আইসিসি ইভেন্ট যখন আসি আসি করে, তখনই নিউজিল্যান্ডের দেখা যায় রুদ্রমূর্তি। পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে নিউজিল্যান্ড। কিউইরা এবার প্রস্তুতি ম্যাচেও ৩০০-এর বেশি রান তাড়া করে জিতেছে আফগানিস্তানের বিপক্ষে। বিপজ্জনক এই নিউজিল্যান্ডই পড়েছে বাংলাদেশের গ্রুপে।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আগে কন্ডিশনের সঙ্গে নিউজিল্যান্ড দারুণভাবেই নিজেদের মানিয়ে নিয়েছে। পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিয়ে পাকিস্তানের মাঠে হওয়া ত্রিদেশীয় সিরিজের শুরুতেই কাঁপিয়ে দিয়েছে কিউইরা। লাহোরে পাকিস্তানকে লিগ পর্বের প্রথম ম্যাচে ৭৮ রানে হারিয়েছে নিউজিল্যান্ড। পরবর্তীতে করাচিতে প্রোটিয়াদের দেওয়া ৩০৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জিতেছে নিউজিল্যান্ড। এরপর ১৪ ফেব্রুয়ারি ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে পাকিস্তানকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছে।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আগে নিজেদের ঝালিয়ে নেওয়ার আরও একটা সুযোগ পেয়েছে নিউজিল্যান্ড। করাচিতে গত রাতে কিউইরা খেলেছে আফগানিস্তানের বিপক্ষে। ওয়ার্ম আপ ম্যাচ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের খাতায় যোগ হবে না ঠিকই। তবে আফগানদের হারাতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে কিউইদের। ৩০৬ রানের লক্ষ্যে নেমে ৮ উইকেটে ২৩৪ রান হয়ে যায় নিউজিল্যান্ড। বেকায়দায় পড়া কিউইরা এমন পরিস্থিতি থেকেই ১৩ বল হাতে রেখে পেয়েছে ২ উইকেটের জয়।
মূল টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই কিউইরা সব রকম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। শেষের দিকে ঝড় তোলা, বড় লক্ষ্য তাড়া করার সময় স্নায়ুচাপের পরীক্ষা দেওয়া, বোলিং, ফিল্ডিং—সব জায়গাতেই নিউজিল্যান্ড ১০০ তে ১০০। যেখানে লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে ৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ ১০ ওভারে ১২৩ রান যোগ করে ব্ল্যাকক্যাপসরা। সেই ম্যাচেই ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন ফিলিপস। তাদেরই গ্রুপ পর্বের প্রতিপক্ষ বাংলাদেশের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। ২০২৪ সালে তিনটি ওয়ানডে সিরিজ খেলে বাংলাদেশ দুটিতেই হেরেছে। যার মধ্যে রয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ধবলধোলাইয়ের মতো বিব্রতকর ঘটনা। যে উইন্ডিজ এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে দর্শক। আইসিসির ইভেন্টটির আগে উইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজটাই এই সংস্করণে বাংলাদেশের সবশেষ কোন ম্যাচ।
বাংলাদেশের গত বছরের ওয়ানডে হিসেব দিয়ে এই সংস্করণে সব মিলিয়ে পারফরম্যান্সের পরিসংখ্যান নিয়ে আলোচনা করা যাক। ওয়ানডেতে এখন পর্যন্ত এশিয়ার দলটি ২৯ বার ৩০০ পেরিয়েছে। সর্বোচ্চ ৩৪৯ রান বাংলাদেশ করেছে ২০২৩ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। অথচ বর্তমান ওয়ানডে ঘরানায় ৩৫০ রানের লক্ষ্য তাড়া করেও জয়ের ঘটনা ঘটছে অহরহ। এছাড়া এই সংস্করণে সফল রান তাড়ায় বাংলাদেশ দুইবারই করেছে ৩২২ রান এবং দুটিই বিশ্বকাপের মঞ্চে। এশিয়ার দলটি এই স্কোর গড়েছে স্কটল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। যদিও স্কটল্যান্ড, উইন্ডিজ ওয়ানডে সংস্করণে তুলনামূলক দুর্বল। এখানে উদাহরণ হিসেবে টানা যেতে পারে ১২ বছর আগের এক ঘটনা। ২০১৩ সালে ফতুল্লায় নিউজিল্যান্ডের দেওয়া ৩০৮ রান তাড়া করে বাংলাদেশ জিতেছিল ৪ উইকেটে। এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ১২ বছর আগের এই ম্যাচটাই অনুপ্রেরণা জোগাতে পারে বাংলাদেশকে।২০ ফেব্রুয়ারি দুবাইয়ে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু হচ্ছে বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি অভিযান। ২৪ ও ২৭ ফেব্রুয়ারি নিউজিল্যান্ড ও পাকিস্তানের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের শেষ দুই ম্যাচ খেলবেন নাজমুল হোসেন শান্ত-মেহেদী হাসান মিরাজরা। রাওয়ালপিন্ডিতে হবে বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড, বাংলাদেশ-পাকিস্তান এই দুটি ম্যাচ। রাওয়ালপিন্ডির মাঠেও যে রানের বন্যা বয়ে যায়, সেটা গত কয়েক বছরে স্পষ্ট হয়েছে। আইসিসি ইভেন্টের সেমিফাইনালে উঠতে হলে শান্তর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশকে পাড়ি দিতে হবে কঠিন পথ। এর আগে সবশেষ ২০১৭ সালে আয়োজিত চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে বাংলাদেশ খেলেছিল সেমিফাইনাল।