প্যারিস সফরে যেতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা : ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত

বাংলাদেশ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফ্রান্স সফরের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এ সফরের দিনক্ষণ এখনও চূড়ান্ত করা হয়নি। ঢাকায় নিযুক্ত ফরাসি রাষ্ট্রদূত মারি মাসদুপুই গতকাল বুধবার (২২ মে) তার বাসভবনে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।

ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মারি মাসদুপুই বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর (শেখ হাসিনা) আসন্ন সফর প্যারিসে হবে। তারিখ এখনও নিশ্চিত করা হয়নি।’

ফরাসি রাষ্ট্রদূত বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে দুটি ভিন্ন ক্ষেত্রে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে এয়ারবাস। একটি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কাছে বিমান বিক্রির জন্য এবং অন্যটি স্যাটেলাইট সিস্টেম সরবরাহ করার জন্য, যা বাংলাদেশ পেতে চায়।

মারি মাসদুপুই বলেন, ‘উভয় আলোচনাই ভালো চলছে এবং আমরা আশা করি, শিগগিরই চূড়ান্তকরণ ও ক্রয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে ফরাসি রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন সফরের সময় চুক্তিগুলো সই হতে পারে।

ফ্রান্স ও বাংলাদেশের মধ্যে কৌশলগত সহযোগিতার বিষয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, প্যারিস মহাকাশ সংযোগ, প্রতিরক্ষা, ডিজিটাল ও সাইবার এবং জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত বিষয়গুলোর ওপর জোর দিয়েছে।

ফরাসি ইন্দো-প্যাসিফিক দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়ে মারি মাসদুপুই বলেন, আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে এবং সবার অভিন্ন সমৃদ্ধিতে মুক্ত, উন্মুক্ত, শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের বিষয়ে ঢাকা ও প্যারিস একই অবস্থানে রয়েছে।

ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমাদের ইন্দো-প্যাসিফিক ভিশন বাস্তবায়নে বাংলাদেশ অবশ্যই একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। আপনার দেশের অবস্থানের কারণে, আপনাদের গুরুত্বের কারণে, জনসংখ্যার পরিপ্রেক্ষিতে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও পরিপ্রেক্ষিতে এই রূপরেখা দেওয়া হচ্ছে।’

রাষ্ট্রদূত মাসদুপুই বলেন, ঢাকা ও প্যারিস একে অপরের সমস্যাগুলো ভালোভাবে বোঝে বলে একে অপরকে সমর্থন দেওয়ার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, ‘বিশ্বের অর্থনীতিতে, বিশ্বের মানবিক গতিশীলতায় এবং সংস্কৃতি ও অন্যান্য ক্ষেত্রে এই অঞ্চলের ক্রমবর্ধমান গুরুত্বকে স্বীকৃতি দিয়ে ইন্দো প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ক্ষেত্রে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি একটি অত্যন্ত সহযোগিতামূলক দৃষ্টিভঙ্গি।’

ফরাসি রাষ্ট্রদূত বলেন, প্যারিস মনে করে, এই অঞ্চলের সবার সঙ্গে সংলাপ ও সহযোগিতা বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ।

এলডিসি থেকে মধ্যম আয়ের দেশে বাংলাদেশের উত্তরণ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত বলেন, এই উত্তরণের পথে রপ্তানি বাস্কেটকে বহুমুখী করা এবং শ্রম পরিস্থিতির উন্নতি ঢাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

রাষ্ট্রদূত মারি মাসদুপুই বলেন, প্যারিস ও ঢাকা জ্বালানি, খাদ্য, জাহাজ নির্মাণ ও প্রকৌশলের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশি ও ফরাসি কোম্পানিগুলোর আগ্রহ লক্ষ্য করছে। তিনি বলেন, ‘আমরা ফ্রান্সে ফার্মা বা আরএমজি, খুচরা পণ্য এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে বাংলাদেশি কোম্পানির সম্ভাব্য বিনিয়োগের খোঁজ শুরু করেছি।’

রোহিঙ্গা সংকট প্রসঙ্গে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত বলেন, তার দেশ আত্মবিশ্বাসী, বাংলাদেশ রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে ও বাইরে নিরাপত্তা পরিস্থিতি বজায় রাখতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে।আন্তর্জাতিক ইস্যুতে রাষ্ট্রদূত মারি মাসদুপুই বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ফ্রান্সের ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক তথ্যের হেরফের হয়েছে।

রাষ্ট্রদূত বলেন, তিনি লক্ষ্য করেছেন, কিছু বাংলাদেশি ইউটিউব চ্যানেল এবং অনলাইন মিডিয়া কিছু ভিডিও আপলোড করেছে, যাতে বাংলাদেশিদের বোঝানো হয়েছে, ইউক্রেনে ফ্রান্সের সৈন্য রয়েছে। সেখানে কিছু রেজিমেন্ট, ইউনিট বা ব্যাটালিয়নের নির্দিষ্ট নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

ফরাসি রাষ্ট্রদূত বলেন, এটি একমাত্র দেশ নয়, যেখানে এমনটি ঘটছে। ফ্রান্স রাশিয়া থেকে উদ্ভূত তথ্য বিভ্রান্তির প্রচারণার সম্মুখীন হয়েছে। ফ্রান্সকে ক্ষতিগ্রস্ত করার লক্ষ্যেই এসব প্রচারণা চালানো হয়।

গাজা ইস্যুতে ফরাসি রাষ্ট্রদূত বলেন, প্যারিস যুদ্ধবিরতির পক্ষে এবং দেখতে চায়, ইসরায়েল মানবিক আন্তর্জাতিক আইনকে সম্মান করছে। তিনি বলেন, তারা ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান দেখতে চায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *