বাতাসের মাধ্যমে ছড়াচ্ছে করোনা, দাবি গবেষণায়

বাতাসের মাধ্যমে ছড়াচ্ছে করোনা, দাবি গবেষণায়

আন্তর্জাতিক

লালা বা ড্রপলেটের তুলনায় বাতাসের মাধ্যমেই করোনাভাইরাস ছড়ায় অনেক বেশি। বিশ্বখ্যাত চিকিৎসা সাময়িকী ল্যানসেটে প্রকাশিত এক নিবন্ধে এই তথ্য জানিয়েছেন একদল গবেষক। এনডিটিভি।

সার্স-কোভ-২ ভাইরাস, বা করোনাভাইরাসের ছড়ানো নিয়ে সম্প্রতি গবেষণা করেছেন যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার ছয় জন গবেষকের একটি দল। দলের অন্যতম সদস্য যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো বৌল্ডার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং কো অপারেটিভ ইনস্টিটিউট ফর রিসার্চ ইন এনভায়ার্নমেন্টাল সায়েন্সের (সিআইআরইএস) রসায়নবিদ জস লুইস জিমেনেজ, ‘আমাদের গবেষণার প্রাপ্ত তথ্য বলছে, লালা বা ড্রপলেটের তুলনায় বাতাসে এই ভাইরাসটি অনেক দ্রুত ও অবাধে ছড়ায়।’

জিমেনেজ বলেন, ‘আমাদের মতে, করোনাভাইরাস ছড়ানোর বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিভিন্ন দেশের সরকারি স্বাস্থ্য সেবা কর্তৃপক্ষ যে ব্যাখ্যা দিয়েছে, তাতে অবিলম্বে এই তথ্যটি অন্তর্ভূক্ত করা উচিত এবং কিভাবে ভাইরাসটির বায়ুবাহিত সংক্রমণ কমানো যায়— এ ব্যাপারে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।’

গবেষক দলের সদস্যরা তাদের নিবন্ধে আরো বলেছেন, করোনায় আক্রান্ত মৃদু উপসর্গের রোগী অর্থাৎ যাদের ঘন ঘন হাঁচি বা কাশির মতো উপসর্গ নেই—তারা ভাইরাসটি ছড়ানোর ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান ভূমিকা রাখেন। বিশ্বজুড়ে মোট সংক্রমণের অন্তত ৪০ শতাংশ ঘটেছে এই মৃদু উপসর্গের রোগীদের কারণে।

বাতাসে এই ভাইরাসটির সংক্রমণের হার এত বেশি যে, হোটেলে পাশাপাশি কক্ষে থাকা লোকজন একে অপরের কাছাকাছি না এলেও শুধু বায়ুবাহিত কারণে এই ভাইরাসটি এক কক্ষ থেকে অপর কক্ষে থাকা লোকজনের দেহে প্রবেশ করতে সক্ষম।

করোনা মহামারির শুরুর দিকে বিশেষজ্ঞদের একাংশ যদিও বলেছিলেন, লালা বা থুথুর (ড্রপলেট) মাধ্যমে এই ভাইরাসটি ব্যপকভাবে ছড়ায়, তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় এর পক্ষে তেমন জোরালো প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন এই গবেষক দলের সদস্যরা।

গবেষকদলের প্রধান ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ট্রিশ গ্রিনহালফ বলেন, ‘মহামারির শুরু থেকেই ঘন ঘন হাতধোওয়া এবং আশপাশের পরিবেশ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারটিতে জোর দেওয়া হচ্ছে। এগুলো গুরুত্বপূর্ণ, তবে তারচেয়েও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ এই রোগের বায়ুবাহিত সংক্রমণ রোধে কার্যকর উপায় বের করা।’

‘কারণ বায়ুবাহিত হওয়ার কারণে এ রোগে আক্রান্ত রোগীর থেকে দূরে থাকা স্বত্বেও তার দ্বারা আক্রান্ত হতে পারেন যে কোনো সুস্থ মানুষ। এমনকি বাসায় অবস্থান করেও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এমন বেশ কিছু নজির আমরা পেয়েছি। এ কারণে আমরা বলব, বাইরে বেরোনোর সময় তো বটেই, ঘরে অবস্থান করার সময়ও যতক্ষণ সম্ভব মাস্ক পরে থাকা উচিত।’

গবেষক দলের সদস্য যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া সান ডিয়াগো বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবানুবিশেষজ্ঞ কিমবার্লি প্রাথার বলেন, ‘আমরা যেহেতু জানতে পেরেছি, এই ভাইরাসটি প্রধানত বায়ুবাহিত, এখন সেটিকে আমরা সেইভাবে মোকাবিলাও করতে পারব। বিভিন্ন দেশ শুরু থেকেই এভাবে ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে এবং অনেকটা সফলও হয়েছে। আমরা তাদের অনুসরণ করতে পারি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *