বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ১১ জেলায় ২ হাজার কোটি টাকার পুনর্বাসন প্রকল্প

জাতীয় দেশজুড়ে বাংলাদেশ

সরকার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ১১ জেলার পুনর্বাসনে ১,৯০৯ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করেছে

ভারত থেকে আসা বন্যা ও ভারী বর্ষণের ক্ষতি প্রশমনে দেশের উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ১১টি জেলার জনগণকে সুরক্ষা দিতে সরকার একটি নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। ‘বাংলাদেশ সাসটেইনেবল রিকভারি প্রিপারেডনেস অ্যান্ড রেসপনস’ নামে এই প্রকল্পটির প্রস্তাব স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রস্তুত করে পরিকল্পনা কমিশনে জমা দেওয়া হয়।

প্রকল্পটি চলতি মাসের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভায় উপস্থাপন করা হয়, যেখানে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য সিনিয়র সচিব ড. নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। প্রাথমিকভাবে প্রকল্পের বাজেট ২,১৪০ কোটি টাকা ধরা হলেও সভায় এটি সংশোধন করে ১,৯০৯ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। এই অর্থায়নের মধ্যে সরকার ২৬২ কোটি টাকা ব্যয় করবে, আর ১,৬৪৭ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা হিসেবে আসবে। প্রকল্পটি ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে শুরু হয়ে ২০৩১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত চলবে।

প্রকল্পের মূল কার্যক্রম

সিনিয়র সচিব ড. নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া জানান, ২০২৩ সালের ভয়াবহ বন্যায় দেশের উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রায় ৫৮ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন পুনর্গঠন ও অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে।

প্রকল্পের মূল কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে—
– জরুরি ভিত্তিতে ৬০০ কিলোমিটার রাস্তা সংস্কার
– ১৫৫ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক পুনর্বাসন
– ৬৪০ মিটার সেতু পুনর্নির্মাণ
– ৫৩৩ মিটার বক্স কালভার্ট পুনর্নির্মাণ
– ৩৩৬টি বিদ্যালয়ের পুনর্বাসন
– ৫৪টি বিদ্যমান আশ্রয়কেন্দ্রের সক্ষমতা বৃদ্ধি
– ১১টি বহুমুখী দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্রের অসম্পূর্ণ নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা
– ২৫টি জলবায়ু-সহনশীল আশ্রয়কেন্দ্র পুনর্নির্মাণ
– ৪ হাজার সোলার স্ট্রিট লাইট স্থাপন
– ৬৭২টি বিদ্যালয়ে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ
– ৫০০টি বজ্রপাত প্রতিরোধক ব্যবস্থা স্থাপন

প্রকল্প বাস্তবায়ন ও অর্থায়ন

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (LGED) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পের আওতায় ক্ষতিগ্রস্ত ১১ জেলার ৭৩টি উপজেলার ৫২৮টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালিত হবে। সিলেট অঞ্চলে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (ADB), উত্তরাঞ্চলে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (JICA) এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিশ্বব্যাংক থেকে আর্থিক সহায়তার প্রস্তাব করা হয়েছে।

বন্যার ক্ষয়ক্ষতি ও পুনর্বাসনের প্রয়োজনীয়তা

২০২৩ সালের অক্টোবরে ভারতের ত্রিপুরা থেকে আসা বন্যার পানিতে ১১টি জেলার ৫৮ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এখনো ১ লাখের বেশি মানুষ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে, আর ৫ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। প্রায় ৩,৫০০ পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে বসবাস করছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে—নোয়াখালী, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চট্টগ্রাম।

এই বন্যায় গ্রামীণ অবকাঠামো, কৃষি খাত ও মৎস্য চাষ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৩ লাখ হেক্টরের বেশি ফসলি জমি নষ্ট হয়েছে, যা কৃষকদের মারাত্মক আর্থিক সংকটে ফেলেছে। মৎস্য খাতে প্রায় ১২২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং প্রাণিসম্পদ খাতে ৩৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতির হিসাব করা হয়েছে।

এই প্রকল্পের মাধ্যমে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর জীবনমান পুনরুদ্ধার ও টেকসই অবকাঠামো গড়ে তোলার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *