সিএনজি অটোরিকশা: চালকদের সড়ক অবরোধের মুখে বিআরটিএর নির্দেশনা প্রত্যাহার

জাতীয়

সিএনজি চালিত অটোরিকশা মিটারে চলা বাধ্যতামূলক এবং বেশি ভাড়া নিলে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করার নির্দেশনা প্রত্যাহার করেছে বিআরটিএ।

আজ রোববার সকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে এ-সংক্রান্ত একটি বার্তা গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে।

বার্তায় বলা হয়েছে, ফোর স্ট্রোক থ্রি-হুইলার যান সম্পর্কিত বিআরটিএ কর্তৃক ইস্যুকৃত সাম্প্রতিক নির্দেশনাটি আজ রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বাতিল করা হয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবহিত করা হলো এবং অবরোধ প্রত্যাহার করে যান চলাচলে কোনো রকম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করার জন্য ডিএমপির পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হলো।

এর আগে গত মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সিএনজি বা পেট্রলচালিত অটোরিকশার চালক মিটারের বেশি ভাড়া আদায় করলে মামলা দেওয়ার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেয় সরকারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। সড়ক পরিবহন আইনে ভাড়াসংক্রান্ত অপরাধে চালকের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে।

এর প্রতিবাদে আজ সকাল থেকে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন সিএনজি অটোরিকশার চালকেরা। রাজধানীর রামপুরা, মিরপুর ১৪ ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট অবরোধ করেছেন তাঁরা। এতে ভয়াবহ যানজট দেখা দিয়েছে।

চালকেরা নতুন নিয়ম বাতিল, ভাড়া বৃদ্ধি ও পুলিশের হয়রানি বন্ধসহ একাধিক দাবি জানাচ্ছেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা সড়ক অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

বিআরটিএর চিঠিতে বলা হয়েছিল, গ্যাস বা পেট্রলচালিত ফোর-স্ট্রোক থ্রি-হুইলার অটোরিকশার জন্য সরকার নির্ধারিত মিটারের ভাড়ার হারের অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগের বিষয়ে মামলা রুজু করার নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।

আরও বলা হয়, সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮–এর ধারা ৩৫ (৩) অনুযায়ী কোনো কন্ট্রাক্ট ক্যারিয়েজের মালিক বা চালক রুট পারমিট এলাকার মধ্যে যেকোনো গন্তব্যে যেতে বাধ্য থাকবেন এবং মিটারে প্রদর্শিত ভাড়ার অতিরিক্ত অর্থ দাবি বা আদায় করতে পারবেন না। এর ব্যত্যয় হলে আইনের ধারা ৮১ অনুযায়ী অনধিক ছয় মাসের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং চালকের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত হিসাবে দোষসূচক ১ পয়েন্ট কর্তন করার বিধান রয়েছে।

উল্লেখ্য, ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরে চলাচলকারী প্রায় ২৮ হাজার অটোরিকশার জন্য পৃথক নীতিমালা রয়েছে। এসব অটোরিকশাকে কন্ট্রাক্ট ক্যারিয়েজ বা ভাড়ায় চালিত যান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। নীতিমালা অনুসারে, সিএনজি ও পেট্রলচালিত অটোরিকশার ভাড়া ও মালিকের দৈনিক জমা নির্ধারিত রয়েছে।

বর্তমানে অটোরিকশার মালিকের জন্য দৈনিক জমা নির্ধারিত আছে ৯০০ টাকা। তবে চালকদের অভিযোগ, মালিকেরা দিনে দুই বেলায় চালকের কাছে অটোরিকশা ভাড়া দিয়ে ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করেন।

অটোরিকশার বর্তমান সর্বনিম্ন (প্রথম দুই কিলোমিটার) ভাড়া ৪০ টাকা; অর্থাৎ একজন যাত্রী চাইলে ৪০ টাকায় অটোরিকশা ভাড়া করার সুযোগ পাবেন। যাত্রীদের অভিযোগ, ১৫০ টাকার নিচে স্বল্প দূরত্বে যাতায়াত করা যায় না। দুই কিলোমিটারের পরের প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ১২ টাকা নির্ধারিত থাকলেও তা কেউ মানেন না।

২০০৩ সালের দিকে রাজধানী ঢাকা ও বন্দর নগরী চট্টগ্রাম থেকে টু–স্ট্রোক বেবিট্যাক্সি তুলে দিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালু করে তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকার। মিটারে নির্ধারিত ভাড়া ও যাত্রীদের চাহিদামতো গন্তব্যে চলাচল করতে বাধ্য থাকবে—এই ছিল মূল শর্ত। কিন্তু যাত্রীদের অভিযোগ, শর্তগুলো কখনোই মানা হয় না। ভাড়া নির্ধারিত হয় চালকের ইচ্ছেমতো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *