প্রথমবার বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলতে এসেছে অস্ট্রেলিয়া। এসেই করোনার কারণে নানা শর্তের বেড়াজালে ফেলে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে (বিসিবি)। সব শর্ত মেনে নিয়েই সিরিজের আয়োজন করে বিসিবি।
আর এই সিরিজ ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকল বাংলাদেশের জন্য। ইতোমধ্যে পাঁচ-ম্যাচ সিরিজের প্রথম তিন ম্যাচ হেরেছে ক্রিকেট বিশ্বের পরাশক্তি অস্ট্রেলিয়া। ঐতিহাসিক এই সিরিজ জয়ের পর বাংলাদেশ দলের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ক্রিকেটবিশ্ব।
বাংলাদেশ দলের তরুণ ক্রিকেটারদের প্রশংসা করছে বিশ্বের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। এর মধ্যে ভারতীয় গণমাধ্যম ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ বিশেষভাবে তরুণ প্রতিভা আফিফ হোসেনের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।সংবাদমাধ্যমটি আফিফকে নিয়ে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তা তুলে ধরা হলো:-
করোনায় গোটা বাংলাদেশ বিধ্বস্ত। হাসপাতালগুলোতে মৃত্যু-মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। টানা লকডাউনেও করোনার লাগাম টানা যাচ্ছে না। গৃহবন্দি অবস্থায় লোকজন হাঁপিয়ে উঠেছেন। এমন পরিস্থিতিতে খেলা গৌণ হতে বাধ্য। কিন্তু এই দুঃসময়ে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি সিরিজটি যেন আনন্দের উপলক্ষ এনে দিল। করোনার দুঃসময়ে গোটা দেশে আনন্দের হিল্লোল এনে দিলেন বাংলাদেশের জাতীয় দলের তারকারা।
দুই সিনিয়র তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিম নেই। দুই স্থপতির অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশ দল কেমন করে এ নিয়ে শঙ্কা ছিলই। মিচেল স্টার্ক-জশ হ্যাজেলউড-অ্যাডাম জাম্পাদের কিভাবে সামলাবে তরুণেরা? দলে অভিজ্ঞ বলতে যে কেবল সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ এবং মুস্তাফিজুর রহমান! বাকি সবাই তো তরুণ। তারুণ্যের দীপ্তি থাকলেও অভিজ্ঞতায় যে অনেকটাই পিছিয়ে।
অতীতে একাধিকবার তরুণরা বড় মঞ্চে নিজেদের প্রমাণ করতে পারেননি। অস্ট্রেলিয়ার মত প্রবল পরাক্রমশালী দলের বিপক্ষে তারা যে রূপকথা গড়তে পারবেন, এমন আশাও অনেকে করেননি। তবে মাঠে বল গড়াতেই অতীত ব্যর্থতার নিদর্শন মুছে তরুণেরা নিজেদের ছাপ রাখতে শুরু করেছেন। সিরিজ জয় এখনো বাকি। তবে প্রথম দুই ম্যাচেই বাংলাদেশর তরুণ ক্রিকেটাররা অন্তত বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন, তাদের ওপরে নির্দ্বিধায় ভরসা রাখা যায়।
তারুণ্যের দীপ্তিতে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচেই উজ্জ্বল হয়ে উঠেছেন হ্যাংলা-পাতলা গড়নের ছোটখাটো আফিফ হোসেন ধ্রুব। দূর থেকে দেখে মনে হয় ছেলেটা দুর্বল প্রকৃতির। একটু ধাক্কা দিলেই পড়ে যাবেন! এই দুর্বল প্রকৃতির ছেলেটাই মানসিকভাবে যে এত দৃঢ় কে জানত! কে স্টার্ক, কে হ্যাজেলউড, কে জাম্পা-কোনও হেলদোলই নেই! বল দেখা আর সেই অনুযায়ী উইলোর চলন- ক্রিকেটের এমন সরল দর্শনে বিশ্বাস করেই রাতারাতি ঘরে ঘরে পরিচিত হয়ে উঠেছেন আফিফ।
যাইহোক, দলটার নাম যখন অস্ট্রেলিয়া, সেই দলের বিরুদ্ধে এমন নির্ভার ব্যাটিং কিভাবে সম্ভব? এই প্রশ্নটা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-র পক্ষ থেকে ছুঁড়ে দেওয়া হয়েছিল বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (বিকেএসপি) ক্রিকেট উপদেষ্টা নাজমুল আবেদীন ফাহিমের কাছে। সাকিব-মুশফিকের মত আফিফও এই বিকেএসপিতে অর্ধযুগ ধরে ক্রিকেটের পাঠ নিয়েছেন। যে কারণে লম্বা সময় আফিফকে বেড়ে উঠতে দেখেছেন নাজমুল আবেদীন।
তিনি বলছিলেন, “ও (আফিফ) বোধহয় বাংলাদেশ দলে হাতেগোনা দু-একজনের মধ্যে একজন যে মাঠের যেকোনো প্রান্তে শট হাঁকাতে পারে। হালকাপাতলা হলেও পাওয়ার হিটিং-ই ওর ব্যাটিংয়ের মূল বৈশিষ্ট্য। ও চাইলেই বিভিন্ন জায়গায় শট খেলতে পারে, বিগ হিট করতে পারে। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে ওকে সবসময় এমন একটা জায়গায় খেলতে হয়েছে যেখানে ও বড় ইনিংস খেলার সুযোগ কখনও পায়নি।”
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ছয় নম্বরে নেমে সবসময় বড় ইনিংস খেলার সুযোগ কমই থাকে। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে প্রথম ম্যাচে ১৭ বলে অপরাজিত ২৩ রান করে বাংলাদেশের জয়ে অবদান রেখেছিলেন আফিফ। দ্বিতীয় ম্যাচে ৩১ বলে অপরাজিত ৩৭ করে বাংলাদেশের ৫ উইকেটের জয় নিশ্চিত করে তবেই মাঠ ছেড়েছেন।
নাজমুল আবেদীন বলছিলেন, “টি-টোয়েন্টিতে এমনিতেও বড় ইনিংস খেলার সুযোগ খুবই কম। তারপরেও দুটো ম্যাচে ও খুব সংগঠিতভাবে খেলার চেষ্টা করেছে। এই জায়গাটিতে প্রথমদিকে কিছুটা ঘাটতি ছিল। এখন আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে। বিশেষ করে জিম্বাবুয়ে সিরিজের পর থেকে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টাটা দেখতে পাচ্ছি এবং তার ফলও দেখলাম। এখন দেখতে হবে এই সাফল্যগুলো ওকে কিভাবে অনুপ্রেরণা জোগায় আগামীদিনে।”