নরসিংদীর আলোকবালীর নেকজানপুরে নির্বাচনী সহিংসতায় ৩ জনের মৃত্যূর ঘটনার পর থেকে ইউনিয়নের ৫ টি গ্রাম প্রায় পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। গ্রেপ্তার এড়াতে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন প্রায় ২ হাজার মানুষ। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এডঃ আসাদ উল্লাহসহ প্রতিটি গ্রামে তার সমর্থক ও দলীয় নেতাকর্মীদের ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আসামি করে প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ ঘটানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়ানো ওই মামলায় অজ্ঞাত আসামিদের স্থলে নাম অন্তর্ভুক্ত করার ভয় দেখিয়ে চাঁদা দাবি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এলাকার একটি চাঁদাবাজ চক্র।
অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিনে নরসিংদী সদর উপজেলার প্রত্যন্ত চরাঞ্চল আলেকবালী ঘুরে অনেকটা নিরব-নিস্তব্ধ অবস্থায় দেখা যায় ইউনিয়নটিকে। স্থানীয় কাজিরকান্দি, নেকজানপুর, মুরাদনগর, সাতপাড়া ও খোদাদিলা এই গ্রামগুলোকে প্রায় পুরুষশূন্য অবস্থায় দেখা যায়।
নরসিংদী সদর উপজেলার চারদিক নদীবেষ্টিত প্রত্যন্ত চরাঞ্চল আলোকবালী ইউনিয়ন। এসব গ্রামের মানুষদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দ্বিতীয় ধাপে গত ১১ নভেম্বর এই ইউপির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন দিপু, ও সাধারণ সম্পাদক এডঃ আসাদ উল্লাহসহ বেশ কয়েকজন। দলীয় হাই কমান্ড নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেলোয়ার হোসেন দিপুকে মনোনীত করে।
এদিকে এড. আসাদ উল্লাহ’র মনোনয়ন বঞ্চিতের বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি তার কর্মী-সমর্থকরা। এড. আসাদ উল্লাহকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার দাবি তোলেন কর্মী-সমর্থকরা। তাদের দাবির মুখে নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। দলের প্রতি আস্থাশীল ইউনিয়ন আ’লীগের এই নেতা দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে নিজের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান।
গত ৪ নভেম্বর আলোকবালী ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ৫ নং ওয়ার্ডের দুই সদস্য পদপ্রার্থী রিপন মোল্লা ও আবু খায়ের’র কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘটিত সংঘর্ষে ৩ জন নিহত হন। ওই ঘটনায় ৫৮ জনের নাম উল্লেখসহ আরও অজ্ঞাত ১৫০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের হয়। এতে আতঙ্কে পড়ে যান নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো আ’লীগে বিদ্রোহী প্রার্থী এড. আসাদ উল্লাহর কর্মী-সমর্থকরা। ফলে নির্বাচনের আগেই ইউনিয়নের সবকটি গ্রামের প্রায় দুই হাজার পুরুষ বাড়িছাড়া হয়।
এদিকে, মতিন মেম্বার, সফিক মেম্বার, আইয়ুব আলী মেম্বারসহ কতিপয় দুর্বৃত্ত বাড়িছাড়া এ মানুষদের দুর্বলতার সুযোগে নিরীহ মানুষদের অজ্ঞাতনামা আসামিদের স্থলে নাম অন্তর্ভুক্ত করার ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
হামলা ও লুটপাটের শিকার বিভিন্ন বাড়ি ঘুরে পলাতক গৃহকর্তাদের মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে তাদের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। এ সময় খোদাদিলা গ্রামের ইউপি সদস্য পদপ্রার্থী আল ইসলাম বলেন, নির্বাচনী মাঠে যাতে না থাকতে পারি সেজন্য নির্বাচনের আগের দিন পুলিশের ভয় দেখিয়ে আমাকে ও আমার সমর্থকদেরকে বাড়িছাড়া করে, আমার বাড়িতে লুটপাট করা হয়।
মুরাদনগর গ্রামের ডা: আলাউদ্দিন বলেন, মুরাদনগর বাজারে আমার ঔষধের দোকানে ভাঙচুর ও লুটপাট করে আমাকে গ্রাম থেকে বের করে দেওয়া হয়।
উত্তরপাড়া গ্রামের ইউপি সদস্য প্রার্থী জব্বর মিয়ার স্ত্রী বলেন, এতদিন ওরা কিছু বলেনি। নির্বাচনে পাস করেই সেই রাতে বাড়িতে এসে হুমকি-ধমকি দেন। এসময় আমার ঘরে ভাঙচুর চালায়, এমনকি রান্নাঘরের উনূন পর্যন্ত ভেঙে দেয়ি এবং বাড়িতে থাকলে মেরে ফেলার হুমকি প্রদান করে। প্রাণের ভয়ে অবুঝ সন্তানদের নিয়ে এখন বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি।
আলোকবালী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এড: আসাদুল্লাহ’র সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার জন্য আমাকে ও ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ সময় তিনি যারা প্রকৃত দোষী তাদের বিচারের দাবি জানান তিনি।
নরসিংদীর এ এস পি সার্কেল সাহেব আলী পাঠান বলেন, এ ব্যাপারে এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Visits: 0