যুক্তরাজ্যে গাড়ি বিস্ফোরণে নিহত ১ গ্রেপ্তার ৩

যুক্তরাজ্যে গাড়ি বিস্ফোরণে নিহত ১ গ্রেপ্তার ৩

আন্তর্জাতিক
যুক্তরাজ্যের লিভারপুলের উইমেনস হাসপাতালের বাইরে গাড়ি বিস্ফোরণে এক ব্যক্তি নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় দেশটির সন্ত্রাসবাদ আইনে তিন জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। খবর বিবিসির

খবরে বলা হয়েছে, রোববার স্থানীয় সময় বেলা ১১টার ঠিক আগে একটি ট্যাক্সি একজন যাত্রীকে তুলে উইমেনস হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় বিস্ফোরিত হয়।

ঘটনার সময় সেখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অবদান রাখা সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের সম্মানে জাতীয় স্মরণানুষ্ঠানে দুই মিনিটের নীরবতা পালন শুরু হওয়ার কথা ছিল।

ট্যাক্সিতে থাকা যাত্রীকে ঘটনাস্থলেই মৃত ঘোষণা করা হয়। এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে নিহতের পরিচয় জানানো হয়নি।

বিস্ফোরণের ঘটনায় পুরুষ ট্যাক্সিচালক আহত হয়েছেন। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এবং তার অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানা গেছে।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, লিভারপুল শহরের কেনসিংটন এলাকা থেকে যথাক্রমে ২৯, ২৬ ও ২১ বছর বয়সি তিন জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা আরও বলেছেন- বিস্ফোরণের কারণ সম্পর্কে জানতে তারা চোখ-কান খোলা রেখেছেন এবং তারা মার্সিসাইড পুলিশের সঙ্গে কাজ করছেন। এ ব্যাপারে তদন্ত নিজস্ব গতিতে চলছে। নিরাপত্তা বাহিনী ও এমআইফাইভ এ ক্ষেত্রে সব ধরনের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।

এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সশস্ত্র কর্মকর্তারা সেফটন পার্কের কাছে রাটল্যান্ড অ্যাভিনিউ এবং কেনসিংটনের বোলার স্ট্রিটে অভিযান চালিয়েছেন। বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তারা সেফটন পার্কের কাছে রাটল্যান্ড অ্যাভিনিউ এলাকায় অবস্থান করছেন। এ অভিযানের সঙ্গে বিস্ফোরণের যোগসূত্র আছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

বিস্ফোরণের স্থানটি এখন ঘেরাও করে রাখা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার অনেক বাসিন্দাকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশের পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরাও অবস্থান করছেন।

কার্ল বেসান্ট নামের এক ব্যক্তি জানান, বিস্ফোরণের সময় তিনি হাসপাতালের ভেতরে ছিলেন। তার সঙ্গী তখন মাত্রই সন্তান প্রসব করেছেন।

কার্ল বলেন, আমার সঙ্গী ভয়ে কেঁপে উঠেছিল। আমরা (ঘটনাস্থলের) খুব কাছাকাছি ছিলাম। আমার সঙ্গী আমাদের সন্তানকে দুধ পান করাচ্ছিল, ঠিক তখনই বিস্ফোরণ ঘটে। একটা বিকট শব্দ শুনতে পেয়ে আমরা জানালার বাইরে তাকাই। দেখি যে, একটি গাড়িতে আগুন লেগেছে, আর একজন গাড়ি থেকে লাফ দিয়ে বেরিয়ে আসছে… চিৎকার করছে। গাড়ির ভেতরেও কেউ ছিল।

‘হাসপাতালটি বন্ধ করে দেয়া হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দেয়- কেউ ভেতরে ঢুকতে পারবে না, বা বাইরে যেতে পারবে না। তবে, মানুষজন পেছনের দরজা দিয়ে চলাচল করেছে’ যোগ করেন কার্ল।

এদিকে, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন টুইট করেছেন, ‘লিভারপুলের ভয়াবহ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি আমি সমবেদনা জানাই।’

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে পেশাদারিত্বের পরিচয় দেয়ার জন্য জরুরি পরিষেবাগুলোকে এবং তদন্ত চালিয়ে যাওয়ার জন্য পুলিশকে ধন্যবাদ জানাই।’

ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল টুইট করে জানিয়েছেন, তাকে ‘ভয়াবহ এ ঘটনার বিষয়ে নিয়মিত হালনাগাদ তথ্য জানানো হচ্ছে।’

ঘটনাস্থল থেকে বিবিসির জিম ক্লার্ক জানান, বিস্ফোরণের পর শহরের সেফটন পার্ক এলাকার রাটল্যান্ড অ্যাভিনিউতে স্থানীয় সময় বেলা ১টার দিকে প্রথম অভিযানটি চালানো হয়। জায়গাটি হাসপাতাল থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে। শহরের ওই এলাকায় ‘ভিক্টোরিয়া যুগের’ বড় বড় বাড়ি রয়েছে।

যে বাড়িতে অভিযান চালানো হয়, সেখানে কয়েকটি ফ্ল্যাট ছিল। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেছেন, তাঁরা কয়েক সপ্তাহ ধরে ওই বাড়ি থেকে কাউকে যাওয়া-আসা করতে দেখেননি। তাঁরা ভেবেছিলেন বাড়িটি খালি। বর্তমানে ওই বাড়ির সংশ্লিষ্ট রাস্তা ঘেরাও করে রাখা হয়েছে। এবং কিছু বাসিন্দাকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

রাস্তায় থাকা প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আর্মড পুলিশ স্থানীয় সময় বেলা ২টা নাগাদ ওই বাড়িতে অভিযান চালায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তাঁরা দুই ব্যক্তিকে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যেতে দেখেছেন। পরে পুলিশ ওই দুজনকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। এবং বাড়ির রাস্তাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এ ছাড়া হাসপাতাল থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে শহরের কেনসিংটন এলাকার বোয়ালার স্ট্রিটেও পুলিশকে দেখা গেছে।

মার্সিসাইড পুলিশের প্রধান কনস্টেবল সেরেনা কেনেডি জনসাধারণকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করে বলেছেন, এ ধরনের ঘটনা খুব বিরল। এবং সামনের দিনগুলোয় রাস্তায় পুলিশের উপস্থিতি বাড়ানো হবে।

একটি বোমা নিষ্ক্রিয়কারী ইউনিট এবং ফায়ার সার্ভিসের সদস্যেরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত আছেন। গাড়ি বিস্ফোরণের খবরে স্থানীয় সময় বেলা ১১টার দিকে পুলিশকে ডাকা হয়েছিল।

মার্সিসাইড ফায়ার অ্যান্ড রেসকিউ সার্ভিসের প্রধান অগ্নিনির্বাপণ কর্মকর্তা ফিল গ্যারিগান জানান, বেলা ১১টার কিছু পরেই ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে আসার পর দেখতে পায় গাড়ির আগুন পুরোপুরি ছড়িয়ে পড়েছে।

ফিল গ্যারিগান বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পরে দ্রুত আগুন নিভিয়ে ফেলে… তবে, একজনের মৃত্যু হয়েছে।

‘আগুন পুরোপুরি ছড়িয়ে পড়ার আগেই গাড়িতে থাকা অপর ব্যক্তি দ্রুত বেরিয়ে আসতে পেরেছিলেন। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি’, যোগ করেন ফিল গ্যারিগান।

লিভারপুল উইমেন’স হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত দর্শনার্থীদের প্রবেশ সীমিত করা হয়েছে। এবং রোগীদের যতটা সম্ভব অন্য হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে।

হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ক্যাথরিন থমসন বলেন, ‘আমরা পরবর্তী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার জন্য রোগীদের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছি। এবং হাসপাতালের যেকোনো অ্যাপয়েন্টমেন্ট বা অন্যান্য বিষয়ে আপডেটের জন্য রোগীদের যোগাযোগ রাখতে বলা হয়েছে।’

লিভারপুল উইমেন’স হাসপাতালে প্রতিবছর প্রায় ৫০ হাজার রোগীকে সেবা দেয়া হয়ে থাকে। এটি ইউরোপের অন্যতম বড় বিশেষায়িত হাসপাতাল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *