে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লা খান প্রতীক বরাদ্দ নেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি আলিম উদ্দিন ও আব্দুল হাদী শামিম।

আজমত উল্লা খান বলেন, এই বঙ্গতাজ অডিটোরিয়াম থেকেই আমার প্রচার শুরু করছি। অবশ্যই আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকব। দেশের প্রচলিত যে আইন আছে, সেই আইন মেনে প্রচার চালাব। সম্মানিত ভোটারদের প্রতি আকুল আহ্বান গাজীপুরকে একটি সমৃদ্ধ সিটি করপোরেশন হিসেবে গড়ে তুলতে এবং নাগরিক সুবিধা ও আধুনিক নগরী গড়ে তুলতে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে যেন সহযোগিতা করেন।

মেয়রে একমাত্র নারী প্রার্থী জায়েদা:

নির্বাচনে ৮ জন মেয়র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও একমাত্র নারী মেয়র প্রার্থী জায়েদা খাতুন। আজীবন রাজনীতি থেকে দূরে থাকলেও এবার নির্বাচনের মাধ্যমে জয়ী হয়ে পুত্রের অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে চান তিনি।

এই নির্বাচনে প্রথম থেকেই নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লা খান ও স্বতন্ত্র হিসেবে জাহাঙ্গীর আলমের নাম শোনা গেলেও মনোনয়ন যাচাইবাছাইয়ে জাহাঙ্গীর আলমের মনোনয়ন বাতিল হয়। এ অবস্থায় আলোচনায় আসেন তার মা জায়েদা খাতুন। তবে জায়েদা খাতুন রাজনীতির লোক নন। একজন গৃহিণী হিসেবে ছেলে ও তার কর্মী সমর্থকদের এতদিন আগলে রেখেছিলেন তিনি। ছেলে নির্বাচনের মাঠে না থাকা ও তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে ভোটের লড়াইয়ে নেমেছেন বলে জানান এই স্বতন্ত্র প্রার্থী।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জায়েদা খাতুনের স্বামী মিজানুর রহমানের গ্রামের বাড়ি গাজীপুরের কালীগঞ্জের বান্দাখোলায়। বিয়ের পর বড় মেয়ে জারমিন আক্তারকে নিয়ে তিনি চলে আসেন বাবার বাড়ি কালীগঞ্জে। সেখানে জমি কিনে বাড়ি করেন। সেই বাড়িতেই জাহাঙ্গীর আলমের জন্ম। স্বামী এবং সন্তানদের নিয়ে জীবন সংগ্রাম করে চলতে হয়েছে জায়েদাকে। জীবনযুদ্ধে জয়ী হয়েই আজকের অবস্থানে পৌঁছেছেন তিনি।

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জায়েদা খাতুন সব সময় এলাকাবাসীর খোঁজখবর রাখেন। জাহাঙ্গীর আলমের ব্যাপক জনপ্রিয়তার পেছনে তার মা জায়েদা খাতুনের ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করেন অনেকে। জায়েদা খাতুনের প্রতিবেশী এক আকলিমা নামে এক নারী বলেন, আমরা ছোটকাল থেকেই তাকে দেখছি। তিনি নিজ গ্রামে সবার কাছে জনপ্রিয়। তিনি সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত না থাকলেও এলাকাবাসীর বিপদ-আপদে পাশে থেকেছেন।

স্থানীয় ভোটাররা বলেন, এলাকায় জাহাঙ্গীর আলমের জনপ্রিয়তা রয়েছে। নির্বাচনে তার প্রার্থিতা বাতিল হলেও নির্বাচনের মাঠে তার মা জায়েদা খাতুন রয়েছেন। জাহাঙ্গীর আলম শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে না থাকলে মাঠে আরো শক্তভাবে নামবেন জায়েদা। এক্ষেত্রে ছেলের ওপর অন্যায় করা হয়েছে, ষড়যন্ত্র করা হয়েছে এমন দাবি করে আবেগতাড়িত বক্তব্য রেখেছেন তিনি। এ অবস্থায় অনেক ভোটারের সহানুভূতি পাবেন বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে ভোটের মাঠে জাহাঙ্গীর আলমের ছায়া হয়ে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে পারেন জায়েদা। জায়েদা খাতুনের নির্বাচিত হওয়া আর জাহাঙ্গীর আলমের নির্বাচিত হওয়া একই কথা।

তবে ভিন্ন বক্তব্যও আছে। আওয়ামী লীগের সাবেক বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপকমিটির সদস্য আব্দুল্লাহ আল মামুন মণ্ডল বলেন, জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন একজন গৃহিণী। তিনি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নতুন মুখ। তিনি নগরবাসীকে রক্ষার জন্য নির্বাচন করবেন বলছেন। কিন্তু নগরবাসী এমন কোনো বিপদে পড়েননি যে, তাদের রক্ষা করতে হবে। আর সিটি করপোরেশন চালানো সহজ কোনো কাজ নয়।

আওয়ামী লীগ প্রার্থী আজমত উল্লা খান বলেন, সব প্রার্থীই আমার প্রতিদ্বন্দ্বী। আমিও তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী। তাদের কাউকে আমি ছোট করে দেখি না।

লটারিতে জিতে টেবিল ঘড়ি জায়েদার:

টেবিল ঘড়ি প্রতীক চেয়েছিলেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী সরকার শাহনুর ইসলাম ও জায়েদা খাতুন। সকালে যখন শানুর প্রতীক চেয়েছিলেন, সে সময় জাহাঙ্গীর আলমের মা উপস্থিত ছিলেন না। তার অনুপস্থিতিতেই নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম লটারির আয়োজন করেন। লটারিতে জাহাঙ্গীরের মা জায়েদা খাতুন পান টেবিল ঘড়ি প্রতীক। পরে স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহনুর হাতি প্রতীক চেয়ে নেন।

রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম বলেন, একই প্রতীক একাধিক ব্যক্তি চাইলে তাদের লটারির মাধ্যমে প্রতিক বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে।

৮ মেয়র প্রার্থীর প্রতীক:

গণফ্রন্টের আতিকুল ইসলাম পেয়েছেন মাছ প্রতীক, নৌকা প্রতীক আজমত উল্লা খানে, লাঙ্গল প্রতীক পেয়েছেন এম এম নিয়াজ উদ্দিন, হাতপাখা প্রতীক পেয়েছেন গাজী আতাউর রহমান, টেবিল ঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন, হাতি প্রতীকে সরকার শাহানুর ইসলাম রনি, গোলাপ ফুল প্রতীকে রাজু আহম্মেদ ও ঘোড়া প্রতীক পেয়েছেন হারুন অর রশিদ।

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম জানান, প্রার্থীরা আজ (গতকাল) থেকে আচরণবিধি মেনে প্রচার শুরু করতে পারবেন।

ঘোষিত তপশিল অনুযায়ী, আগামী ২৫ মে এই সিটি নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সিটির মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। ৫৭টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ২৩৯ জন, সংরক্ষিত ১৯টি নারী কাউন্সিলর পদে ৭৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *