কঠোর বিধিনিষেধ বাড়ল ১৪ জুলাই পর্যন্ত

কলকারখানা খোলাই থাকছে আসন্ন ‘লকডাউনে’

বাংলাদেশ

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে দেশে আগামী বুধবার থেকে এক সপ্তাহের ‘কঠোর বিধিনিষেধ’ আসছে। তবে এ বিধিনিষেধের মধ্যেও শিল্পকারখানা চলবে। এ সংক্রান্ত প্রস্তাবনা গতকাল রবিবার রাতেই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিলে আজ সোমবার এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে।

গতকাল মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক ভার্চুয়াল বৈঠকে এক সপ্তাহের ‘কঠোর বিধিনিষেধ’ আরোপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সভায় যুক্ত ছিলেন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, বিজিএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ আবদুস সালাম, নবনির্বাচিত সভাপতি ফারুক হাসান, বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বিটিএমএর সভাপতি মোহাম্মদ আলী প্রমুখ।

আগামী বুধবার থেকে সরকার ‘কঠোর বিধিনিষেধ’ আরোপ করলেও ওই সময়ে শিল্পকারখানা চলবে। ব্যাংক বন্ধ থাকলে আমদানি-রপ্তানিতে সমস্যা হবে এ কারণে কিছু ব্যাংক খোলা রাখা হবে। ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখের সাধারণ ছুটি হলেও ওইদিন থেকে আপাতত এক সপ্তাহের জন্য সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও অন্যান্য অফিস বন্ধ থাকবে। পরিস্থিতি বিবেচনায় পরে এটি আরও এক সপ্তাহ বাড়ানোরও চিন্তাভাবনা আছে। এ সময়ে গণপরিবহন, দোকান, বিপণিবিতানও বন্ধ থাকবে।

এদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে চলমান ‘কঠোর নিষেধাজ্ঞা’ ১৪ এপ্রিল সকাল ৬টা পর্যন্ত বহাল থাকবে। গতকাল এ নির্দেশনা দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে। করোনার সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বাড়তে থাকায় গত ৫ এপ্রিল সকাল ৬টা থেকে ১১ এপ্রিল (গতকাল) রাত ১২টা পর্যন্ত সাত দিনের ‘কঠোর নিষেধাজ্ঞা’ জারি করে সরকার।

১৪ এপ্রিল থেকে কঠোর লকডাউন দেওয়া হচ্ছে বলে ইতিমধ্যে সরকারের তরফে জানানো হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সরকারের সিনিয়র সচিব ও সচিবদের কাছে পাঠানো অফিস আদেশে বলা হয়েছে, ‘করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে শর্তসাপেক্ষে সার্বিক কার্যাবলি/চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের গত ৪ এপ্রিল (১১ দফা নির্দেশনা) ও ৮ এপ্রিল (দোকান ও মার্কেট খোলা) অফিস আদেশের ধারাবাহিকতায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ আগামী ১৪ এপ্রিল ভোর ৬টা পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হলো।’ এ বিষয়ে সিনিয়র সচিব ও সচিবদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে ওই অফিস আদেশে।

গত ৪ এপ্রিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে চলমান বিধিনিষেধের সময় পালনের জন্য ১১টি নির্দেশনা দেওয়া হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ১. সব গণপরিবহন (সড়ক, নৌ, রেল ও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট) বন্ধ থাকবে। তবে পণ্য পরিবহন, উৎপাদন ব্যবস্থা, জরুরি সেবাদানের ক্ষেত্রে এ আদেশ প্রযোজ্য হবে না। এছাড়া বিদেশগামী/বিদেশফেরত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে না।

২. আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা যেমনত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ¦ালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরসমূহের (স্থল, নদী ও সমুদ্রবন্দর) কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট, ডাক সেবাসহ অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহ, তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে।

৩. সব সরকারি/আধাসরকারি/স্বায়ত্তশাসিত অফিস ও আদালত এবং বেসরকারি অফিস কেবল জরুরি কাজ সম্পাদনের জন্য সীমিত পরিসরে প্রয়োজনীয় জনবলকে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় অফিসে আনা-নেওয়া করতে পারবে। শিল্পকারখানা ও নির্মাণকার্যাদি চালু থাকবে। শিল্পকারখানার শ্রমিকদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পরিবহন ব্যবস্থাপনায় আনা-নেওয়া করতে হবে। বিজিএমইএ ও বিকেএমইএকে শিল্পকারখানা এলাকায় কাছাকাছি সুবিধাজনক স্থানে তাদের শ্রমিকদের জন্য ফিল্ড হাসপাতাল/চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।

৪. সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত অতিজরুরি প্রয়োজন ছাড়া (ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসাসেবা, মৃতদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না।

৫. খাবারের দোকান ও হোটেল-রেস্তোরাঁয় শুধু খাদ্য বিক্রয়/সরবরাহ করা যাবে। কোনো অবস্থাতেই হোটেল-রেস্তোরাঁয় বসে খাবার গ্রহণ করা যাবে না।

৬. শপিং মলসহ অন্যান্য সব দোকান বন্ধ থাকবে। তবে দোকানসমূহ পাইকারি ও খুচরা পণ্য অনলাইনের মাধ্যমে কেনাবেচা করতে পারবে। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই সর্বাবস্থায় কর্মচারীদের মধ্যে আবশ্যিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে এবং কোনো ক্রেতা সশরীরে যেতে পারবে না।

৭. কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেনাবেচা করা যাবে। বাজার কর্তৃপক্ষ/স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবে।

৮. ব্যাংকিং ব্যবস্থা সীমিত পরিসরে চালু রাখার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে। ৯. সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ ঢাকায় সুবিধাজনক স্থানে ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

১০. সারা দেশে জেলা ও মাঠপ্রশাসন এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত টহল জোরদার করবে।

এবং ১১. এ আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ নির্দেশনার কপি সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সিনিয়র সচিব/সচিবকে পাঠিয়ে তা অধীন দপ্তর/সংস্থাগুলোকে বাস্তবায়ন করতে নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

নিষেধাজ্ঞা শুরু হলে গণপরিবহন না পেয়ে দুর্ভোগে পড়েন খোলা থাকা সরকারি-বেসরকারি অফিসের কর্মীরা। গণপরিবহন না পেয়ে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করেন যাত্রীরা। একই সঙ্গে দোকান ও মার্কেট খুলে দিতেও আন্দোলনে নামেন মালিক-শ্রমিকরা। এরই মধ্যে গত ৭ এপ্রিল সিটি করপোরেশন এলাকার মধ্যে গণপরিবহন খুলে দেওয়া হয়। সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলাচল করছে বাস। তবে শপিং মল ও দোকান মালিক-শ্রমিকদের আন্দোলন চলছিল। শেষে শুক্রবার (৯ এপ্রিল) থেকে ১৩ এপ্রিল সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকানপাট ও শপিং মল খোলা রাখা যাবে বলে গত বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) নির্দেশনা জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

এর মধ্যে গত শুক্রবার সকালে সরকারি বাসভবনে ব্রিফিংয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশে করোনাভাইরাস ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার। কিন্তু এতেও কমেনি জনগণের উদাসীনতা। এ অবস্থায় জনস্বার্থে সরকার ১৪ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের জন্য সর্বাত্মক লকডাউনের বিষয়ে সক্রিয় চিন্তাভাবনা করছে। পরে ওইদিন দুপুরে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানান, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে এবার কঠোর লকডাউনে যাচ্ছে সরকার। ১৪ এপ্রিল থেকে সাত দিনের জন্য এ লকডাউন দেওয়া হবে। এ সময়ে জরুরি সেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা ছাড়া সরকারি-বেসরকারি সব অফিস বন্ধ থাকবে। বন্ধ থাকবে গণপরিবহন ও শিল্পকারখানা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *