পেঁয়াজ আমদানিতে ফের শুল্কারোপ হচ্ছে

পেঁয়াজ আমদানিতে ফের শুল্কারোপ হচ্ছে

বাংলাদেশ

পেঁয়াজ আমদানিতে আবারও ৫ শতাংশ শুল্কারোপের চিন্তা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) এ বিষয়ে প্রস্তাব দেওয়া হবে বলে জানান তিনি। রোববার সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন টিপু মনুশি।

গত বছরের মার্চ মাসে ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিলে পেঁয়াজ সঙ্কটে পড়ে দেশ। তখন অন্য দেশ থেকে আমদানি সহজ করতে পেঁয়াজের ওপর ধার্য ৫ শতাংশ শুল্ক মুক্ত করে দেয় সরকার। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, দেশের ভোক্তা এবং উৎপাদনকারীদের স্বার্থ রক্ষা করেই পেঁয়াজ আমদানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। আগে এলসি করা পেঁয়াজগুলো এখন দেশে প্রবেশ করছে। এগুলোর বর্তমান আমদানি মূল্য প্রতিকেজি প্রায় ৩৯ টাকা। নতুন আমদানির বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। দেশের পেঁয়াজ পুরোদমে বাজারে আসবে আগামী মার্চ মাসে।

গণমাধ্যমের সহযোগিতা কামনা করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, কোনো অসাধু ব্যবসায়ীকে সুযোগ নিতে দেওয়া হবে না, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। পেঁয়াজ আমদানি নির্ভরতা আর থাকবে না। বর্তমানে দেশে ৮ থেকে ৯ লাখ টন পেঁয়াজের ঘাটতি রয়েছে। সরকার পেঁয়াজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে ব্যাপক কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়ছে। আশা করা যায় আগামী তিন বছরের মধ্যে দেশ পেঁয়াজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে। পেঁয়াজের বিষয়ে সরকার সচেতন রয়েছে।

তিনি বলেন, এখন পেঁয়াজের ওপর ৫ শতাংশ শুল্কের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা একটা প্রস্তাব করব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে কী করা যায় তারা সেটা করবে। যদি মনে করে যে, দেওয়াটা (শুল্ক) ভালো তাহলে দেবে।

রোববার বিকালে কৃষি মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও এনবিআরের বৈঠকের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আমার যেটা সাজেশন তাদের প্রতি এবং আপনাদেরও জানাতে চাই ভারতের পেঁয়াজ আমরা নেব কী নেব না, কী পরিমাণ ডিউটি আরোপ করব, এটা যেন আমাদের উৎপাদকদের কথা বিবেচনা করে এবং ভোক্তাদের কথা বিবেচনা করে নির্ধারণ করা হয়। কোনো অবস্থাতেই যাতে উৎপাদকরা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। তাদের সাপোর্ট না দিলে সামনের দিনগুলোতে আমাদের আরও খারাপ অবস্থা হবে।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, দ্বিতীয় আরেকটা কথা হলো, ভারত যে সময় পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিয়েছিল সেই সময় আমরা তুরস্ক, মিসর ও চীনসহ আরও অনেক দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করেছি। তখন যে ৫ শতাংশ ডিউটি ছিল সেটা উঠিয়ে নেওয়া হয়েছিল, যাতে একটু কম দামে পেঁয়াজ পাওয়া যায়। এখন যদি ভারতের পেঁয়াজের জন্য ডিউটি আবার বসাতেও হয়। তাহলে যে এলসিগুলো আগে ওপেন করা হয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে তারা যেন এর আওতার বাইরে থাকে। তারা পেঁয়াজ আনার পর লাভ করতে পারেনি, লোকসান করেছে, সেটাও লক্ষ রাখতে হবে। তবে আমরা লক্ষ রাখছি আমাদের কৃষকরা যেন মার না খায়।

আমদানি শুল্ক বাড়বে কি না জানতে চাইলে টিপু মুনশি বলেন, আজকে আলোচনা করে ঠিক করব আমরা কী করব। যদি দেখি ভারতের পেঁয়াজ ৩৯ টাকায় ঢুকছে। সেটা আমাদের জন্য আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ভারত তাদের দেশের স্বার্থের কথা চিন্তা করে তারা পেঁয়াজ রফতানি কখনও বন্ধ করে, কখনও খুলে দেয়। এখন তারা খুলে দিয়েছে। গত মার্চের মাঝামাঝিতে বন্ধ করে দিয়েছিল। আমরা আমাদের কৃষকের স্বার্থটা আগে দেখব। পাশাপাশি ভোক্তাদেরটাও দেখব। আমাদের আশা আগামী তিন বছরের মধ্যে পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হব।

তিনি বলেন, ভারত আজকে পেঁয়াজ ছেড়েছে। ভারত থেকে পেঁয়াজ ঢুকছে ৩৯ টাকা দরে। আর ঢাকার বাজারে সেই পেঁয়াজ পাইকারিতে ৪৫ টাকা, আর খুচরা বাজারে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। তবে আমাদের পেঁয়াজ কিন্তু সেই রেটেই আছে। পাশাপাশি ভারতের পেঁয়াজ ঢুকলেও সমস্যার কিছু নেই। আজ বিকালে কৃষি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বৈঠক করবেন, সেখানে আলোচনা করে এ বিষয় ফয়সালা করবেন।

পেঁয়াজ সঙ্কটের কারণে আমদানি হচ্ছে কি না জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, পেঁয়াজের ক্রাইসিসের কারণে আমদানি হবে এমনটা নয়, নিয়মিত আমদানি হয়। আমাদের দেশে এই মুহূর্তে যে পরিমাণ পেঁয়াজ ভারত বাদে অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি হচ্ছে, পাশাপাশি মুরি কাটা পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে তাতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। আগামী মার্চ মাসে যে পেঁয়াজ আসবে সে পর্যন্ত কোনো সমস্যা হবে না। আমরা পর্যবেক্ষণে রাখব যদি আমদানি করতে হয় করব। এখন পেঁয়াজ উঠবে সেই সময় আমদানি করলে কৃষকরা দাম পাবে না। আমাদের ধারণা পেঁয়াজ উৎপাদনে খরচ পড়ে ১৮ টাকা। সেটা যদি কৃষকরা ২৫ টাকায় বিক্রি করতে না পারে তাহলে তারা উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে। আর সেই পেঁয়াজ ঢাকা পর্যন্ত আসতে ৪০ টাকায় ভোক্তারা পাবে।

টিপু মুনশি বলেন, আমাদের দেশে দাম বাড়ে সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বরে। দীর্ঘমেয়াদে পেঁয়াজের সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তাহলে দুই-তিনটা রাস্তা রয়েছে। একটা হলো জুন-জুলাই মাসে উৎপাদন হয়, এমন ধরনের পেঁয়াজের বীজের ব্যবস্থা করতে হবে। আর বেশ কিছু কোল্ডস্টোরেজ করতে হবে পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য। একটা মাত্র অনুমতি নিয়েছে ৪০ হাজার টন রাখার জন্য। এরকম গোটা ১০টা করতে পারলে তাহলে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যাবে। খুব ভালোভাবে যদি আগানো যায় তাহলে তিন বছরের মধ্যে আমরা লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি পৌঁছে যাব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *