মাহমুদুল্লাহর বিশ্বকাপ ভাগ্যে কী আছে!

মাহমুদুল্লাহর বিশ্বকাপ ভাগ্যে কী আছে!

খেলাধুলা
চন্দ্রিকা হাতুরুসিংহে দ্বিতীয় দফায় কোচ হয়ে বাংলাদেশে পা-রাখার পর অনেকেই মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ক্যারিয়ার নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন। এমনিতে ব্যাট হাতে ফর্মে ছিলেন না এক সময়ের সাইলেন্স কিলার খ্যাত অভিজ্ঞ এ ক্রিকেটার। তার ওপর সিনিয়রদের নিয়ে হাতুরুর এলার্জি এবং তরুণদের প্রতি তার সহানুভূতির নীতি।

ঘরের মাঠে আয়ারল্যান্ড সিরিজের দল থেকে বাদ পড়েন ৩৭ বছর বয়সী মাহমুদুল্লাহ। অথচ এই সিরিজ দিয়েই শুরু হয় টাইগারদের বিশ্বকাপের দল গোছানোর প্রক্রিয়া। আগামী অক্টোবর-নভেম্বরে ভারতের অনুষ্ঠিত হবে ওয়ানডে শ্রেষ্ঠত্বের এ আসর।

প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু এবং কোচ হাতুরু দুজনেই অবশ্য বলেছিলেন, বাদ পড়েননি মাহমুদুল্লাহ, তাকে বিশ্রাম দেয়া হয়েছে। কিন্তু ইংল্যান্ডের মাঠে আয়ারল্যান্ড সিরিজেও নেই তিনি। বোর্ডের (বিসিবি) প্রভাবশালী পরিচালক খালেদ মাহমুদ সুজনের যে বক্তব্য, তাতে মাহমুদুল্লাহ বিশ্বকাপে যাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। কিন্তু প্রধান নির্বাচক জানিয়েছেন, অভিজ্ঞ এ ব্যাটসম্যান এখনও তাদের ভাবনায় আছেন! সর্বোপরি সাবেক অধিনায়ক ও টাইগার ক্রিকেটের বহু যুদ্ধের পোড় খাওয়া এ সৈনিকের দলে ফেরা ও  বিশ্বকাপে খেলা নিয়ে তৈরি হয়েছে বড় প্রশ্ন।
‘ওর অনেক ম্যাচ আছে যেগুলো একাই জিতিয়েছে। আসলে মূল কথা হচ্ছে বর্তমান পরিস্থিতি। রিয়াদকে দলে কতটুকু দরকার বা ওর বদলে যারা খেলছে পারফর্ম করছে কি না। যদি পারফর্ম করে, দল যদি সন্তুষ্ট থাকে তাহলে রিয়াদের সুযোগ কম থাকবেই।’Ñ বলছিলেন সুজন। তিনি আরও যোগ করেন, ‘তারপরও ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে (ডিপিএল) সুপার লিগের ম্যাচগুলোতে রিয়াদ নিজেকে কিভাবে মেলে ধরে সেটাও দেখার বিষয়। কিন্তু রিয়াদ যখনই খেলেছে বাংলাদেশের জন্য, খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা জায়গায়।
যেখানে আপনি হিরোও হতে পারেন, জিরোও হতে পারেন। রিয়াদ হয়তো দুটির স্বাদই পেয়েছে।’ মাহমুদুল্লাহ বয়স এখন ৩৭Ñএর ওপরে। টেস্ট থেকে অবসর নিয়েছেন। ওয়ানডে ও টি২০ থেকে বাদ পড়েছেন। সাস্প্রতিক সময়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে সবশেষ পারফর্মেন্স আহামরি নয়।  গেল ১২ মাসে খেলেছেন ১২টি ওয়ানডে। সেখানে ১১ ইনিংসে করেন ৪৮.৫০ গড়ে ৩৮৮ রান। হাঁকিয়েছেন ২ ফিফটি সেখানে আছে ৮০ রানের অপরাজিত ইনিংসটিই  সর্বোচ্চ সংগ্রহ। তবে বয়স, পারফর্মেন্স সব মিলিয়ে চলতি বছর অক্টোবর-নভেম্বরে ভারতে ওয়ানডে বিশ্বকাপে তার সুযোগ হবে কিনা তা নিয়ে আছে যথেষ্ট সন্দেহ। তাইতো কিছুদিন আগেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রভাবশালী পরিচালক খালেদ মাহমুদ সুজন তার বিশ্বকাপ ভাগ্য নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন! যদিও হাথুরুসিংহে এবং নান্নু জানিয়েছেন তাদের পরিকল্পনায় আছেন মাহমুদুল্লাহ।
শুধু তাই নয় বিশ্বকাপের জন্য তাদের তৈরি ২৪ জন ক্রিকেটারের পুলেও আছেন মাহমুদুল্লাহ। এ প্রসঙ্গে নান্নু বলেন, ‘শুধু মাহমুদুল্লাহ না, ২৪ জন খেলোয়াড় নিয়ে আমরা বিশ^কাপের পুল করেছি। সুতরাং এখানো নির্দিষ্ট কোনো নাম না, এখানে যারা আছে সবাইকে বিশ্বকাপের জন্য মনিটরিং করা হচ্ছে।’ শুধু তাই নয় এই তালিকায় আছেন জাতীয় দল থেকে বাদ পড়া দুই তরুণ আফিফ হোসেন ধ্রুব ও নাঈম শেখ।  হাথুরুসিংহে জাতীয় দলের প্রধান কোচের পদে ফেরার পর থেকেই গুঞ্জন ছিল মাহমুদুল্লাহর বাদ পড়ার বিষয়টি। যদিও ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর থেকে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি রান করা ব্যাটারদের তালিকায় তিনে রয়েছেন তিনি।

এই সময়ে ৩৬ ম্যাচে ৯৭৪ রান করেছেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটার। প্রায় ৪০ গড়ে রান তোলা মাহমুদুল্লাহর স্ট্রাইক রেট ৭৪.০১। রানে থাকলেও স্ট্রাইক রেট প্রত্যাশা মেটাতে পারছে না এই ফিনিশার। মাহমুদুল্লাহর ব্যাটিং এর সঙ্গে ফিল্ডিংয়ে যে বয়সের ছাপ পড়েছে সেটার প্রমাণ মিলছে ম্যাচগুলোতে। এক সময় বাংলাদেশের লোয়ার অর্ডারের ভরসা ছিলেন। দলের বিপর্যয়ে হাল ধরতেন আবার কখনো ম্যাচ বের করে দলকে আনন্দে ভাসাতেন। কিন্তু তার সেøা ব্যাটিং দলকে ফিনিশিংয়ে বিপদেই ফেলছে। নির্বাচকদের পুলে থাকলেও শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপের মূল স্কোয়াডে তাকে জায়গা পেতে হলে জয় করতে হবে বয়সের ভার ও দেখাতে হবে লোয়ার অর্ডারে তার সক্ষমতা।

‘ব্যাক টু ব্যাক অনেকগুলো সিরিজ আছে। বিশ্বকাপের আগে তো আমাদের এশিয়া কাপ আছে, আফগানিস্তান সিরিজ আছে, এখন আয়ারল্যান্ড সিরিজ আছে। প্রত্যেকটা সিরিজ নিয়েই আমরা চিন্তা-ভাবনা করছি। এত বেশি খেলা, খেলোয়াড়দের ফিটনেসও একটা চিন্তার বিষয়। সেভাবেই আমরা এগোচ্ছি। আশা করছি সিরিজ বাই সিরিজ রেডি করে এশিয়া কাপের মাঝে বিশ্বকাপের জন্য দল প্রস্তুত করে ফেলতে পারব।’ বলেন নান্নু।
অন্যদিকে ওয়ানডেতে মাহমদুল্লাহর পর ফিনিশারের ভূমিকায় দেখা হচ্ছিল প্রতিভাবান ব্যাটার আফিফ হোসেন ধ্রুবকে। কিন্তু তিনি জাতীয় দলে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন। সবশেষ আয়ারল্যান্ডেরে বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে তাকে দলেই রাখা হয়নি। তবে তাকেও আসন্ন ওয়ানডে বিশ্বকাপের জন্য নির্বাচকরা ২৪ জনের পুলে বিবেচনায় রেখেছেন। আরেক তরুণ ওপেনার নাঈম শেখকেও রাখা হয়েছে এই তালিকায়। ‘(আফিফ) অবশ্যই, পুলে থাকা যে ২৪ ক্রিকেটারকে আমরা রেডি করে রেখেছি এদের সবাইকে মনিটরিং করা হচ্ছে এবং কেউ চোখের আড়াল হচ্ছে না।
যাকে যখন প্রয়োজন মনে করব তখনই তাকে দলে নেওয়া হবে। নাইম শেখ অবশ্যই ভালো করছে। ওতো আমাদের এইচপিতে ছিল এবং ‘এ’ দলের সামনে সিরিজ আছে ওইখানেও দেখব। আমি যেটা বললাম ডিপিএলে অনেকগুলো খেলোয়াড় ভালো পারফর্ম করছে। এদেরকে ভালো করে মনিটরিং করা হচ্ছে এবং আমাদের পুলের মাঝে যে ২৪ জন খেলোয়াড় আছে সেখানে অবশ্যই ও থাকবে।’ বলেন নান্নু। ডিপিএলের এবার ব্যাট হাতে দারুণ ছন্দে আছেন নাইম। আবাহনীর হয়ে খেলা এই ওপেনার ১১ ম্যাচে করেছেন ৭১৯ রান। ৮৯.৮৭ গড়ে রান তোলা নাইমের সাত হাফ সেঞ্চুরির সঙ্গে রয়েছে একটি সেঞ্চুরিও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *