বিশ্ব খুব দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে—এমন মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ও শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তাঁর মতে, এই রূপান্তরের গতি আমাদের পূর্বানুমান বা কল্পনার চেয়েও বেশি।
মঙ্গলবার কাতারের দোহায় আয়োজিত ‘আর্থনা’ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ইউনূস বলেন, “বর্তমান সময়টি চরম পরিবর্তনের সময়। বহুপাক্ষিক সম্পর্ক বিপদের মুখে, জলবায়ু পরিবর্তন আরও তীব্র হচ্ছে, ভূ-রাজনৈতিক টানাপোড়েন বেড়েছে, আর মানবিক সংকটও আগের চেয়ে গভীরতর হয়েছে।”
তিনি বলেন, “নতুন নীতিমালা, প্রযুক্তি এবং শাসনব্যবস্থা দ্রুত পৃথিবীকে বদলে দিচ্ছে, যা অতীতের অনেক ভবিষ্যদ্বাণীকে অচল করে ফেলেছে।”
এ ধরনের প্রেক্ষাপটে ইউনূস জোর দিয়ে বলেন, “বর্তমান সময় আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সহযোগিতার দাবি রাখে।”
বিশ্ববাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে ইউনূস বলেন, “আমরা সাহস নিয়ে এগিয়ে আসি, এমন এক পৃথিবী গড়ি যেখানে কেউ এতটা দরিদ্র না হয় যে, স্বপ্ন দেখতে না পারে—আর কোনো স্বপ্ন এত বড় না হয় যে তা অর্জন করা সম্ভব না হয়।”
তিনি বলেন, “ভবিষ্যৎ আমাদের জন্য প্রস্তুত কোনো উত্তরাধিকার নয়; বরং এটি আমরা নিজেরা তৈরি করি। এবং সবারই এখানে নিজ নিজ ভূমিকা রয়েছে।”
প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ইউনূস বলেন, সামনে যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তা নিঃসন্দেহে জটিল। তবে মানবজাতির উদ্ভাবনী শক্তি, সহমর্মিতা এবং একসঙ্গে কাজ করার ক্ষমতাও অনন্য।
কাতারে আয়োজিত আর্থনা সম্মেলনের ভূয়সী প্রশংসা করে তিনি বলেন, “এই আয়োজন প্রমাণ করে, কীভাবে একটি দেশ উদ্ভাবন, ঐতিহ্য ও অংশীদারত্বের মাধ্যমে জলবায়ু সংকট, সামাজিক বৈষম্য এবং ভবিষ্যতের কর্মসংস্থানকে মোকাবিলা করতে পারে।”
নিজের মূল বক্তব্যে ইউনূস সামাজিক ব্যবসা, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি এবং মাইক্রোফাইন্যান্সের গুরুত্ব তুলে ধরেন—যার মাধ্যমে প্রান্তিক জনগণের জন্য টেকসই উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সুযোগ তৈরি সম্ভব।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ আজ এমন এক মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে যেখানে নতুন একটি সামাজিক চুক্তি গঠনের সুযোগ এসেছে। এটি হবে এমন এক চুক্তি, যেখানে রাষ্ট্র ও জনগণ, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম, ন্যায়বিচার, মর্যাদা, ঐতিহ্য ও সমতার ভিত্তিতে একসঙ্গে একটি টেকসই ভবিষ্যৎ নির্মাণে কাজ করবে।”
বিশ্বে একটি আশার বাতিঘর হিসেবে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করার আহ্বান জানিয়ে ইউনূস বলেন, “আমাদের বন্ধু ও অংশীদারদের প্রতি আহ্বান থাকবে—তারা যেন অন্তর্ভুক্তিমূলক সামাজিক চুক্তি পুনর্গঠনে পাশে দাঁড়ান এবং প্রান্তিক জনগণের ক্ষমতায়নে সামাজিক ব্যবসা ও অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে টেকসই সমাধানের পথ খুঁজে বের করেন।”
দ্বিতীয়বারের মতো ‘আর্থনা’ সম্মেলন আয়োজন করায় কাতার ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন শেখ মোজা বিনতে নাসের এবং ভাইস চেয়ারপারসন ও সিইও শেখ হিন্দ বিনতে হামাদ আল থানিকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
এ বছরের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য—‘আমাদের উত্তরাধিকার গড়ে তোলা: স্থায়িত্ব, উদ্ভাবন ও ঐতিহ্যবাহী জ্ঞান।’ এই আয়োজনের মাধ্যমে কাতারের আবহাওয়া, সংস্কৃতি ও প্রতিবেশগত বৈচিত্র্যকে কাজে লাগিয়ে টেকসই উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করা হচ্ছে।