নারীর পোশাকের কারণে পাকিস্তানে ধর্ষণ বেড়েছে- ইমরানের বক্তব্যে তোলপাড়

নারীর পোশাকের কারণে পাকিস্তানে ধর্ষণ বেড়েছে- ইমরানের বক্তব্যে তোলপাড়

আন্তর্জাতিক

ধর্ষণ বেড়ে যাওয়ার জন্য নারীদের পোশাককে দায়ী করে তোপের মুখে পড়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।  তিনি দেশটিতে ধর্ষণ বেড়ে যাওয়ায় নারীদের পোশাককে দায়ী করায় তুলকালাম শুরু হয়ে যায়। বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে এমন তথ্য উঠে এসেছে। সমালোচকরা তাকে মুর্খ বলতে দ্বিধা করছেন না।

সম্প্রতি পাকিস্তানের টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ধর্ষণ বেড়ে যাওয়ার জন্য অশ্লীলতা ও নারীদের খোলামেলা পোশাককে দায়ী করেন।
গত বছর এক নারী রাতে এক পেট্রোল পাম্পে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন। নিজের সন্তানদের সামনে ধর্ষণের শিকার হওয়া ওই নারীকে এক পুলিশ কর্মকর্তা রাতে কোনো পুরুষ সঙ্গী ছাড়া বাইরে বের হওয়ার কারণে ভর্ৎসনা করলে দেশজুড়ে শুরু হয় প্রতিবাদ-বিক্ষোভ।

আল জাজিরার খবরে বলা হয়, ওই সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নারীদের শালীন পোশাক পরার পরামর্শও দেন। তিনি বলেন, পর্দা করার সারবস্তুই হলো আকর্ষণ করা থেকে বিরত থাকা। নিজেকে বিরত রাখার ইচ্ছাশক্তি সবার নেই।  সবাইকে পর্দা করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যে সমাজে অশ্লীলতার প্রচলন আছে, সেখানে তার পরিণতিও রয়েছে

ইমরান খানের ওই মন্তব্যের পর প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠনসহ বিভিন্ন অধিকার সংগঠন। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলেছে, প্রধানমন্ত্রী ‘ধর্ষণ কে ক্ষমার চোখে’ দেখতে চাচ্ছেন। নিজের মন্তব্যের জন্য তারা ইমরান খানকে ক্ষমা চাইতে বলেছেন এবং এ দাবির পক্ষে কয়েকশ স্বাক্ষর সংগ্রহ করা হয়েছে।

অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি এক বিবৃতিতে ইমরান খানের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। ওই বিবৃতিতে ইমরান খানের মন্তব্যকে ‘ত্রুটিপূর্ণ, রূঢ় ও বিপজ্জনক’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ধর্ষণের ঘটনার অপরাধ কেবলমাত্র ধর্ষকের ওপরই বর্তায় এবং (ইমরান খানের মন্তব্যের মতো) বক্তব্যের সংস্কৃতি ধর্ষককে উৎসাহিত করে। এর আগে হিউম্যান রাইটস কমিশন অব পাকিস্তান মঙ্গলবার মন্তব্য করে, ইমরান খানের মন্তব্যে তারা ‘হতভম্ব’ হয়েছে।

বিবিসি জানায়, টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত দুই ঘণ্টার ওই প্রশ্ন-উত্তর পর্বে ইমরান খানকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, যৌন নিপীড়ন বন্ধে তার সরকার কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে?

উত্তরে তিনি প্রথমে নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে সংগঠিত অপরাধের নিন্দা করেন। একপর্যায়ে বলেন, ‘অশ্লীলতা বেড়ে যাওয়ার’ ফল হচ্ছে যৌন নৃশংসতা। এজন্য তিনি ভারত, পশ্চিমা ও হলিউডের সিনেমাকে দায়ী করেন।

এ সময় এক ব্যক্তি তাকে প্রশ্ন করেন, দেশটিতে ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতা, বিশেষ করে শিশুদের ওপর যৌন হয়রানি বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে কী পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার।

জবাবে ইমরান খান বলেন, কিছু লড়াইয়ে সরকার ও আইন একা জিততে পারে না।  এতে সমাজেরও অংশগ্রহণ দরকার। তার কথায়, ‘ফাহশি’ (অশ্লীলতা) থেকে নিজেদের রক্ষা করা সমাজের জন্যেও গুরুত্বপূর্ণ।

ইমরান বলেন, ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতার যতগুলো ঘটনা গণমাধ্যমে আসে, সেগুলো প্রকৃত সংখ্যার এক শতাংশ মাত্র। সমাজে নির্লজ্জতার কারণে আজকাল বিয়ে-বিচ্ছেদের হার ৭০ শতাংশ বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, ইসলামে পর্দাপ্রথার অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে ‘প্রলোভনকে আটকে রাখা’। সমাজে অনেকে রয়েছে, যারা ইচ্ছাশক্তি দমিয়ে রাখতে পারে না। এর কিছু প্রভাব তো পড়বেই! পাকিস্তানের নারীদের উচিত প্রলোভন প্রতিরোধ করা। কারণ, সবার নিজেকে সংবরণ করার ইচ্ছাশক্তি থাকে না। তাই নারীদের পর্দা করা উচিত।

ইমরান খানের ওই মন্তব্যের পর সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠে। নারীদের নিরাপত্তা ও সমতার বিচারে বিশ্বের সবথেকে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি পাকিস্তান। সেখানে তথাকথিত ‘অনার কিলিং’ এর নামে পরিবারের সদস্যরাই নারীদের নির্যাতন, ধর্ষণ এমনকি হত্যাও করে।

পাকিস্তানের সরকারি হিসাব অনুসারে, দেশটিতে প্রতিদিন অন্তত ১১টি ধর্ষণের ঘটনার খবর পাওয়া যায়। সেখানে গত ছয় বছরে ২২ হাজারের বেশি ধর্ষণ মামলা দায়ের হয়েছে। এর মধ্যে সাজা হয়েছে মাত্র ৭৭ জন অভিযুক্তের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *