কাল শুরু অর্থনৈতিক শুমারি, প্রথমবারের মতো গণনায় বিদেশি কর্মীরা

জাতীয়

এক দশক পর আগামীকাল মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) থেকে শুরু হচ্ছে দেশের চতুর্থ অর্থনৈতিক শুমারির মূল তথ্য সংগ্রহ। ১৫ দিন ব্যাপি এই শুমারির তথ্য সংগ্রহের কাজ চলবে আগামী ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত। সারা দেশে ৯৫ হাজার তথ্য সংগ্রহকারি এবারের শুমারিতে তথ্য সংগ্রহ করবেন।

দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে প্রতি ১০ বছর পর এমন শুমারি করছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। ইতিমধ্যেই প্রচারসহ অন্যান্য প্রস্তুতিও শেষ করা হয়েছে।

শুমারির সফল বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে আজ সোমবার আগারগাঁওয়ে পরিসংখ্যান ভবনে অর্থনৈতিক শুমারি ২০২৪ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তুলে ধরা হয়।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যার ব্যুরোর মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. হামিদুল হক। উপস্থিত ছিলেন প্রকল্প পরিচালক এস এম শাকিল আখতার।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, অর্থনৈতিক শুমারিতে ৭০টি প্রশ্ন উঠে আসবে। এবারই প্রথম ট্যাবের মাধ্যমে ক্যাপি পদ্ধতিতে এই শুমারির তথ্য সংগ্রহ করা হবে। ইতিমধ্যেই লিস্টিংয়ের মাধ্যমে ১ কোটি ২২ লাখ ইউনিট চিহ্নিত করা হয়েছে। সেখান থেকে এবং এর বাইরে থেকেও বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এবার শুমারিতে প্রথমবারের মতো দেশে কতজন বিদেশী কর্মী নিয়োজিত রয়েছেন, তাঁরা কোন ধরনের প্রতিষ্ঠানে কোনো ধরনের পদে কর্মরত এবং নারী–পুরুষ কতজন— সেসব তথ্য তুলে ধরা হবে।

পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, শুমারির কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে শেষ করার জন্য জিওগ্রাফিক্স ইনফরমেশন সিস্টেম (জিআইএস) ও জিও কোড সমন্বয় করে ডিজিটাল ম্যাপ প্রস্তুত করা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহে ব্যবহৃত ট্যাবলেটগুলো মোবাইল ডিভাইস ম্যানেজমেন্ট (এমডিএম) সফটওয়্যার ব্যবহার করে কেন্দ্রীয়ভাবে ডিভাইসগুলো নিয়ন্ত্রণ করা হবে।

মাঠপর্যায় থেকে সংগৃহীত তথ্য সংরক্ষণ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ডাটা সেন্টার কোম্পানি লিমিটেডের (বিডিসিসিএল) সমৃদ্ধ ডেটা সেন্টার ব্যবহার করা হচ্ছে। মাঠ পর্যায় থেকে বিডিসিসিএল হয়ে বিবিএস সার্ভারে আসার আগ পর্যন্ত সংগৃহীত সব তথ্য উপাত্ত গোপন অবস্থায় থাকবে। যার মাধ্যমে পরিসংখ্যান আইন ২০১৩ অনুযায়ী একদিকে তথ্য সংগ্রহে শুমারি কর্মীদের সহযোগিতা করা, অপরদিকে এই আইন দ্বারা জনসাধারণের প্রত্যেকের ব্যক্তিগত তথ্যর নিরাপত্তা শতভাগ নিশ্চিত করা হবে বলে উল্লেখ করেন সচিব মাহবুব হোসেন।

প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এস এম শাকিল আখতার বলেন, মূল শুমারির চূড়ান্ত প্রস্তুতি হিসেবে ইতিমধ্যে প্রকল্প টিম বিভিন্ন প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম যেমন: বিভাগীয় শুমারি সমন্বয়কারী এবং জেলা শুমারি সমন্বয়কারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে উপজেলা–থানা শুমারি সমন্বয়কারী এবং জোনাল অফিসারদের প্রশিক্ষণ প্রদান এবং মাঠ পর্যায়ে ১ লাখ ১৬ হাজার ৬০০ তালিকাকারীদের প্রশিক্ষন ও সার্বক্ষনিক মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম সচিব ড. দিপংকর রায় বলেন, শুমারির তথ্য উপাত্তের গুণগতমান নিশ্চিত করে কর্মকর্তা কর্মচারীদের ৩ ধাপে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রথম ধাপে মাস্টার ট্রেইনারদের প্রশিক্ষণ, দ্বিতীয় ধাপে উপজেলা শুমারি সমন্বয়কারী, জোনাল অফিসারগণ ও আইটি সুপারভাইজারদের প্রশিক্ষণ এবং তৃতীয় ধাপে গণনাকারী ও সুপারভাইজারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

সভাপতির বক্তব্যে মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, বিবিএসের কর্মকর্তারা প্রতিটি ধাপে যথাযথ প্রস্তুতি নিয়েছেন। এবারের অর্থনৈতিক শুমারি তথ্য সংগ্রহ পদ্ধতিকে আরও উন্নত করার জন্য প্রচার এবং প্রশিক্ষণ কার্যক্রম করা হচ্ছে।

এই শুমারির মাধ্যমে দেশের সব ইউনিটকে কাভার করা হবে। অর্থনৈতিক শুমারির এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘অর্থনৈতিক শুমারিতে তথ্য দিন, নতুন বাংলাদেশ বিনির্মানে অংশ নিন’। সারা দেশে ৯০ হাজার গণনাকারি এই শুমারিতে অংশ নেবেন। ডিজিটাল শুমারিতে ১ লাখ ৪০ হাজার ট্যাব ব্যবহার করা হবে। বাংলাদেশকে ১৩টি শুমারিতে ভাগ করা হয়েছে।

দেশের সর্বপ্রথম অর্থনৈতিক শুমারি ১৯৮৬ সালে অনুষ্ঠিত হয়, এরপর ২য় অর্থনৈতিক শুমারি ২০০১ এবং ২০০৩ সালে পর্যায়ক্রমে অনুষ্ঠিত হয়,৩য় অর্থনৈতিক শুমারি ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে বাংলাদেশের ৪র্থ অর্থনৈতিক শুমারি ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *