শ্বাসরুদ্ধকর ফাইনালে ইংল্যান্ডকে টাইব্রেকারে ৩-২ গোলে হারিয়ে দীর্ঘ ৫৩ বছর পর ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতে নিয়েছে ইতালি।
রোববার (১১ জুলাই) বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাতে লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচে অপরিবর্তিত প্রথম একাদশ নিয়ে লড়াইয়ে নামে ইতালি। ইংল্যান্ড বুকায়ো সাকার বদলে শুরু থেকে মাঠে নামানোর সিদ্ধান্ত নেয় কিয়েরান ট্রিপিয়ারকে। ইংলিশ কোচ গ্যারেথ সাউথগেটের ট্রিপিয়ারকে নামানোর সিদ্ধান্ত খেলার দ্বিতীয় মিনিটেই প্রমাণিত হয়। তার ক্রসে বল পেয়ে বাঁ পায়ের আচমকা শটে গোল করে বসেন লুক শ। স্বাগতিক দর্শকরা এতে উল্লাসে ফেটে পড়ে। গ্যালারিতে থাকা ডেভিড বেকহামও বেশ উচ্ছ্বাসিত ছিলেন।
নিজের প্রথম আন্তর্জাতিক গোল করেই রেকর্ড গড়ে ফেলেছেন লুক শ। ১ মিনিট ৫৭ সেকেন্ডে করা তার গোলটিই ইউরোর ফাইনাল ম্যাচে করা দ্রুততম গোল। ১৯৬৪ সালে পেরেদা ৬ মিনিটের মাথায় গোল করেছিলেন। চলতি ইউরোর ৬টি ম্যাচে মাঠে নেমে ১টি গোল করা ছাড়াও ৩টি গোলের পাস বাড়িয়েছেন দুরন্ত ফর্মে থাকা শ।
৮ মিনিটের মাথায় ইংল্যান্ডের পোস্টে শট নেন ইনসিনিয়ে। যদিও তার শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।৩৫ মিনিটের মাথায় গোলের সুযোগ নষ্ট করেন ফেদেরিকো চিয়েসা। তার আক্রমণ লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ইনজুরি সময়ের প্রথম মিনিটে চিরো ইম্মোবিলের শট প্রতিপক্ষের এক খেলোয়াড়ের পায়ে লেগে ফিরে আসার পর জর্জিনহোর পাসে বল পেয়ে মার্কো ভেরাত্তির শট প্রতিহত করেন ইংলিশ গোলরক্ষক পিকফোর্ড।
আগের ১৫টি ইউরোর ফাইনালে প্রথমে গোল করা দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ১১ বার। ইংল্যান্ডের দিকেও আপাতত পাল্লা তাই ভারি থাকলেও ইতালি ম্যাচে ফিরে আসতে পারে যেকোনো সময়। ইতালির দিকে পাল্লা অবশ্য আরেকদিক বিচারে ভারি আছে। মাত্র তিনটি দেশ ঘরের মাঠে ইউরো চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ১৯৬৪ সালে স্পেন, ১৯৬৮ সালে ইতালি ও ১৯৮৪ সালে ফ্রান্স নিজেদের দেশে ইউরোর খেতাব জেতে।
৫১ মিনিটের মাথায় ইনসাইনের আক্রমণ লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। খানিক পর ফের আক্রমণ ইতালির; ৫৩ মিনিটের মাথায় ফের আক্রমণে ওঠে আজ্জুরিরা। এবারও ইনসিনিয়ের শট টার্গেটে ছিল না। তিন মিনিট পর ইংল্যান্ডের আক্রমণ ব্যর্থ হয়। হ্যারি মাগুইর আক্রমণ হানেন ইতালির বক্সে। যদিও তার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। পরের মিনিটে ইনসিনিয়ের শট প্রতিহত করেন পিকফোর্ড
আক্রমণ-প্রতিআক্রমণে ভরা ফুটবল ম্যাচে ৬২ মিনিটে ফেদেরিকো চিয়েসার শট ঠেকিয়ে দেন ইংলিশ গোলরক্ষক। ৬৪ মিনিটে জন স্টোনসের হেড প্রতিহত করেন ইতালিয়ান গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি দোনারুম্মা।
ম্যাচের ৬৭ মিনিটে ইতালিকে আর রুখে রাখা যায়নি। কর্নার কিক থেকে সতীর্থের বাড়ানো বল পেয়ে জটলার মধ্যে বাঁ পায়ে বল জালে জড়িয়ে খেলায় সমতা ফেরান মার্কো বেনুচ্চি। ইউরোর ফাইনালে সবচেয়ে বেশি বয়সে গোল করার রেকর্ড গড়েন বেনুচ্চি। তিনি ৩৪ বছর ৭১ দিন বয়সে ইউরোর খেতাবি লড়াইয়ে গোল করেন। ১৯৭৬ সালে তৎকালীন পশ্চিম জার্মানির হয়ে হলজেনবেইন ৩০ বছর বয়সে গোল করেছিলেন।
৭৩ মিনিটে গোলরক্ষককে একা পেয়েও ডমেনিকো বেরার্দি বাঁ পায়ের শট লক্ষ্যে রাখতে ব্যর্থ হন। ফলে নির্ধারিত সময়ের খেলা ১-১ গোলে অমীমাংসিত থাকায় তা অতিরিক্ত সময়ে গড়ায়। এই নিয়ে মোট সাতটি (১৯৬০, ১৯৬৮, ১৯৭৬, ১৯৯৬, ২০০০, ২০১৬ ও ২০২০) ইউরো ফাইনাল অতিরিক্ত সময়ে গড়ানোর নজির গড়ে।
খেলার ৯৭ মিনিটে কালভিন ফিলিপসের শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। দশ মিনিট পর ফেদেরিকো বের্নানদেস্কির ডি বক্সের বাইরে থেকে নেয়া মাপা শট দক্ষতার সঙ্গে সেভ করেন পিকফোর্ড। পরের মিনিটে জ্যাক গ্রিলিশের শট ইতালির ডি বক্সে রক্ষণের কল্যাণে বাঁধাপ্রাপ্ত হয়। ১২০ মিনিট পেরিয়ে যাওয়ার পর ইনজুরি সময়ের প্রথম মিনিটে ব্র্যান ক্রিস্তাত্তের হেড জালে জড়ায়নি। তাতে ম্যাচ টাইব্রেকারে গড়ায়।
প্রথম শটে বেরার্দি গোল করে ইতালিকে এগিয়ে দেন। পরের শটে ইংলিশদের হয়ে লক্ষ্যভেদ করেন হ্যারি কেন। পরের শটে আন্দ্রেয়া বেলোত্তির শট পিকফোর্ড ঠেকিয়ে দেয়ার পর হ্যারি মাগুইর গোল করতে ইংল্যান্ডকে লিড এনে দেন। তৃতীয় শটে বেনুচ্চি গোল করার পরের শটে মার্কাস রাশফোর্ডের কিক বাঁ পাশের বারে লেগে ফিরে আসে। স্কোরলাইন হয়ে যায় ২-২।
বের্নান্দেস্কি চতুর্থ শটে গোলের পর তা করতে ব্যর্থ হন জোডান সাঞ্চো। তার শট সেভ করেন দোনারুম্মা। পঞ্চম শটে জর্জিনহোর কিক পিকফোর্ড প্রতিহত করলে ইংল্যান্ড ম্যাচকে সাডেন ডেথে নেয়ার আশা জাগিয়ে রাখে। কিন্তু বুকায়ো সাকার শট দোনারুম্মা ঠেকিয়ে দেয়ার সাথে সাথে খেলা শেষ হয়ে যায়। টাইব্রেকারে ৩-২ গোলে জিতে আজ্জুরিরা তাদের ফুটবল রাজত্ব আবারো উদ্ধারের বার্তা জানিয়ে গেল।