সাগরের গা-ঘেঁষা সেন্ট ভিনসেন্টের আর্নোস ভ্যালি স্টেডিয়ামের নৈসর্গিক সৌন্দর্য মুগ্ধ করবে যে কাউকে। তবে এই সৌন্দর্য দিয়ে কী হবে যদি পিচ থাকে নিউইয়র্কের মতো! নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে কেমন হবে আজকের ম্যাচের পিচ? বাউন্সি, টার্ন নাকি একেবারেই ব্যাটিং সহায়ক– এই উত্তর দলের কেউ দিতে না পারলেও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও সাকিব আল হাসান হয়তো কিছুটা বলতে পারবেন।
কেননা, বর্তমান দলের এ দু’জনই রয়েছেন যারা কিনা এই মাঠে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। সাকিব কী করে ভুলবেন, এখানেই মাশরাফি চোটে পড়ার পর তাঁর নেতৃত্বে প্রথমবার ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তাদের মাটিতে প্রথম টেস্ট হারিয়েছিলেন। রিয়াদ কি ভুলতে পারবেন সেই টেস্টে তাঁর ক্যারিয়ার সেরা স্পেলকে?
বছর দশেক আগে শেষবার ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে গেইলদের বিপক্ষে এই মাঠেই টেস্ট খেলেছিল বাংলাদেশ। মজার ব্যাপার হলো, সেটিই ছিল মাঠটিতে সর্বশেষ অনুষ্ঠিত কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ। এমনকি ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচগুলোও এখানে হয়নি গতবার। তাই বিশ্বক্রিকেটের কাছেই অনেকটা ধাঁধার মতো হয়ে আছে সেন্ট ভিনসেন্টের কিংসটাউনের এই স্টেডিয়ামটি।
নিউইয়র্ক থেকে দু’দিন আগে প্রচণ্ড একটা ঝক্কি নিয়ে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের এই দেশে এসে পৌঁছেছে বাংলাদেশ দল। চার্টার্ড ফ্লাইট থাকলেও পাঁচ ঘণ্টা দেরি করেছিল তা উড়াল দিতে। যে কারণে রাতে পৌঁছে ক্লান্ত দল সকালে আর অনুশীলনে বের হয়নি। গতকাল অবশ্য স্থানীয় সময় সকালে মাঠে এসে নেট সেশন করেছেন শান্তরা। তাতে পিচ কেমন দেখতে পেয়েছেন।
এখানকার পিচ আর যাই হোক যুক্তরাষ্ট্রের মতো যে হবে না, সেটা অবশ্য অনুমান করা যায়। এবারের বিশ্বকাপের যে ম্যাচগুলো ক্যারিবীয় দ্বীপে হয়েছে, সেগুলোতে অন্তত দেড়শ, এমনকি ২শ রানও উঠেছে। অস্ট্রেলিয়ায় যেমন বার্বাডোজে নিজেদের মতো করে ব্যাটিং করে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১ রান তুলেছিল। গ্রানাডাতে উইন্ডিজ দল উগান্ডার বিপক্ষে ১৭৩ রান তুলে নেয়। সেন্ট ভিনসেন্টেও তেমনই পিচ আশা করছেন আয়োজকরা।
এই মাঠের যেটুকু রেকর্ড রয়েছে টি২০তে, তাতে মাত্র দুটি ম্যাচ খেলা হয়েছিল সেই ২০১৩ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর পাকিস্তানের মধ্যে। সেখানেও পাকিস্তান দল দেড়শর ওপর রান তুলে প্রথম ম্যাচটি জিতেছিল। হয়তো অনেক আগের কথা, তার পরও স্মৃতি তো। ২০০৯ সালে উইন্ডিজ সফরে এই মাঠে টেস্ট খেলেছিল বাংলাদেশ। যেখানে তামিম ইকবালের সেঞ্চুরি ছিল, সাকিবের দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট ছিল। স্মরণীয় হয়েছিল ৯৫ রানে জেতা সেই টেস্ট ম্যাচটি।
যেখানে দ্বিতীয় ইনিংসে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৫১ রান দিয়ে ক্যারিয়ার সেরা স্পেল করেছিলেন। এর পর ২০১৪ সালের টেস্টে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এই মাঠেই দ্বিতীয় ইনিংসে ৬৬ রান করেছিলেন। ক্রেগ ব্রাথওয়েটের ডাবল সেঞ্চুরি, মুশফিকের সেঞ্চুরি ছিল সেই ম্যাচে। যদিও ১০ উইকেটে হেরেছিল সেই সময় বাংলাদেশ। কিন্তু রানের ফোয়ারা ছিল, সেই সঙ্গে ছিল স্পিনার তাইজুলের পাঁচ উইকেটও। ১০ বছর পরে এসে এসব রেকর্ড ঘেঁটে আজকের ম্যাচের পিচের তুলনা করাটা হয়তো ঠিক না।
কেননা, মাঝে অনেকটা সময় এই মাঠে ফুটবলও খেলা হয়েছে। তার পরও সেন্ট ভিনসেন্ট কোথায় গিয়ে যেন বাংলাদেশের পক্ষেই কথা বলেছে। নেদারল্যান্ডস ছাড়াও গ্রুপের বাকি নেপাল ম্যাচটিও এখানেই খেলতে নামবেন শান্তরা। সূচি ঠিক আছে, ডিসেম্বরেও এই মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে এসে দুটি টি২০ খেলবে। তাই সেন্ট ভিনসেন্টকে নতুন করে চেনার মিশনে নামছে আজ বাংলাদেশ।