দেশপ্রেম ও সেবার মনোভাব নিয়ে বাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে সততা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে আহ্বান জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেন, পুলিশ বাহিনীর প্রতিটি সদস্যের চেতনা হবে স্বাধীনতার চেতনা, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণ। বর্তমান সরকারের রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নে অন্যতম প্রধান নিয়ামক শক্তি বাংলাদেশ পুলিশ।
পুলিশ মেমোরিয়াল ডে-২০২৪ উপলক্ষ্যে শনিবার (৯ মার্চ) দুপুরে পুলিশ স্টাফ কলেজের কনভেনশন হলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ আহ্বান জানান তিনি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা, প্রগতি, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছেন আপনারা। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষায় আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রতি বছরে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পুলিশ সদস্য নিহত ও আহত হচ্ছেন। ২০২৩ সালে চাকরিরত অবস্থায় পুলিশের বিভিন্ন পদবির ৩৯৯ জন সদস্য বিভিন্ন কারণে মারা যান। তাদের মধ্যে ১৩৪ সদস্য কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গ করেছেন।
তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মন্ত্রী বলেন, পুলিশ সদস্যরা আন্তরিকতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, জীবন উৎসর্গ করার মতো চরম ত্যাগ স্বীকার করে যে অনন্য নজির স্থাপন করছেন, তার জন্য পুলিশ বাহিনীসহ সারাদেশ আজ গর্বিত।
মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদাত্ত আহ্বানে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে আপনারা বীরত্বের যে পরিচয় দিয়েছেন তা কখনো জাতি ভুলবে না। কারণ সে রাতে পুলিশই প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশের ২৬২ জন সদস্য শহীদ হন। দেশমাতৃকার স্বাধীনতার জন্য জীবন দেওয়া পুলিশ সদস্যদের প্রতিও শ্রদ্ধা জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, জনগণে জানমালের নিরাপত্তা রক্ষা পুলিশ বাহিনীর অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। দেশ সেবার মন্ত্রে উদ্দীপ্ত পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় সর্বদা সচেষ্ট রয়েছেন। বর্তমান সরকার, সর্বদাই পুলিশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। চাকরিরত অবস্থায় নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারের জন্য সরকার আর্থিক অনুদান এককালীন পাঁচ লাখ টাকার প্রজ্ঞাপন বাতিল করে ২০২০ সালের ১ অক্টোবর এই অনুদানের পরিমাণ ৮ লাখ টাকা করে। এছাড়া বাহিনী থেকে স্থায়ী অবসরে গেলে বা চাকরিতে অক্ষম হয়ে গেলে এই সাহায্যের অনুদান ৪ লাখ টাকা করা হয়েছে।
২০১৩ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত পুলিশের বিভিন্ন পদবির বিএনপি, জামায়াত-শিবির, হেফাজতে ইসলামসহ দুর্বৃত্তদের হামলায় কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারের কল্যাণে প্রধানমন্ত্রী ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে এককালীন ১০ কোটি ২৬ লাখ টাকা প্রদান করেন। এছাড়া আজীবন রেশন সুবিধা চালু করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সরকারের উন্নয়ন রূপকল্প বাস্তবায়ন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল ও স্বাভাবিক রাখা ও জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা একান্ত অপরিহার্য। সরকারের রূপকল্প ২০১ বাস্তুবায়নে অন্যতম নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে পুলিশ। এজন্য এঅর্জনে সততা, আন্তরিকতা, নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে সকল পুলিশ সদস্যকে আহ্বান জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দেশের নিরাপত্তা দিতে গিয়ে পুলিশ সদস্যরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। একটি মৃত্যু সেই পরিবারের জন্য অনেক কষ্টের। দেশকে স্থিতিশীল ও নিরাপদ রাখতে পুলিশ সদস্যরা কাজ করছে। মানবাধিকার সমুন্নত রেখে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছে। দেশকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে নিয়ে যাওয়ার সব ধরনের বাধা দমন করেছে। দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন করেছে পুলিশ।
পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, ২০১৩-১৪ সালে এদেশের উন্নয়নের গতিকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য একটি চক্র বা স্বাধীনতা বিরোধী চক্র চেষ্টা করেছিল। দেশের আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটিয়ে দেশকে পেছনের দিকে নিয়ে যাওয়ার একটি চক্রান্ত শুরু করেছিল। এ সময় বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা নিজের জীবন দিয়ে দেশের স্বাধীনতার চেতনাকে তারা টিকিয়ে রেখেছে।
চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, বাংলাদেশকে একটি নিরাপদ জঙ্গি, সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সবসময় বাংলাদেশ পুলিশ অঙ্গীকারবদ্ধ। সম্প্রতি মারামারির ঘটনায় (গত বছরের ২৮ অক্টোবর) পুলিশ দক্ষতা ও দৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছে। দেশের শান্তির প্রিয় জনগণসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসা অর্জন করেছে।
তিনি বলেন, অপরাধ দমনে পুলিশ বাহিনী এখন কার্যকর ভূমিকা পালনে সক্ষম। এই পুলিশ বাহিনী দেশের মানুষের আস্থার ঠিকানা। তারা যেকোনো ধরনের অপরাধে সক্ষমতা অর্জন করেছে। দিনে দিনে অপরাধের ধরন পরিবর্তনের কারণে নিত্যনতুন অপরাধের সংযোজন ঘটছে। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রয়োজন রয়েছে।
অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) কামরুল আহসান, দেশের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। পুলিশই প্রথম স্বাধীনতার যুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। এরপর স্বাধীন বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় পুলিশ সদস্য জীবন দিয়ে কাজ করে গেছে। দেশের যেকোনো সংকট ক্রান্তিকালে পুলিশ সদস্য জীবন উৎসর্গেও পিছপা হয় না। গত বছর ১৩৪ পুলিশ সদস্য কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন দিয়েছে। সব শাহাদতবরণকারী সদস্যের জন্য বিভিন্ন আর্থিক সুবিধা ভাতা দেওয়া হচ্ছে। কর্তব্যরত সদস্যদের জন্য কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালকে অত্যাধুনিক হাসপাতালে পরিণত করতে বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।