যুক্তরাষ্ট্রে গত ১০ বছরে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি বেড়েছে প্রায় ৫০ দশমিক ৭৯ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের অফিস অব টেক্সটাইলস অ্যান্ড গার্মেন্টসের (ওটেক্সার) এক প্রতিবেদনে এমন চিত্র দেখা গেছে। ওটেক্সার তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানি করে এমন ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। আর দ্বিতীয় অবস্থানে ভিয়েতনাম এবং প্রথম অবস্থানে রয়েছে চীন।
তবে ২০১৪ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত (১০ বছর) যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানির এই পরিসংখ্যান বলছে, চীন প্রথম অবস্থানে থাকলেও এক দশকে তাদের পোশাক শিল্পের রফতানি কমেছে প্রায় অর্ধেক। আর সে জায়গায় ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশ তাদের অবস্থান তৈরি করেছে।
প্রসঙ্গত, গত এক দশকে আন্তর্জাতিক বাজারে পোশাক রফতানির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে বাংলাদেশ। বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে। এ সময়ে বাংলাদেশ তার সাশ্রয়ী উৎপাদন ক্ষমতা, উচ্চমানসম্পন্ন পোশাক এবং দক্ষ শ্রমশক্তির মাধ্যমে ভারতের মতো দেশকেও পেছনে ফেলে দিয়েছে।
ওটেক্সার তথ্য বলছে, ২০১৪ থেকে শুরু করে ২০২৩ সাল পর্যন্ত গত ১০ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি বেড়েছে প্রায় ৫০ দশমিক ৭৯ শতাংশ। ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে যেখানে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি ছিল ৪ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলার, সেখানে ২০২২ সালে এই রফতানি উন্নীত হয় ৯ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলারে। তবে ২০২৩ সালে আকস্মিকভাবে এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। ওই বছর যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি প্রায় এক-চতুর্থাংশ হ্রাস পেয়ে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলারে।
২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানি হ্রাস পেয়েছিল ২২ দশমিক ০৪ শতাংশ, যার প্রভাব পড়ে বাংলাদেশের পোশাক রফতানির ওপর।
প্রথম অবস্থানে থাকা চীনের ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানি ছিল ২৯ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলারের। সেখানে ২০২৩ সালে এই রফতানি হ্রাস পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলারে। অর্থাৎ এক দশকের মধ্যে রফতানি হ্রাস পেয়েছে প্রায় ৪৫ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলার।
আর দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ভিয়েতনামের ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানি ছিল ৯ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলারের। সেখানে ২০২৩ সালে এই রফতানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলারে। অর্থাৎ গত এক দশকে যুক্তরাষ্ট্রে ভিয়েতনামের রফতানি বেড়েছে ৫২ দশমিক ৯৬ শতাংশ।
একইসঙ্গে ভারত, পাকিস্তান ও কম্বোডিয়ার মতো দেশগুলোরও রফতানি বেড়েছে।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের পোশাক রফতানি ছিল ৩ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলারের। ২০২৩ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলারে।
আর ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানের পোশাক রফতানি ছিল ১ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলারে, যা ২০২৩ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ০২ বিলিয়ন ডলারে।
অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ কম্বোডিয়ার পোশাক রফতানি গত এক দশকে বেড়েছে ৩৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ। ২০১৪ সালে যেখানে দেশটির রফতানি ছিল ২ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলারের, সেখানে ২০২৩ সালে উন্নীত হয় ৩ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলারে।
বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রে গত এক দশকে চীনের পাশাপাশি হ্রাস পেয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া, মেক্সিকো, হন্ডুরাস ও ইন্দোনেশিয়ার পোশাক রফতানিও। এর মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার রফতানি ১৩ দশমিক ৩১ শতাংশ, মেক্সিকোর ২৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ, হন্ডুরাসের ৬ দশমিক ০৮ শতাংশ ও ইন্দোনেশিয়ার রফতানি হ্রাস পেয়েছে ১৭ দশমিক ৯৯ শতাংশ।