যশোরের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ, ভবদহের জলাবদ্ধতা সমস্যা স্থায়ীভাবে সমাধানের উদ্যোগে মাঠপর্যায়ে সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন সরকারের তিন উপদেষ্টা। আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ভবদহ স্লুইসগেটের ২১ ভেন্ট এলাকায় যান তাঁরা।
পরিদর্শনকারী দলের সদস্য ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, এবং স্বরাষ্ট্র ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তাঁদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবরাও উপস্থিত ছিলেন।
পরিদর্শন শেষে ভবদহ কলেজ মাঠে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, ভবদহের জলাবদ্ধতা রোধে এবার বর্ষার আগেই সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে নদী খননের কাজ শুরু হবে। সেচপাম্পগুলোর জন্য পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ বিদ্যুৎ বিল ৪৬ শতাংশ কমিয়েছে। কৃষি ব্যাংক থেকেও এ অঞ্চলের কৃষকদের ঋণের সুদ মওকুফের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ২০০৫ সালেই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব ছিল, কিন্তু সেসময় সরকারের সদিচ্ছার অভাব ছিল। বর্তমানে সরকার স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই (ফিজিবিলিটি স্টাডি) শুরু করেছে। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মতামত নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এর আগে সকাল ১০টার দিকে তিন উপদেষ্টা হেলিকপ্টারে যশোরের অভয়নগরের নওয়াপাড়া সরকারি কলেজ মাঠে অবতরণ করেন এবং ধানক্ষেত ঘুরে দেখেন। ভবদহবাসী এ সময় প্ল্যাকার্ড হাতে স্থায়ী সমাধান ও দ্রুত টিআরএম চালুর দাবি জানান।
ভবদহ অঞ্চলটি যশোর জেলার অভয়নগর, মনিরামপুর ও কেশবপুর এবং খুলনা জেলার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার অংশ নিয়ে গঠিত। এলাকাটি মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদীর নাব্যতা হ্রাসের ফলে চরম জলাবদ্ধতায় ভুগছে। বর্ষাকালে ফসল, মাছের ঘের, ঘরবাড়ি, স্কুল, মসজিদসহ শতাধিক গ্রাম ডুবে থাকে পানিতে। প্রায় ৪ লাখ মানুষকে আশ্রয় নিতে হয় মহাসড়ক, বিদ্যালয় কিংবা আশ্রয়কেন্দ্রে।
চলতি চার দশকে প্রায় ৬৫০ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হলেও সমস্যা সমাধান হয়নি। স্থানীয়দের অভিযোগ, আগের সরকারগুলোর জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তাদের দুর্নীতির কারণেই প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যকর হয়নি। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট (টিআরএম) চালু এবং আমডাঙ্গা খালের সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছেন।