২০১০ সালে আগস্টে ভারতের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ডের হয়ে ওয়ানডে অভিষেক হয় এক তরুণের। সেই ম্যাচে রানের খাতা খোলার আগেই ফিরে যান সাজঘরে। তবে ধীরে ধীরে নিজেকে এক অনন্য পর্যায়ে নিয়ে গেছেন তিনি। নিজের দেশের সীমানা পেরিয়ে ক্রিকেট বিশ্বের সবার হদয়ে জায়গা করে নেন তিনি। বলছি নিউজিল্যান্ড দলের অধিনায়ক কেইন উইলিয়ামসনের কথা।
চলতি ভারত বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে স্বাগতিকদের বিপক্ষে আসরের ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে ৭০ রানের ব্যবধানে হেরে বিদায় নেয় নিউজিল্যান্ড। সেই সঙ্গে এক কিংবদন্তির বিশ্বকাপ অধ্যায় শেষ হওয়া দেখল বিশ্ব। উইলিয়ামসনের বর্তমান বয়স ৩৩। আগামী ওয়ানডে বিশ্বকাপ হবে ২০২৭ সালে। তখন তার বয়স হবে ৩৭ বছর। হয়তো তিনি সেই সময় আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি টেনে ফেলবেন।
নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক উইলিয়ামসনকে এক হতভাগা ক্রিকেটার বললেও বড় ভুল কিছু বলা হবে না। কারণ গেল ৪ বিশ্বকাপে ২টিতে সেমিফাইনাল এবং ২টি ফাইনাল খেলেও একবারও উঁচিয়ে ধরতে পারেনি শিরোপা। ক্রিকেট কে বলা হয় ভদ্র লোকের খেলা। সেই ভদ্র লোকের খেলাকে আরো অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন কেইন উইলিয়ামস।
মাঠে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়ের সঙ্গে তার নমনীয় আচরণ মুগ্ধ করে প্রতিপক্ষের ক্রিকেটার থেকে শুরু করে সাধারণ দর্শকদেরও। বিশ্বকাপে উইলিয়ামসনের অভিষেক হয় ২০১১ সালে। ঐ বিশ্বকাপে ৪ ম্যাচে খেলতে নেমে ব্যাট হাতে ৯৯ রান করেন উইলিয়ামসন। আসরের সেমিফাইনালে শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে আসর শেষ করে নিউজিল্যান্ড। সেই ম্যাচে ২২ রান করেন উইলিয়ামসন।
সেখান থেকেই শুরু এরপর ২০১৫ বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে। সেই বিশ্বকাপে ফাইনালে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৭ উইকেটে হারে শিরোপার খুব কাছে গিয়েও নিউজিল্যান্ড ছুঁতে পারেনি সেই সোনালী ট্রফি। ঐ বিশ্বকাপে ৯ ম্যাচ খেলে ২৩৪ রান করেন কেইন উইলিয়ামসন পরের বিশ্বকাপে তো দলের অধিনায়ক হয়েই ইংল্যান্ডে কিউই দল নিয়ে পা রাখেন উইলিয়ামসন।
ঐ আসরের শুরু থেকেই দারুণ খেলছিল তার দল। সেমিফাইনালে ভারতকে হারিয়ে ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করে। তবে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেই আসরেও ট্রফি ছুঁতে ছুঁতে ছোয়া হয় না কিউইদের। এই ফাইনালটি হয় জমজমাট। সুপার ওভারে ইংল্যান্ডের কাছে হারে কেইন উইলিয়ামসনের দল। সেই বিশ্বকাপে মোট ৫৭৮ রান করেন কিউই অধিনায়ক।
সব কিছু ভুলে এবারের আসরেও ফেবারিট হিসেবে নজর ছিল নিউজিল্যান্ডের দিকে। শুরুটাও করেছিল তারা দারুণ। গেল আসরের ফাইনালে যাদের বিপক্ষে হেরেছিল এবার তাদের হারিয়েই বিশ্বকাপ মিশন শুরু করেছিল। তবে এবার শুরু থেকেই দলের সঙ্গে ছিলেন না উইলিয়ামসন। কেননা বছরের শুরুতে চোঁট পেয়ে লম্বা সময় ধরে মাঠের বাইরে অবস্থান করছিলেন তিনি। তবে ছিলেন স্কোয়াডের সঙ্গেই।
বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচে খেলতে নামে বাংলাদেশের বিপক্ষে। অনেক দিন পর মাঠে ফিরেই ঐ ম্যাচে খেলেন ৭৮ রানের ইনিংস তবে আবার চোট পেয়ে সপ্তাহ খানেকের জন্য ছিটকে যান তিনি। আবার ফেরেন চলতি মাসের ৪ নভেম্বর বেঙ্গালুরুতে অনুষ্ঠিত হওয়া পাকিস্তানের বিপক্ষের ম্যাচে। এই ম্যাচেও খেলেন ৯৫ রানের ইনিংস। বারবার মাঠের বাহিরে গিয়ে এইভাবে ফিরে আসাটা হয়তো খুব কমই দেখা যায় ক্রিকেটে। তবে উইলিয়ামসন দলের প্রয়োজনে সবসময়ই খেলছেন এমন গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস। চলতি আসরেও তারা ওঠেন সেমিফাইনালে। তবে দুই আসর পর আবার তাদের বিদায় নিতে হয় রাউন্ড রবিন থেকেই।
যেখানে উইলিয়ামসনের দুঃখ পাওয়া শুরু হয়েছিল। এবারও তাদের পথের কাটা হয়ে দাঁড়ায় স্বাগতিক দেশ। এই ম্যাচে দলের বিপদের সময় ৬৯ রানের ইনিংস খেলেও দলকে হারের স্বাদ নেওয়া থেকে বাঁচাতে পারেনি অধিনায়ক উইলিয়ামসন। আবারও ফিরতে হয় তাকে শূন্য হাতে। টানা চার আসরে ২টি ফাইনাল ২টি সেমিফাইনাল খেলেও শিরোপার স্বাদ না পাওয়ার আফসোস তার যে আজীবন থেকে যাবে তা অনেকটা অনুমেয়।