রাওয়ালপিন্ডিতে বাংলাদেশের বাঁচা-মরার লড়াই
রাওয়ালপিন্ডি ক্রিকেট স্টেডিয়াম এখন বাংলাদেশের জন্য আশার বাতিঘর। ভারতের বিপক্ষে দুবাইয়ে হারের পর সেমিফাইনালের স্বপ্ন জিইয়ে রাখতে আজ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয় ভিন্ন অন্য কিছু ভাবার সুযোগ নেই। হার মানেই টুর্নামেন্ট থেকে বিদায়ের শঙ্কা।
বাংলাদেশের জন্য আজকের ম্যাচ একরকম বাঁচা-মরার লড়াই। রাওয়ালপিন্ডির ফ্ল্যাট উইকেটে বড় সংগ্রহ গড়ার বা তাড়া করার চ্যালেঞ্জ নিতে হবে টাইগারদের। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে এই ভেন্যুতে এটিই প্রথম ম্যাচ, যেখানে ফ্লাডলাইটের আলোয় শীতল কন্ডিশনে পেসাররা কিছুটা সুবিধা পেলেও পরিসংখ্যান বলছে, ব্যাটসম্যানদের জন্যই এখানে রান উৎসবের সম্ভাবনা বেশি। নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক মিচেল স্যান্টনার যেমন উইকেটের ব্যাটিং-বান্ধব চরিত্রের কথা বলেছেন, তেমনি বাংলাদেশ কোচ ফিল সিমন্সও জানিয়েছেন, ম্যাচ জিততে হলে দলকে ৩০০-এর বেশি রান তুলতে হবে।
তবে বড় স্কোর করার সামর্থ্য কি বাংলাদেশের আছে? সিমন্স মনে করেন, বাংলাদেশ সে ক্ষমতা রাখে। তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ৩০০ পেরোনো রান তোলার উদাহরণ টেনেছেন। যদিও তখনও জয় আসেনি, কারণ প্রতিপক্ষকে আটকানোর কাজটা ঠিকমতো হয়নি। তাই আজ বাংলাদেশকে শুধু বড় সংগ্রহ নয়, বোলিংয়েও ধারাবাহিক হতে হবে।
ভারতের বিপক্ষে আগের ম্যাচে মাত্র ৩৫ রানেই ৫ উইকেট হারানো বাংলাদেশের টপ অর্ডার আজ জ্বলে উঠতে না পারলে কঠিন পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে। যদিও কোচ সিমন্স বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত নন। বরং তিনি এই মাঠে বাংলাদেশের অতীত সফলতা কাজে লাগাতে চান। গত বছর পাকিস্তানের মাটিতে স্বাগতিকদের হোয়াইটওয়াশ করার কীর্তি টাইগারদের আত্মবিশ্বাস জোগাতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসেও সুখস্মৃতি আছে বাংলাদেশের। ২০১৭ সালে কার্ডিফে কিউইদের হারিয়েছিল মাহমুদউল্লাহ-মুশফিকরা। দুই দলের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মুখোমুখি লড়াইয়ের রেকর্ড এখন ১-১। তবে সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান খুব একটা স্বস্তির নয়। গত ১০ বছরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২১ ওয়ানডেতে বাংলাদেশের জয় মাত্র ৩টি, বাকি ১৭ ম্যাচে জয় কিউইদের।
নিউজিল্যান্ড এরই মধ্যে পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলে এসেছে, যেখানে সব ম্যাচ হয়েছিল লাহোর ও করাচিতে। রাওয়ালপিন্ডির কন্ডিশন বাংলাদেশের তুলনায় তাদের কাছে কিছুটা অপরিচিত হলেও মূল ফোকাস থাকবে মাঠের পারফরম্যান্সে। কিউইদের ভাবনায় এখন শুধু সেমিফাইনাল নিশ্চিত করা, আর সে লক্ষ্যে আজ তারা বাংলাদেশের বিপক্ষে জয় চাইবেই।
স্যান্টনার মনে করেন, উইকেট যদি পুরোপুরি ফ্ল্যাট হয়, তাহলে করাচিতে অনুসৃত পরিকল্পনাই তারা ধরে রাখবে—দীর্ঘ সময় ধরে নির্ভুল লেংথে বল করা এবং ব্যাটিংয়ে ধৈর্য ধরে এগোনো। তবে তিনি সতর্কও করেছেন, বাংলাদেশের দলে কিছু বিধ্বংসী ব্যাটার রয়েছেন, যারা যে কোনো মুহূর্তে ম্যাচের গতিপথ পাল্টে দিতে পারেন।
বাংলাদেশ একাদশে আজ পরিবর্তনের সম্ভাবনাও প্রবল। মাহমুদউল্লাহ ভারতের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ছিলেন না, তবে পাকিস্তানে পৌঁছেই অনুশীলনে যোগ দিয়েছেন। ফিটনেস পরীক্ষায় উতরে গেলে আজ তিনি মাঠে নামতে পারেন। একাদশে তিন পেসার নিশ্চিত হলেও তানজিম সাকিব ও মোস্তাফিজুর রহমানের মধ্যে কে খেলবেন, তা নিয়ে রয়েছে দোটানা। তবে নাহিদ রানার একাদশে ফেরা প্রায় নিশ্চিত।
সব মিলিয়ে, রাওয়ালপিন্ডির ব্যাটিংবান্ধব উইকেটে বাংলাদেশের জন্য আজকের ম্যাচ শুধুই ক্রিকেটীয় লড়াই নয়, এটি সেমিফাইনালের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখার চূড়ান্ত পরীক্ষা। টাইগাররা কি পারবে সেই চ্যালেঞ্জ উতরে যেতে? উত্তর মিলবে মাঠের পারফরম্যান্সেই।