স্থায়ীভাবে বন্ধ হলো নতুন আবাসিক গ্যাস-সংযোগ

বাংলাদেশ

বাসাবাড়িতে পাইপলাইনের মাধ্যমে প্রাকৃতিক গ্যাসের সংযোগ স্থায়ীভাবে বন্ধ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে সরকার। ফলে দীর্ঘদিন ধরে আবাসিক গ্যাস সংযোগের অপেক্ষায় থাকা সব গ্রাহকের আশা গুড়েবালিতে পরিণত হতে যাচ্ছে। এমনকি ডিমান্ড নোট ইস্যু হওয়া এবং টাকা জমা দেওয়া গ্রাহকদের আবেদনও বাতিল করা হবে। তাদের অর্থ ফেরত দেবে সংশ্লিষ্ট বিতরণ কোম্পানিগুলো।

সরকারের জ্বালানি বিভাগ গত বৃহস্পতিবার গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোকে এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়ে বাস্তবায়নের আদেশ দিয়েছে। বিতরণ সংস্থাগুলোর তথ্যমতে, নতুন সংযোগের জন্য ডিমান্ড নোট ইস্যু হওয়া এবং প্রয়োজনীয় ফি জমা দেওয়া গ্রাহকের সংখ্যা আড়াই লাখের মতো। গ্যাস ও খনিজ সম্পদ খাতের নেতৃত্ব প্রদানকারী সংস্থা পেট্রোবাংলার এক কর্মকর্তা জানান, বৈধ-অবৈধ নানা উপায়ে এই শ্রেণির গ্রাহকসংখ্যা প্রায় ৮ লাখ হবে। ঐ কর্মকর্তা বলেন, ডিমান্ড নোট ইস্যু হওয়া এবং টাকা জমা দেওয়া গ্রাহকদের প্রায় সবাই অবৈধভাবে গ্যাস ব্যবহার করছেন। বিতরণ কোম্পানিগুলোর স্থানীয় কর্মকর্তা ও ঠিকাদারেরা মিলে এই বাসাবাড়িগুলোতে অবৈধভাবে গ্যাসের সংযোগ দিয়েছেন এবং প্রতি মাসে মাসিক বিলও আদায় করছেন। অদক্ষ ব্যবস্থাপনায় এই গ্যাস চুরির কারণে জাতীয় সম্পদের অপচয় হচ্ছে। গ্যাসলাইন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিভিন্ন সময়ে। পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রাষ্ট্র।

দেশে সবচেয়ে বড় গ্যাস বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী আলী ইকবাল মো. নূরুল্লাহ বলেন, ‘বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ের চিঠি পেয়েছি। গৃহস্থালিতে আর গ্যাস দেওয়া হবে না। যেসব গ্রাহক সংযোগের জন্য আবেদন করেছেন এবং টাকা জমা দিয়েছেন, তাদের নাম আমাদের তথ্যভান্ডারে রয়েছে। রবিবার এ বিষয়ে আমরা একটি সভা করে সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের রোডম্যাপ তৈরি করব। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ বা অন্য কোনো উপায়ে গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গ্রাহকেরা নতুন সিদ্ধান্ত মেনে নেবে না। তবে মানাতে হবে। সরকারের সিদ্ধান্ত তাদের জানানো হবে।

দেশে গ্যাস বিতরণে নিয়োজিত অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি, জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি ও সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি। এই সংস্থাগুলোর কর্মকর্তারাও জানিয়েছেন, আগামী রবি কিংবা সোমবার সভা করে তারা সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের রূপরেখা ঠিক করবেন।

এদিকে সরকারের এই সিদ্ধান্তে দুই শ্রেণির গ্রাহক সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়তে যাচ্ছেন বলে দাবি করা হচ্ছে। এদের একটি শ্রেণি হলো ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরের বাড়ি ও ফ্ল্যাটের মালিকেরা। আরেকটি হলো আবাসন কোম্পানিগুলো। তাদের অনেকেই গ্রাহকদের পাইপলাইনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এখন সেই সংযোগ না পেলে বিক্রি কমে যাবে বলে মনে করছেন তারা। বিশেষ করে ২০১৮ সালে এলএনজি আমদানি শুরুর পর দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা গ্যাসের সংযোগ নতুন করে শুরু হওয়ার কথা নীতিনির্ধারণী মহলেও শোনা যাচ্ছিল। তখন ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুরসহ বিভিন্ন জেলায় অবৈধ সংযোগের সংখ্যা আরো বাড়িয়ে দেয় সিন্ডিকেটগুলো। গ্রাহকদের তারা আশ্বাস দেয়, কয়েক দিন পরে গ্যাসের সংযোগ দেওয়া শুরু করলে তারা এগুলোকে বৈধ করে দেবেন। কিন্তু এখন সব অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পালায় এই গ্রাহকদের সংযোগও কাটা পড়বে।

জ্বালানি বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, গ্যাসের অবৈধ সংযোগ কোনোভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না। নানা প্রলোভন দেখিয়ে জনগণকে অবৈধ সংযোগ নিতে বাধ্য করে কিছু চক্র। আবার অনেক গ্রাহকও নানাভাবে তদবির-প্রচেষ্টায় অবৈধ সংযোগ নেন। এখন স্থায়ীভাবে আবাসিক সংযোগ বন্ধ হওয়ায় নতুন করে অবৈধ সংযোগ নেওয়া অনেকটাই বন্ধ হয়ে যাবে।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব আনিছুর রহমান জানান, গ্যাসের সব অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন না হওয়া পর্যন্ত উচ্ছেদ অভিযান চলবে। আবাসিকে নতুন সংযোগ দেওয়ার পরিস্থিতি-সক্ষমতা এখন নেই। তাই গ্রাহকদের আশায় ঝুলিয়ে না রেখে স্পষ্ট সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *