নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং অফিসার নিয়োগে সিদ্ধান্তহীনতায় ইসি

বাংলাদেশ

নির্বাচন কমিশন (ইসি) গতকাল পর্যন্ত আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং অফিসার  করা হবে কি না, সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তারাও বর্তমান পরিস্থিতিতে এ দায়িত্ব নিতে আগের মতো আগ্রহী নন। এছাড়া নির্বাচন কমিশন এবার নির্বাচনের তপসিল ঘোষণার আগেই রিটার্নিং অফিসার নিয়োগের চিন্তা-ভাবনা করলেও বিষয়টি এখনো ঝুলে আছে। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, তপসিল ঘোষণার আগে রিটার্নিং অফিসার নিয়োগের কোনো দৃষ্টান্ত নেই। তপসিল ঘোষণার দিনই এ নিয়োগ সম্পন্ন হয়। এবার আগে হলে তাতে আইনগত কোনো বাধা না থাকলেও প্রথাসম্মত হবে না। এক জন নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘রিটার্নিং অফিসার নিয়োগের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কমিশনে কোনো আলোচনা হয়নি।’

ইসি সচিবালয় সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশনকে এ বিষয়ে খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আগামী বৃহস্পতিবার  কমিশন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছে। ঐ দিন রাষ্ট্রপতিকে নির্বাচনি তপসিল সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হবে। আনুষ্ঠানিকভাবে তপসিল ঘোষণা করা হবে ১৫ নভেম্বরের আগেই।

রিটার্নিং অফিসার  নিয়োগ সম্পর্কে  কমিশন সচিবালয় সূত্র জানায়, এবারের নির্বাচনে  রিটার্নিং অফিসার হতে নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তাদের তেমন আগ্রহ নেই। তাদের ধারণা, এবারের নির্বাচনে যদি ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো সহিংস পরিস্থিতি তৈরি হয় তাহলে রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব ডিসিদের (জেলা প্রশাসকদের) ওপরেই থাকা দরকার। তা না হলে পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রশাসনের সহযোগিতায় ঘাটতি দেখা দিতে পারে। এ দায়িত্ব পালনে নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তারা অযোগ্য হিসেবে মূল্যায়িত হতে পারেন, যা ভবিষ্যতে তাদের জন্য নেতিবাচক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।

এই ধারণার কারণে বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন এবারের নির্বাচনে নির্বাচন কর্মকর্তাদের রিটার্নিং অফিসার করার জোরালো কোনো দাবিও জানায়নি।

যদিও সংগঠনটি দীর্ঘদিন থেকেই নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তাদের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার করার জোর দাবি জানিয়ে আসছিল। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে

সামনে রেখে ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে সংগঠনটি নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব জনবলের মধ্য থেকে অন্তত ৫০ শতাংশ রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়োগসহ বিভিন্ন দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করে। ঐ  সময় এই আলটিমেটাম দেওয়া হয় যে, ২৬ নভেম্বরের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে ২৭ ও ২৮ নভেম্বর তারা কালো ব্যাজ ধারণ করবেন। কিন্তু তখনো তাদের দাবি মানা হয়নি।

এ বিষয়ে সংগঠনটির মহাসচিব মো. হাসানুজ্জামান বলেন, সংসদ নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং অফিসার করার দাবিটি দীর্ঘদিনের। বর্তমান  নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই কমিশনের কাছে আমাদের এ দাবির বিষয়টি জানিয়েছিলাম। নির্বাচন সামনে রেখে সম্প্রতি এ বিষয়ে আর কোনো দাবি জানানো হয়নি।

নির্বাচন কমিশন

নির্বাচন কমিশন গত বছর ১৪ সেপ্টেম্বর এবারের নির্বাচনের যে কর্মপরিকল্পনা বা রোর্ড ম্যাপ ঘোষণা করে অন্যতম লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়, ‘নির্বাচন কমিশনের অধিকসংখ্যক যোগ্য কর্মকর্তাকে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ।’ এছাড়া গত বছর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইসির সংলাপেও বিভিন্ন দলের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং অফিসার করার দাবি জানানো হয়।

গত ২৬ অক্টোবর গণমাধ্যম সম্পাদকদের নিয়ে ‘দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন: গণমাধ্যমের ভূমিকা, জাতির প্রত্যাশা’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামসহ আরও কয়েক জন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বও এ দাবি জানান। গত ৪ নভেম্বর এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্ব প্রস্তুতি জানাতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইসির আলোচনাসভায় বাংলাদেশ কংগ্রেসসহ কয়েকটি দলও একই দাবি জানায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *