শ্রম আইনের সংশোধন নিয়ে তাড়াহুড়ো না করার জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)।
মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে বৈঠকে এ আহ্বান জানায় সংস্থাটি। বৈঠক শেষে আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
আইএলওর সঙ্গে কি আলোচনা হলো এবং তারা আবার কোন কোন বিষয়ে সংশোধনের কথা বলেছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, আজকে আমরা শ্রম আইনের যে সংশোধন, সেটার বিষয়ে বসেছিলাম। এর আগে যখন বসেছিলাম তখন যে সংশোধনীর কথা বলা হয়েছিল, সেখানে আরো কিছু নতুন সংশোধনী আনার ব্যাপারে শ্রম মন্ত্রণালয় আমাকে জানিয়েছিল। সে বিষয়ে আইএলও কিছু বক্তব্য দেওয়ার জন্য তারা অনুরোধ জানিয়েছে।
তিনি বলেন, আইএলও দুই দিন আগে একটা অনুরোধ জানিয়েছে যে জেনেভায় আইএলওর একটি টিম আমাদের এই মিটিংয়ে থাকতে চান। চারজনের একটি টিম আজকে ছিল। সেখানে প্রত্যেকটি ধারা নিয়ে আলোচনা করা শুরু করি। আমরা চাচ্ছিলাম শ্রম আইনটা এই পার্লামেন্টে পাস করার জন্য। কিন্তু তারা যে পরামর্শ দিয়েছে সেটা করতে গেলে এই পার্লামেন্টে তা ইনকর্পোরেট করব কি করব না, সেটার সিদ্ধান্ত নিতে পারব না।
সেজন্য আলোচনা হয়েছে, উনারা যে পরামর্শ দিয়েছে সেটা পরে বিবেচনা করা যায়। এখন এই শ্রম আইনটা পাস করা যায়। তারা বললেন, তাড়াহুড়ো না করে আমরা আলোচনা করে আরো কিছু করতে পারলে ভালো হবে।
আইনমন্ত্রী বলেন, আমি তাদের পরিষ্কারভাবে একটা কথা জিজ্ঞেস করেছি, আইএলও আমাদের বিরুদ্ধে গত তিন বছর ধরে একটা অভিযোগ দিয়ে যাচ্ছে। তারা প্রত্যেকবারই বলেন এটা মার্চ মাসে সিদ্ধান্ত হবে না, নভেম্বরে যাবে। আবার নভেম্বরে হবে না মার্চে যাবে। আমি সেজন্য বলেছি মার্চ মাসের গভর্নর বডির মিটিংয়ে যদি বলেন, এটা আবার নভেম্বরে যাবে সেটাতো আমরা নিতে রাজি না। তখন তারা বলেছে সমন্বিত শ্রম আইন তাদের পরামর্শ মিলিয়ে যদি করতে পারি, তাহলে মার্চ মাসে আমাদের অভিযোগ নিয়ে আলোচনার ব্যাপারে সেটা প্রতিবন্ধকতা হবে না। বরং আমরা যে আলোচনাগুলো করছি সেটার একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
তিনি বলেন, এটার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে নীতিনির্ধারকরা। আর তার থেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো প্রধানমন্ত্রী এই মন্ত্রণালয়ের ( শ্রম) মন্ত্রী, আমি যেই কথাই বলি না কেন এবং আজকের যে আলোচনা সেটা সম্পূর্ণ আমাকে প্রধানমন্ত্রীকে ব্রিফ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা করতে পারব।
মন্ত্রী বলেন, এটার ধারা ও উপধারা নিয়ে আলোচনা করতে গেলে অনেক সময় লাগবে। কিছু কিছু বিষয় আছে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গেও আলাপ করতে হবে। তাই আমরা দুটি সিদ্ধান্তে এসেছি। একটি হচ্ছে এই মিটিং আবার পরে অনুষ্ঠিত হবে। এরমধ্যে আইএলওর উদ্যোগে একটি স্টেকহোল্ডার ফেসিলিটি মিটিং হবে। যেখানে যেসব ইস্যু নিয়ে আমাদের সঙ্গে তাদের মতপার্থক্য আছে এগুলো আলোচনা হবে।আজকে তারা কি পরামর্শ দিয়েছে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, মূল সাজেশন হচ্ছে সংজ্ঞা। সংজ্ঞার মধ্যে তারা বলছেন সি মেন্ট যেটা আছে সেটার নাম বদলে সি ফেয়ার নাম করতে হবে। তারপরে বলছেন ম্যানেজার এবং সুপারভাইজার স্টাফদের ওয়ার্কার বলা, এগুলো আমাদের সঙ্গে তাদের আলোচনা হচ্ছে।
ধরুন ইউনিভার্সিটি টিচারদেরকে ওয়ার্কার বলতে হবে, আমি সেটা নাকচ করে দিয়েছি। আমি বলেছি ইউনিভার্সিটি টিচারদেরকে আমরা ওয়ার্কার বলতে পারব না। তার কারণ হচ্ছে ইউনিভার্সিটি টিচাররাও চান না যে তাদেরকে ওয়ার্কার বলতে এবং ওয়ার্কারের সংজ্ঞায় আনতে। যা আমরাও চাই না।
১০ শতাংশ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, ১০ শতাংশ নিয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি। ব্যাপারটি হচ্ছে আগে কথা ছিল ১৫ শতাংশ শুধু হবে তিন হাজার বা তার ঊর্ধ্বে যেসব কারখানা শ্রমিক আছে তাদের জন্য। এখন আমরা সেটাও তুলে দিচ্ছি। সব শ্রমিকদের ব্যাপারে ১৫ শতাংশই হবে।