সাড়ে ২৯ কোটি টাকার সমীক্ষা, ৯৭ শতাংশই যাবে পরামর্শকের পকেটে!

জাতীয়

পশুর চ্যানেল খনন বাবদ ১২৩ কোটি টাকা গচ্চা দিয়ে নতুন করে আরও একটি প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। পুরো কাজই পরামর্শকনির্ভর। প্রকল্পের প্রস্তাবনা পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ। মোট ব্যয় ২৯ কোটি ৫০ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। শুধু পরামর্শক খাতেই ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮ কোটি ৬৫ লাখ ৭৭ হাজার টাকা, যা মোট ব্যয়ের ৯৭ দশমিক ১২ শতাংশ।

‘পশুর চ্যানেলে নদীশাসনের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা’ নামে নতুন একটি প্রকল্পে দেখা গেছে এ চিত্র। প্রকল্পের বাকি খরচের মধ্যে থাকছে সম্মানী ভাতা ১০ লাখ, টিএডিএ ১০ লাখ, মুদ্রণ ও প্রকাশনা পাঁচ লাখ এবং স্টেশনারি দুই লাখ টাকা। চলতি সময় থেকে ৩০ জুন ২০২৬ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। মূল উদ্দেশ্য পশুর নদীর নাব্য সংরক্ষণের জন্য নদীশাসনের কার্যকারিতা যাচাই করা, পলি জমার হার কমাতে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান খুঁজে বের করা ও ড্রেজিংয়ের মাটি ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা প্রণয়ন।

মোট ব্যয়ের ৯৭ শতাংশ পরামর্শক ব্যয় প্রসঙ্গে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য যুগ্মসচিব (প্রকৌশল ও উন্নয়ন) ড. এ কে এম আনিসুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘কাজটাই মূলত পরামর্শকনির্ভর। সমীক্ষা প্রকল্পের আওতায় বড় প্রকল্প নেওয়া হবে। ড্রইং ও ডিজাইন করা হবে। এই অনুযায়ী নদীশাসনে বড় প্রকল্প নেওয়া হবে।’

তিনি বলেন, ‘নদীশাসন না করলে পশুর চ্যানেলে নাব্য ধরে রাখতে ড্রেজিংয়ে বেশি খরচ হচ্ছে। চ্যানেল ঠিক রাখতে নিয়মিত ড্রেজিং চলমান রাখতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। নদীশাসন করা গেলে পলি কম পড়বে, তখন ড্রেজিং খরচও কমে আসবে।’

বাড়তি পরামর্শক ব্যয় প্রসঙ্গে এই যুগ্মসচিব বলেন, ‘কাজই পরামর্শকের। বাকি কিছু অফিস ও সামান্য কিছু ক্রয় থাকবে। দেশি ও বিদেশি পরামর্শক মিলেই প্রকল্পের কাজ করবে।’

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, বঙ্গোপসাগর থেকে প্রায় ১৩১ কিমি উজানে পশুর নদীর পূর্বতীরে মোংলা বন্দর অবস্থিত। সমুদ্র থেকে মোংলা বন্দরের জেটি পর্যন্ত ১৩১ কিমি চ্যানেলের মধ্যে দুটি স্থানে নাব্য সংকট বেশি, যার একটি সমুদ্র থেকে পশুর চ্যানেলের প্রবেশমুখের আউটার বার এলাকা এবং অপরটি মোংলা বন্দরের জেটি থেকে হারবাড়িয়া পর্যন্ত।

মোংলা বন্দরে জোয়ারের সহায়তায় সাড়ে ৯ থেকে ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ আনার জন্য চ্যানেলে ন্যূনতম ৮ দশমিক ৫ মিটার সিডি গভীরতা প্রয়োজন। আউটার বার এলাকা সমুদ্রের কাছে হওয়ায় সেখানে ড্রেজিংয়ের কোনো বিকল্প নেই। এছাড়া আউটার বারে পলির হার তুলনামূলক কম হওয়ায় সংরক্ষণ ড্রেজিংয়ের পরিমাণ কম। ইনার বার এলাকায় অত্যধিক পলি পড়ে।

এই এলাকার প্রায় অর্ধেক সুন্দরবন পরিবেষ্টিত। পলির কারণে এ এলাকায় ড্রেজিং করলে দ্রুত ভরাট হয়ে যায়। ফলে বারবার ড্রেজিং করেও চ্যানেলের গভীরতা সংরক্ষণ করা দুরূহ হয়ে পড়ছে। মোংলা বন্দরের জেটি থেকে রামপাল পাওয়ার প্ল্যান্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার চ্যানেলে পলিজনিত কারণে নাব্য সমস্যা রয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে নদীশাসনের মাধ্যমে পলির হার কমিয়ে পশুর চ্যানেলের নাব্য উন্নয়ন ও সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। সে অনুযায়ী নতুন প্রকল্পটি নেওয়া হচ্ছে।

এর আগে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আমদানি করা কয়লা নৌপথে পরিবহনে ১২২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ব্যয় করে খনন করা হয় মোংলার পশুর চ্যানেল। তবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু না হওয়ায় খনন করা চ্যানেলের পূর্ণাঙ্গ ব্যবহার করা যাচ্ছে না। ফলে যে উদ্দেশ্য নিয়ে চ্যানেলটি খনন করা হয় সেই উদ্দেশ্যও পূরণ হচ্ছে না। এমনকি আড়াই বছর অতিবাহিত হলেও চ্যানেলটির মেইনটেন্যান্স করা হয়নি। এতে পলি পড়ে ফের আগের অবস্থায় ফিরছে চ্যানেলটি।

আইএমইডির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আমদানি করা কয়লা নৌপথে পরিবহনে মোংলা বন্দরের জেটি নম্বর ৯ থেকে উজানে ১৩ কিলোমিটার পর্যন্ত পশুর নদীর পর্যাপ্ত নাব্য অর্জন হয়েছে। তবে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হওয়ার অনেক আগে ড্রেজিংয়ের কাজ সম্পন্ন হওয়ায় ড্রেজিংয়ের সুফল পুরোপুরি অর্জিত হয়নি। এরই মধ্যে রামপালে নদীর গতিপথেও পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নদীর অনেক জায়গা বড় মাদার ভেসেল চলাচলের মতো নাব্য হারিয়েছে। তবে নিয়মিত মেইনটেন্যান্স ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা করা সাপেক্ষে বড় জাহাজ চলাচল করতে পারবে।

সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে চালুর সিদ্ধান্তও বাস্তবায়ন হয়নি। আমরা সময়মতো প্রকল্পের কাজ শেষ করেছি। কিন্তু সময়মতো শেষ হয়নি রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র। তবে বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা না এলেও অনেক শিল্প-কারখানায় পণ্য পরিবহনে চ্যানেলটি ব্যবহার করা হচ্ছে। নৌযান চলাচলের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, যাতে ভারী নৌযান চলাচল করতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *