পদ্মায় পানি বাড়ছে ভাঙনের কবলে মানিকগঞ্জ

পদ্মায় পানি বাড়ছে ভাঙনের কবলে মানিকগঞ্জ

বাংলাদেশ

পদ্মা নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে শুরু হয়েছে নদী ভাঙন। গত কয়েকদিনে উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের কুশিয়ারচর গ্রামের অন্তত আটটি পরিবারের বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের ভয়ে ঘরবাড়ি অন্যত্র স্থানান্তর করছেন আরও অনেকে। বসতভিটা হারিয়ে এসব পরিবারগুলো অন্যের জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন।

স্থানীয়রা জানান, পদ্মা নদীভাঙনে কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের মোট ১৩টি মৌজার মধ্যে ১২টি মৌজাই নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। প্রতিবছরই ভাঙনের কবলে পড়ে বিলীন হচ্ছে কৃষিজমি ও বসতবাড়ি। গত ২০ বছর ভাঙনের কবলে পড়ে বসতভিটা ও ফসলি জমি হারিয়েছে প্রায় ৫ শতাধিক পরিবার। প্রতিবছর আরও পরে ভাঙন শুরু হলেও ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’-এর কারণে নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় আকস্মিক এ ভাঙনে বিপদে পড়েছেন গ্রামের লোকজন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকটি পরিবার তাদের ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন, কেটে নিচ্ছেন জমির গাছপালা। এদের কেউ কেউ একাধিকবার নদীভাঙনের শিকার হয়েছেন। তাদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, অন্য কোথাও জায়গাজমি না থাকায় আপাতত অন্যের জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন তারা। নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলে ভাঙন আরও বাড়বে। তাই নদীভাঙন রোধের স্থায়ী একটা ব্যবস্থা চান তারা।

কুশিয়ারচর গ্রামের নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরাণ শেখর বলেন, ‘আগেও নদীতে বাড়ি ভাঙ্গছে। আবারো গাঙে পানি বাড়লে বাড়ি ভাইঙ্গা গেলো। এহোন কনে থাকুম। ২ দিন ওইলো অন্যের জায়গায় ঘর তুলছি। এ ঘরও ভাইঙ্গা যাইবার পারে। সরকার যেন ভাঙ্গন বন্ধ করার জন্য বাঁধ দেয়।’

গণি মিয়া বলেন, ‘পদ্মা ভাঙনের কবল থেকে বাঁচতে চাই। অন্যের জায়গায় ঘর উঠাইছি। পদ্মায় পানি বাড়তেছে। নিজেরা খামু কি! জায়গা কিনুম কেমনে! আমাগো সরকার একটা ব্যবস্থা করে দিক।’

একই এলাকার ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত আরোজ প্রামাণিকের স্ত্রী বলেন, ‘পূর্বে বাগমারা এলাকায় বাড়ি ছিলো। পদ্মার ভাঙ্গনের পর কুশিয়ারচরে বাড়ি করি। সে বাড়িও ভেঙ্গে যাচ্ছে। এখন আমরা কোথায় থাকবো। তিনটি ঘর ভেঙ্গে অন্যের জায়গায় তুলেছি, সেখানে কতদিন থাকবো জানিনা।’

ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইউনুছ উদ্দিন গাজী বলেন, ‘কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের ১৩টি মৌজার ১২টিই নদীগর্ভে। অবশিষ্ট যেটুকু আছে তাও নদীভাঙনের কারণে হুমকির মুখে। ভাঙনরোধে এখন জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণসহ স্থায়ী একটা ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।’

হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ভাঙনের বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানিয়েছি। তারা ব্যবস্থা নিবেন বলে জানিয়েছেন। চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সে বিষয়ে রিপোর্ট দিতে। আর যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদেরকেও আবেদন করতে বলা হয়েছে।’

মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাঈন উদ্দিন বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ইয়াস গেলো, তার জন্য উপকূলে কাজ হচ্ছে। এখনো আমাদের বন্যা সংক্রান্ত কাজ শুরু হয়নি। আমরা কিছুদিন পরে কাজ শুরু করবো।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *