ইসরায়েলের সাথে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্পর্ক একটি দোধারী তলোয়ার হিসেবে কাজ করছে।

আন্তর্জাতিক

হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে গত সোমবার প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকের শুরুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলের প্রতি তাঁর বন্ধুত্বের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “আপনারা জানেন, আমরা ইসরায়েলের বন্ধু। আমি বলব, ইসরায়েল কখনোই যা ভাবতে পারেনি, আমি সেই অর্থে শ্রেষ্ঠ প্রেসিডেন্ট।” অনেক ইসরায়েলি হয়তো তাঁর এই মন্তব্যের সঙ্গে একমত হবেন।

ট্রাম্প আরো বলেন, ইসরায়েল কঠিন প্রতিবেশী দেশ দ্বারা পরিবেষ্টিত একটি রাষ্ট্র এবং “আমরা তাদের সাহায্য করছি, তেমনি তারা আমাদের অনেক সাহায্য করেছে।” এই পারস্পরিক সম্পর্ক প্রায়শই উপেক্ষিত হয় এবং তাঁর এই মন্তব্য অবশ্যই ইতিবাচকভাবে গ্রহণযোগ্য।

এরপর নেতানিয়াহু ট্রাম্পের প্রশংসা করে বলেন, “আপনি ইসরায়েল রাষ্ট্রের এক অসাধারণ বন্ধু; আপনি আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, আমাদের সঙ্গে আছেন, আপনি আমাদের জীবনের একজন মহান বন্ধু।” কিছুক্ষণ পরই ট্রাম্প ঘোষণা করেন, যুক্তরাষ্ট্র আগামী শনিবার থেকে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা শুরু করবে। এটি প্রশ্ন তুলে, “ইসরায়েলের শ্রেষ্ঠ বন্ধু কি এমনভাবে আচরণ করেন?”

নেতানিয়াহু ইরানের সঙ্গে আলোচনা শুরুর খবর শুনে তাঁর সহকারীদের দিকে একবার তাকান, তবে কোনো প্রতিবাদ বা উদ্বেগ প্রকাশ করেননি। এই ঘটনা এবং নেতানিয়াহুর নীরবতা—দুটোই নির্দেশ করে যে, (বারাক) ওবামার আমলের তুলনায় এখন যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সম্পর্ক অনেক ভিন্ন। ওবামার সময়েই যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ইরানের সঙ্গে পরমাণু ইস্যুতে সরাসরি আলোচনা শুরু করেছিল, যা ইসরায়েলের অজান্তে হয়েছিল।

এটি বড় পার্থক্য চিহ্নিত করে। ওবামা ইসরায়েলকে অন্ধকারে রেখেছিলেন এবং সেই আলোচনা শেষে ২০১৫ সালের ইরান পরমাণু চুক্তির দিকে এগিয়ে যায়, যদিও ইসরায়েলের তীব্র আপত্তি ছিল। অন্যদিকে, ট্রাম্প শুরুতেই ইসরায়েলকে ইরানের সঙ্গে আলোচনা করার অভিপ্রায় জানিয়েছিলেন, ফলে ইসরায়েলকে কিছু মতামত দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

এটি একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এবং নেতানিয়াহুর মৃদু প্রকাশ্য প্রতিক্রিয়া ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করে। এবার কোনো ইসরায়েলি ‘শীর্ষ কর্মকর্তা’ সাংবাদিকদের সামনে এগিয়ে এসে বলেননি যে, ইরানের সঙ্গে আলোচনা ইরানকে সুবিধা দিতে পারে। নেতানিয়াহু বা তাঁর আশপাশের কেউ এসব উদ্বেগ প্রকাশ করেননি। কেন? কারণ ট্রাম্প গত জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এক অকৃত্রিম ইসরায়েল সমর্থক হিসেবে প্রমাণিত হয়েছেন। তবে সেই সমর্থনের মূল্যও রয়েছে। ইসরায়েলের জন্য ট্রাম্প যা করেছেন, তাতে “না” বলা এখন রাজনৈতিকভাবে অকল্পনীয় হয়ে পড়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে, যদি ওবামা বা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইরানের সঙ্গে আলোচনা শুরু করতেন, তাহলে নেতানিয়াহু ও তাঁর মিত্ররা তা তীব্রভাবে সমালোচনা করতেন, কিন্তু ট্রাম্পের ক্ষেত্রে তা হয়নি। এটি ইঙ্গিত দেয় যে, এমনকি সর্বোচ্চ বন্ধুত্বেও কিছু শর্ত থাকে—এক্ষেত্রে সেই শর্ত হলো আপত্তি জানানোর সুযোগ না পাওয়া।

এদিকে, আজকের দিনে রিপাবলিকানরা হোয়াইট হাউস ও কংগ্রেস উভয়েই নিয়ন্ত্রণ করছে, যার ফলে নেতানিয়াহু আর কংগ্রেসের মিত্রদের কাছে প্রেসিডেন্টের নীতি পরিবর্তন করতে যেতে পারবেন না। ট্রাম্পের অধীনে ইসরায়েলের জন্য অকুণ্ঠ সমর্থন থাকলেও, সেই সমর্থন কিছুটা হলেও স্বাধীনতার বিনিময়ে অর্জিত।

ওবামার সময় যেখানে নেতানিয়াহু প্রকাশ্যে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিলেন, আজ তা আর দেখা যাচ্ছে না। ওয়াশিংটনে শক্তিশালী সমর্থনকারী প্রেসিডেন্ট থাকা ইসরায়েলের জন্য একটি বড় সুবিধা, কিন্তু এই সুবিধার একটি মূল্যও আছে—ভিন্নমত প্রকাশের সুযোগ কমে যাওয়া এবং ওয়াশিংটনের সঙ্গে মতপার্থক্য হলে ইসরায়েলের রেডলাইনগুলো তুলে ধরার পরিসর সংকুচিত হয়ে যাওয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *