যুক্তরাজ্যের ওয়েলসে রাজনৈতিক অঙ্গনে জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার এবং দক্ষ নেতৃত্ব নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ইচ্ছাকৃত মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি ওয়েলসের পার্লামেন্ট সেনেভে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছে, যা আগামী বছরের মধ্যে আইন হিসেবে কার্যকর করার পরিকল্পনা রয়েছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম *দ্য গার্ডিয়ান*-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনেভের মানদণ্ড বিষয়ক কমিটি রাজনৈতিক সংস্কারের অংশ হিসেবে এমন পদক্ষেপের প্রস্তাব করেছে। বিশেষ করে, নির্বাচনে সুবিধা নেওয়ার উদ্দেশ্যে যারা মিথ্যা তথ্য দেন, তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।
ওয়েলস সরকার রাজনীতিতে মিথ্যাচারকে বেআইনি ঘোষণা করতে ‘বিশ্বের জন্য দৃষ্টান্তমূলক’ আইন প্রণয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং মানদণ্ড বিষয়ক কমিটিকে এর উপযুক্ত ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
কমিটির সদস্যরা সেনেভের আচরণবিধি আরও কঠোর করার প্রস্তাব দিয়েছেন, যা সদস্যদের ভেতরে ও বাইরে উভয় ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে। তাদের মতে, আচরণবিধিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা উচিত যে, কোনো সদস্য ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর তথ্য উপস্থাপন করতে পারবেন না।
যদি কোনো সদস্য মিথ্যাচার করেন, তবে তাকে সেই বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে এবং সংশোধিত বক্তব্য পার্লামেন্টের ওয়েবসাইটে তাঁর প্রোফাইলে প্রকাশ করা হবে। পাশাপাশি, পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুযায়ী তাঁকে সাময়িক বরখাস্তও করা হতে পারে। গুরুতর ক্ষেত্রে ভোটাররা ‘রিকল’ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাঁকে অপসারণ করে তাঁর দলের অন্য কাউকে মনোনীত করতে পারবেন।
তবে নির্বাচিত রাজনীতিকদের মিথ্যাচারকে সরাসরি আইনি অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা হবে কি না, সে বিষয়ে কমিটি এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি, কারণ এটি বাস্তবায়ন করা জটিল হতে পারে। বর্তমানে ওয়েলসে একটি আইন রয়েছে, যা রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীর চরিত্র বা আচরণ সম্পর্কে মিথ্যা প্রচারণাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে। কমিটি এই আইনের আওতা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে, যাতে কোনো প্রার্থী নির্বাচনী সুবিধার জন্য যেকোনো ধরনের মিথ্যা তথ্য দিলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হয় এবং অভিযুক্ত প্রার্থী পুলিশের তদন্ত ও নির্বাচনী আদালতের বিচারের মুখোমুখি হন।
ওয়েলসে এই উদ্যোগ বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে, কারণ আগামী বছরের নির্বাচনে ভোটিং পদ্ধতিতে পরিবর্তন আসছে এবং আসনসংখ্যা বাড়ছে। এতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা আরও তীব্র হবে, যেখানে রিফর্ম ইউকে পার্টির উল্লেখযোগ্য সাফল্য পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পার্লামেন্টের মানদণ্ড বিষয়ক কমিটির চেয়ার হান্নাহ ব্লিথিন বলেছেন, “জনগণ যেন তাদের প্রতিনিধিদের বিশ্বাস করতে পারেন, তা নিশ্চিত করা জরুরি। আমাদের প্রতিবেদনে কঠোর সুপারিশ দেওয়া হয়েছে, যাতে প্রত্যেক প্রার্থী বুঝতে পারেন—ইচ্ছাকৃত প্রতারণা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”
ইনস্টিটিউশন ফর কনস্টিটিউশনাল অ্যান্ড ডেমোক্রেটিক রিসার্চের স্যাম ফাউলস মন্তব্য করেছেন, “এই প্রতিবেদন সেই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করেছে, যেখানে বলা হয়—রাজনীতিবিদদের সততা নিশ্চিত করা কঠিন কাজ। অন্যান্য পেশাজীবীদের জন্য যেমন সততা অপরিহার্য, রাজনীতিবিদদেরও সেই একই মান বজায় রাখা উচিত।”
ওয়েলসের থিংকট্যাংক *কমপ্যাশন ইন পলিটিকস*-এর সহ-পরিচালক জেনিফার ন্যাডেল বলেছেন, “ওয়েলস রাজনৈতিক প্রতারণার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অগ্রগামী ভূমিকা নিচ্ছে। তবে এখনো ক্ষমতাসীনদের ফৌজদারি শাস্তির আওতায় আনার সুপারিশ করা হয়নি। বরং বিদ্যমান মানদণ্ড আরও কঠোর করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। আমরা চাই, এটি আরও এক ধাপ এগিয়ে যাক। সেনেভ যখন পদক্ষেপ নিচ্ছে, তখন ওয়েস্টমিনস্টারকেও একই পথে এগোনো উচিত।”
ওয়েলস সরকারের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, সরকার প্রতিবেদনের সুপারিশ ও পর্যালোচনার পর আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাবে।