হাসিনা-জয়ের বিরুদ্ধে ৩০০ মিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগ, দুদকের অনুসন্ধান শুরু

জাতীয়

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে দেশত্যাগ করা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা ও তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দুর্নীতি দমন কমিশনের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রটি জানিয়েছে, গতকাল রোববার দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এর আগে, গত ১৭ ডিসেম্বর শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা পরিবারের বিরুদ্ধে ৯টি প্রকল্প থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করে সংস্থাটি। এরই মধ্যে অভিযোগ অনুসন্ধানে পাঁচ সদস্যের টিম গঠন করা হয়েছে।

গত ১৭ আগস্ট গ্লোবাল ডিফেন্স করপোরেশন নামের একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প থেকে হাসিনা পরিবারের ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার দুর্নীতির একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে উঠে আসে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টার নাম।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগে একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থা সম্প্রতি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বিষয়ে একটি প্রাথমিক তদন্ত করে। ২০১৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বনাম রিজভী আহমেদ মামলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের নাম প্রথম নজরে আসে। ওই গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে সজীব ওয়াজেদ জয়ের গুরুতর আর্থিক কেলেঙ্কারির বিষয়টি উন্মোচিত হয়।

এর আগে ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক ও গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প থেকে প্রায় ৫৯ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।

টিউলিপ সিদ্দিক বর্তমানে যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক সচিবের দায়িত্বে রয়েছেন, যা ব্রিটেনের আর্থিক বাজারে দুর্নীতি প্রতিরোধে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ। তবে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুসন্ধান থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, টিউলিপ সিদ্দিক শেখ হাসিনার দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। এই দুর্নীতির অভিযোগে শেখ হাসিনার পরিবার এবং সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও রয়েছেন, যার মধ্যে টিউলিপ সিদ্দিকের মা শেখ রেহানাও জড়িত।

৫ আগস্ট পদত্যাগের পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধসহ বিভিন্ন অভিযোগ আনে। এর পাশাপাশি হাসিনার সরকারের ৪৫ জন সাবেক মন্ত্রী ও কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।

টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তোলেন জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ। ববি হাজ্জাজ দাবি করেছেন, রূপপুর প্রকল্পের জন্য প্রায় এক হাজার কোটি ডলারের একটি চুক্তি করা হয়। কিন্তু টিউলিপ সিদ্দিক চুক্তির মূল্য থেকে আরও ১০০ কোটি ডলার বৃদ্ধি করেন এবং প্রকল্প ব্যয়ের নাম করে এই অর্থ আত্মসাৎ করেন। যার ৩০ শতাংশ টিউলিপ সিদ্দিক নিজে নেন এবং বাকি অংশ তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যদের দেন।

২০১৩ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করেন টিউলিপ সিদ্দিক। এই চুক্তির মাধ্যমে তিনি প্রায় ১০০ কোটি ডলার ব্যক্তিগত খাতে স্থানান্তরিত করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *