তিনদিনের ভারী বৃষ্টি ও ভারত থেকে আসা ঢলে নেত্রকোনার দুর্গাপুর ও কলমাকান্দা উপজেলার অন্তত ১৩টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে অন্তত ১০৫টি গ্রাম। প্রায় সাড়ে তিনশ হেক্টর জমির আমন ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। বানের পানিতে তলিয়ে গেছে ময়মনসিংহ-জারিয়া রেলপথের রেললাইন। এতে ঝুঁকি নিয়ে চলছে ট্রেন।
দুর্গাপুর উপজেলার বড় নদী সোমেশ্বরী, জারিয়ার কংস ও কলমাকান্দার উব্দাখালী নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। কলমাকান্দার মহাদেও, সদর ও বারহাট্টা উপজেলার কংস, মগড়া, খালিয়াজুরীর ধনুসহ বিভিন্ন ছোট-বড় নদ-নদীর পানি বেড়েই চলেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নেত্রকোনা কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, রোববার বেলা ১১টার দিকে সোমেশ্বরী নদীর পানি দুর্গাপুর পয়েন্টে বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ২৫ মিটার নিচ দিয়ে, কংস নদের পানি জারিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ৩ মিটার নিচ দিয়ে এবং উব্দাখালীর পানি কলমাকান্দা ডাকবাংলো পয়েন্টে বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ৫ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। দুর্গাপুর পয়েন্টে বিপৎসীমা ১১ দশমিক ৫৫ সেন্টিমিটার, জারিয়া পয়েন্টে ১০ দশমিক ৫৫ মিটার আর কলমাকান্দা পয়েন্টে ৬ দশমিক ৫৫ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
পাউবো সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) ভোর থেকে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ৭২ ঘণ্টায় ৩৪১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। একই সময়ে নেত্রকোনার দুর্গাপুর ও জারিয়া ঝাঞ্জাইল স্টেশনে ৬৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়। এতে জেলার ছোট-বড় সব নদ-নদীর পানি বাড়ছে। শেরপুরের ভোগাই-কংসের পানি জারিয়া এলাকায় কংস নদ দিয়ে কলমাকান্দায় উব্দাখালী নদীতে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নদ-নদীগুলোর পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
পানিতে দুর্গাপুর উপজেলার কুল্লাগড়া, কাকৈইগড়া, বাকলজোড়া, চণ্ডীগড় ও গাঁওকান্দিয়া; কলমাকান্দার রংছাতি, লেংগুরা, খারনৈ, নাজিরপুর, কৈলাটি, পোগলা, বড়খাপন ও কলমাকান্দা সদর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের প্রায় ২০০ হেক্টর আমনের ক্ষেত ডুবে গেছে। চানপুর-গোবিন্দপুর, কলমাকান্দা-বওরাকোনা, কলমাকান্দা-বিষমপুর, কলমাকান্দা-মনতলাসহ বেশকিছু সড়ক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে পানি উঠেছে।
কৈলাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন বলেন, ‘ইউনিয়নের বেশকিছু গ্রামের নিচু এলাকায় ধানক্ষেত ডুবে গেছে। বিশেষ করে বেনুয়া, চানকোনা, খলা, সাকুয়া, ইন্দ্রপুর, বিষমপুরসহ কয়েকটি গ্রামের নিম্নাঞ্চল বন্যার পানিতে প্লাবিত হচ্ছে।’
লেংগুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান বলেন, তার ইউনিয়নটি ভারতের মেঘালয় সীমান্তঘেঁষা। শনিবার (৫ অক্টোবর) রাতে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। এতে ভোর থেকে ৩৬টি গ্রামেই পাহাড়ি পানি এসেছে। বালুচরা, জয়নগর, ঘোড়াগাঁওসহ বেশকিছু এলাকায় সড়ক স্থানে স্থানে ভেঙে গেছে। তবে এসব এলাকার পানি বেশিক্ষণ স্থায়ী না হলেও আমন ফসলের প্রচুর ক্ষতি হবে।
শনিবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দুর্গাপুর উপজেলার প্লাবিত ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেন জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস। এসময় তিনি ক্ষতিগ্রস্ত ও দরিদ্র কৃষকদের মাঝে তিন টন চাল ও ৩০০ প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করেন। আজ সকালেও কলমাকান্দা উপজেলায় যান তিনি।
দুর্গাপুরের ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বন্যার পানিতে উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের প্রায় ৩৫টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সবমিলিয়ে প্রায় ১৫০ হেক্টর জমির ধান পানির নিচে আছে।
কলমাকান্দার ভারপ্রাপ্ত ইউএনও শহিদুল ইসলাম জানান, আটটি ইউনিয়নের প্রায় ৬৬টি গ্রামের নিচু এলাকায় প্রায় ২০০ হেক্টর ধানক্ষেতে পানি উঠেছে। তবে পানি দ্রুত নেমে গেলে তেমন ক্ষতি হওয়ার কথা না। এদিকে শনিবার সন্ধ্যায় পূর্বধলায় দুর্গত মানুষের মাঝে শুকনা খাবার বিতরণ করেছেন সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা।
পাউবোর নেত্রকোনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী সারওয়ার জাহান বলেন, ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জেলার সব নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। কংস, সোমেশ্বরী, উব্দাখালী, ধনুসহ বড় নদ-নদীর পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই অবস্থায় আছে। দুর্গাপুর ও কলমাকান্দার নিম্নাঞ্চলে পানি উঠলেও ভারী বৃষ্টি না হলে দীর্ঘমেয়াদি বন্যার তেমন আশঙ্কা নেই।
জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস বলেন, কলমাকান্দা, দুর্গাপুর, পূর্বধলা ও নেত্রকোনা সদর উপজেলার জন্য নগদ তিন লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি ৬০ মেট্রিক টন চাল ও দুই হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।