বিশ্ব নন্দিত শিশু-সাহিত্যিক ও রূপকথার জাদুকর হ্যান্স ক্রিস্টিয়ান অ্যান্ডারসন কি তবে লোকান্তর থেকে ১৪৬ বছর পর আবারো পৃথিবীতে ফিরে এসেছিলেন! নিজ দেশ ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে বসে কি তার অশরীরী আত্মা ডেনিশ ফুটবলারদের উপর ভর করেছিল! তাই যদি না হয় তাহলে বিদায়ের দ্বারপ্রান্ত থেকে কিভাবে তারা ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের নকআউট পর্বে চলে গেল! রাত জেগে যারা ডেনমার্ক রূপকথার সাক্ষী হননি; তারা আসলেই হতভাগা।
সোমবার (২১ জুন) বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাতে কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত ম্যাচের ১৮ মিনিটে ভুল পাসে বল পেয়ে গোলের আশা জাগিয়েছিল রাশিয়া। রোমান যবনিনের পাসে বল পেয়ে আলেক্সান্দ্র গোলোভিনের কিক ডেনিশ গোলরক্ষক রক্ষা করেন। খানিক পর মারিও ফেরনান্দেসের শট পোস্টের সামান্য উঁচু দিয়ে চলে গেলে আবারো বেঁচে যায় ডেনমার্ক।
২০ মিনিটে আবারো সুযোগ পায় রাশিয়া। আরটেম ডিযইউবার শট পস্র ঘেঁষে বেরিয়ে যায়। নয় মিনিট পর ড্যানিয়েল ওয়াসের অ্যাসিস্টে বল পেয়ে সামান্যর জন্য বল লক্ষ্যে রাখতে না পারায় ডেনমার্ক গোল পায়নি।
খেলার ৩৮ মিনিটে রোমাঞ্চকর এক মুহূর্তের সাক্ষী হয় ফুটবলপ্রেমীরা। ক্রিস্টিয়ান এরিকসেনকে হারিয়ে তেঁতে থাকা ডেনমার্কের একের পর এক করতে থাকা আক্রমণের এক পর্যায়ে ডি বক্সের একটু বাইরে থেকে পিয়েরে ইমিলে হজবজেরজের পাসে বল নিয়েই ডান পায়ের নিখুঁত শটে চোখ ধাঁধানো এক গোল করেন মিকেল ড্যামসগার্ড। সাম্পদোরিয়া ক্লাবের হয়ে খেলা এই ফুটবলারের এটি জাতীয় দলের হয়ে তৃতীয় গোল।
তিন মিনিট পর জান্নিক ভেস্তেরগার্ডের হেড অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে ডেনমার্ক ব্যবধান দ্বিগুণ করতে পারেনি। নির্ধারিত সময়ের শেষ মিনিটে ড্যামসগার্ড আবারো গোলের সুযোগ পেলেও তার কিক পোস্টের উপরের জালে জড়ায়।
৫৯ মিনিটে রাশিয়ান এক খেলোয়াড় কি মনে করে গোলরক্ষকের কাছে দিলেন ব্যাক পাস। আর তাতেই সর্বনাশ! ডি বক্সের কাছে থাকা ডেনিশম্যান ইউসুফ পউলসেন বল রিসিভ করেই বাঁ পায়ের শটে লক্ষ্যভেদ করে ডেনমার্কের দর্শকদের উন্মাদনাকে অসীম করে তোলেন।
৭০ মিনিটে ডেনমার্কের ডি বক্সে এক রাশিয়ান খেলোয়াড় পড়ে গেলে রেফারি পেনাল্টির বাঁশি বাজিয়ে দেন। ডেনিশ ফুটবলাররা রেফারিকে বোঝানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। রেফারি ভিএআরের শরণাপন্ন হননি। যদিও টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় এটি আসলে ফাউল ছিল না।
ভুল পেনাল্টিতে গোল হজম করলেও ভাগ্যদেবী যে এমন রাতে নিজেই ডেনমার্কের পক্ষে চিত্রনাট্য রচনা করে রেখেছেন, তা যেন ৭৯ মিনিটে এসে সবাই প্রতক্ষ করল। রাশিয়ান গোলরক্ষক পরপর দুইটি দুর্দান্ত গোল সেভ করলেন। অথচ ফিরতি বলে দূরপাল্লার শটে আন্দ্রেয়াস ক্রিসটেনসেন ডান পায়ের জাদু দেখিয়ে নিশানাভেদ করে কোপেনহেগেনের আকাশ-বাতাসকে প্রকম্পিত করে তোলেন। ডাগ আউটে গিয়ে ক্রিসটেনসেন খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফদের আদরে ভেসে যাওয়ার সময় স্টেডিয়ামে কান পাতাই দায় হয়ে উঠেছিল। যে দর্শকরা এরিকসেনের অজ্ঞান হয়ে পড়ায় কেঁদেছিল, তারাই আজ বাঁধনহারা উল্লাসে মেতেছিল জয়ধ্বনি দিয়ে।
ডেনমার্কের উল্লাসের উপলক্ষ তখনো শেষ হয়নি। ৮২ মিনিটে তিন ডিফেন্ডারকে ফাঁকি দিয়ে জোয়াকিম মায়েহলে ডান পায়ের দুরন্ত শটে বল জালে জড়ানোর পর কোপেনহেগেন যেন তাদের জন্য হয়ে ওঠে স্বপ্নপুরী। ঠিক তাই; এরিকসেনের চলে যাওয়ায় যা কয়েকদিন আগে হয়ে উঠেছিল বিষাদের নগরী।
বি গ্রুপে ৩ ম্যাচে ৩ পয়েন্ট পেলেও গোল ব্যবধানের কারণে গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে চলে গেল ডেনমার্ক। সব ম্যাচ জিতে ৯ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন বেলজিয়াম। সমান পয়েন্ট নিয়ে তিনে ফিনল্যান্ড ও চারে বিদায় নেয়া রাশিয়া। ফিনল্যান্ডের ভাগ্য ঝুলছে বাকি গ্রুপের তৃতীয় দলগুলোর অবস্থানের উপর। নকআউট পর্বে ওয়েলসের বিপক্ষে খেলবে ডেনমার্ক।