করোনায় বিপর্যস্ত শিক্ষা খাতে ঘুরে দাঁড়ানোর আশা এখন একেবারেই ক্ষীণ। সরকারের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকার পরও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সহসা খুলে দেয়ার সম্ভাবনা নেই। সার্বিক পরিস্থিতির বিবেচনায় আগামী জুলাই মাসেও স্কুল-কলেজ খোলার আশা নেই। ইতোমধ্যে প্রাথমিকের সমাপনী পরীক্ষা বাতিল করার একটি সিদ্ধান্তের কথাও জানানো হয়েছে। এই শিক্ষার্থীদের তাদের বাড়ির কাজের মূল্যায়নের মাধ্যমেই ওপরের ক্লাসে প্রমোশন দেয়া হবে। তবে বিতর্ক এড়াতে এবার অটোপাস শব্দটি পরিহার করা হচ্ছে।
এদিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, এবারের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও ইবতেদায়ি সমাপনী পরীক্ষাও হচ্ছে না। যদিও তারা বলছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এই পরীক্ষা বাতিলের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর পরিবর্তে শিক্ষার্থীদের ‘বাড়ির কাজ’ দিয়ে মূল্যায়নের মাধ্যমে নতুন শ্রেণীতে তুলে দেয়া হবে। কাউকে অটোপাস দেয়া হবে না। অবশ্য সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সম্মতির পর এই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রকাশ করা হবে। এ সংক্রান্ত সারসংক্ষেপ শিগগিরই প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো: জাকির হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
অন্য দিকে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে যদি এসএসসি ও এইচএসসি এবং সমমানের পরীক্ষা নেয়া না যায় তাহলে সেখানে বিকল্প পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা হবে। এ ক্ষেত্রে দু’টি বিকল্পের কথাও ভাবা হচ্ছে। যদিও এই দু’টি পাবলিক পরীক্ষার জন্য উৎকণ্ঠায় দিন পার করছেন প্রায় ৪৪ লাখ পরীক্ষার্থী।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, সরকারের আগের সিদ্ধান্ত ছিল এসএসসির জন্য ৬০ কর্মদিবস ও এইচএসসির জন্য ৮৪ কর্মদিবসের সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের আলোকেই তাদের ক্লাস নেয়া হবে। এরপর কমপক্ষে ১৫ দিন সময় দিয়ে পরীক্ষা নেয়া হবে। সর্বশেষ গত ১৩ জুন থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কথা ছিল। কিন্তু করোনার ঊর্ধ্বগতির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি ৩০ জুন পর্যন্ত হয়েছে। বর্তমানে করোনার যে ঊর্ধ্বগতি ও আগামী জুলাই মাসে ঈদুল আজহার কারণে ঈদের আগে যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যাবে এমন কোনো নিশ্চয়তা দেয়া যাচ্ছে না। ফলে শিক্ষার্থীদের বসিয়ে ক্লাস নেয়াও যাবে না। এ কারণেই বিকল্প ভাবতে হচ্ছে।
অপর দিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষার্থীদের ইবতেদায়ি সমাপনী পরীক্ষাও না নেয়ার চিন্তা চলছে। ইতোমধ্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, এবারের জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষাও হবে না। একই রকম সিদ্ধান্ত হতে পারে জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষার ব্যাপারে। করোনা পরিস্থিতির কারণে উল্লিখিত চারটি পরীক্ষা গত বছরও নেয়া যায়নি। তবে গত বছর এ ব্যাপারে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল আগস্টের প্রথম সপ্তাহে। এবার আগেভাগেই সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম জানিয়েছেন, প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার্থীদের বাড়ির কাজের মাধ্যমে মূল্যায়ন কাজ চলবে। তাদের ক্লাসে আনা সম্ভব না হলেও বার্ষিক পাঠপরিকল্পনার আলোকে পড়ানো হবে। এই প্রক্রিয়ায় তাদেরকে মূল্যায়নের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। কেউ অটোপাস পাবে না।
ইবতেদায়ি পরীক্ষার ব্যাপারে জানতে চাইলে কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব আমিনুল ইসলাম খান বলেন, যেহেতু প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এই পরীক্ষাটি নিয়ে থাকে, তাই তারা এ ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত নেবে তাতেই সম্মতি দেবো। দুটো পরীক্ষার ক্ষেত্রে একই সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের সাথে আলোচনা শেষে জানানো যাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
পরীক্ষা সংশ্লিষ্টরা জানান, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার জন্য চলতি বছরের পুরোটাই অপেক্ষা করতে চায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু ডিসেম্বরে পরীক্ষা নিতে হলে শিক্ষার্থীদের কিছুদিন ক্লাস করানোর জন্য কয়েক মাস আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে হবে। সেটা সম্ভব না হলে গুরুত্বপূর্ণ চার-পাঁচটি বিষয়ে পরীক্ষা গ্রহণের বিকল্প ভাবনা আছে। সেখানে পাবলিক পরীক্ষার পরিবর্তে স্বল্প পরিসরে মেধা যাচাইয়ের পরীক্ষার আয়োজন হতে পারে।
তবে চলতি বছরেও কোনোভাবেই পরীক্ষা নেয়া সম্ভব না হলে অ্যাসাইনমেন্টভিত্তিক মূল্যায়ন হতে পারে। ইতোমধ্যে ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট দেয়া শুরু হয়েছে। একই ভাবে চলতি বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদেরও অ্যাসাইনমেন্ট দেয়া হবে। তবে এই দুই পাবলিক পরীক্ষায় অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হলে এর সাথে আগের গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার নম্বর যুক্ত করা হতে পারে। সেক্ষেত্রে এসএসসির ক্ষেত্রে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) এবং এইচএসসির ক্ষেত্রে জেএসসি ও এসএসসির নম্বর এই মূল্যায়নে থাকতে পারে।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল আহমেদ জানান, আমরা ডিসেম্বর পর্যন্ত দেখতে চাই। এ সময়ের মধ্যে পরীক্ষা নেয়া সম্ভব না হলে আমাদের বিকল্প ভাবতে হবে। সব ধরনের প্রস্তুতিই রয়েছে।