গ্রামীণ সড়ক অবকাঠামো উন্নয়ন এবং গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণের জন্য সরকার ৩ হাজার কোটি টাকা তহবিল সংগ্রহ করতে ইসলামি শরিয়াহ ভিত্তিক আর্থিক উপকরণ ‘সুকুক বন্ড’ ইস্যু করেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সুকুক বন্ডের নিলামে এ টাকা সংগ্রহ করা হয়।
সুকুক হলো একটি ইসলামি বন্ড, যা সুদমুক্ত বিনিয়োগের একটি মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সরকার এই বন্ডের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করে দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। এই উদ্যোগের উদ্দেশ্য শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বিনিয়োগের বিকল্প সুযোগ সৃষ্টি করা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের শরিয়াহ অ্যাডভাইজরি কমিটির অনুমোদনের পর ৭ বছর মেয়াদি সুকুক বন্ড ইস্যুর ঘোষণা দেওয়া হয়। এ বন্ডের বার্ষিক ভাড়া হার ৯.২৫% নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সুকুক বন্ডে ১০ হাজার ৯২৫ কোটি টাকার বিড জমা পড়েছে, যা ইস্যুর তুলনায় ৩.৬৪ গুণ বেশি। এতে বিনিয়োগকারীদের ব্যাপক আগ্রহ প্রকাশ পেয়েছে এবং সুকুক বন্ডের বরাদ্দ যথাযথভাবে বিতরণ করা হয়েছে।
এছাড়াও, সুকুকের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহের সুবিধা হলো এটি ইসলামী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্বৃত্ত অর্থ উৎপাদনশীল খাতে ব্যবহার করার সুযোগ দেয়। বিশেষত বাংলাদেশে শরিয়াহ ভিত্তিক বিনিয়োগ পদ্ধতি জনপ্রিয় হচ্ছে, যা সুকুক বন্ডের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়িয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষণায় বলা হয়েছে, সুকুক বন্ডের মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ গ্রামীণ সড়ক যোগাযোগ উন্নয়ন, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, কৃষি পণ্য পরিবহন সহজতর করা, পরিবহন ব্যয় কমানো এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি—এসব লক্ষ্য অর্জনে ব্যবহার হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেছেন, “সুকুক বন্ডের মাধ্যমে ইসলামী মূল্যবোধের ভিত্তিতে বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি নিরাপদ বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা ভবিষ্যতে বিনিয়োগের পরিসর আরও বিস্তৃত করবে।”
সুকুক বন্ডে অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশ সরকারের নতুন কাঠামো নির্ধারণ করেছে। এতে ৭০% বরাদ্দ রাখা হয়েছে শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য, ১০% কনভেনশনাল ব্যাংকের ইসলামিক শাখা ও উইন্ডোজের জন্য এবং ২০% বরাদ্দ রাখা হয়েছে ব্যক্তিগত বিনিয়োগকারীদের জন্য। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা তাদের বৈদেশিক মুদ্রা হিসাব (এনএফসিডি) বা অনিবাসী টাকা হিসাবের (এনআইটিএ) মাধ্যমে সুকুক বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারবেন।
এই সুকুক বন্ডের মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ গ্রামীণ সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বর্তমানে ৮টি বিভাগের ৫৮টি উপজেলায় ৮২টি সেতু নির্মাণের কাজ চলছে, যা কৃষিপণ্য পরিবহন সহজতর করবে এবং কৃষকদের লাভ বাড়াবে।