বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের করা বিতর্কিত তিনটি কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে অনড় ভারতের আন্দোলনকারী কৃষকরা। আন্দোলনের জট কাটাতে কৃষকদের সঙ্গে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সরাসরি আলোচনায় বসেছিলেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এরপরও কোনো সমাধানসূত্র বের হয়নি। সাড়ে তিন ঘণ্টার ম্যারাথন বৈঠকে উভয় পক্ষ নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকে। সংবাদসূত্র : এনডিটিভি, এবিপি নিউজ
বুধবার মোদি সরকারের মন্ত্রীদের সঙ্গে কৃষক নেতাদের যে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল, এর জেরে তা বাতিল হয়ে যায়। বলা হয়েছিল, বুধবার বেলা ১১টার মধ্যে সরকার প্রস্তাব জানিয়ে একটি চিঠি পাঠাবে। এরপর সিংঘু সীমানায় দুপুর ১২টায় বৈঠক করবেন কৃষক সংগঠনের নেতারা।
কৃষক সভার সাধারণ সম্পাদক হান্নান মোলস্না বলেন, ‘সরকার গত পাঁচটি বৈঠকে একই কথা বারবার বলছে। অমিত শাহকে আমরা বলেছি, নতুন কথা বলুন। একই কথা বলে কী লাভ?’
মোদি সরকার এর আগে ইঙ্গিত দিয়েছিল, এপিএমসির বাইরে থাকা মান্ডিতেও সমান কর, ফসল কেনার আগে ব্যবসায়ীদের নথিভুক্তি, চুক্তি চাষে বিবাদে করপোরেট সংস্থার বিরুদ্ধে কৃষকদের আদালতে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে সরকার আইন সংশোধন করতে রাজি। সরকারি ফসল কেনায় এমএসপির নিশ্চয়তা দিতেও তৈরি সরকার। কিন্তু কৃষক নেতারা আগের বৈঠকেই সেই প্রস্তাব বাতিল করেন। ওই তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতেই তারা অনড়।
বৈঠকের আগেই অবশ্য কৃষক নেতারা জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহার করা, ফসলের নূ্যনতম সহায়ক মূল্য বা এমএসপি নিশ্চিত করার দাবি মানা হবে কিনা, সে বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখ থেকে শুধু ‘হঁ্যা’ বা ‘না’ শুনতে চান তারা।
সরকারের সঙ্গে পাঁচ দফা বৈঠকেও কোনো ফল না আসায় আন্দোলন আরও জোরদার করার প্রস্তুতি নিচ্ছে কৃষক সংগঠনগুলো। এই লক্ষ্যে পাঞ্জাব ও হরিয়ানা থেকে বহু কৃষক ট্র্যাক্টর নিয়ে দিলিস্নর পথে রওনা হয়েছেন। আন্দোলনকারীরা ট্র্যাক্টর নিয়ে রাজধানীর ভেতরে ঢুকে পড়ার পরিকল্পনাও করেছেন।
এদিকে, অচলাবস্থা কাটাতে রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ দাবি করতে কংগ্রেসের রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে বিরোধীদলীয় নেতা ও এমপিরা বুধবার রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে দেখা করতে যান। দিলিস্নর সিংঘু, টিকরিসহ একাধিক সীমানায় কৃষকদের লাগাতার অবস্থান-বিক্ষোভে চাপে রয়েছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। সেই চাপ আরও বাড়াতে বুধবার রাষ্ট্রপতির দ্বারস্থ হন বিরোধী নেতারা। কংগ্রেস এমপি রাহুলের নেতৃত্বে এনসিপি-প্রধান শারদ পাওয়ার, সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, সিপিআই এমপি ডি রাজাসহ বিরোধীদের ওই প্রতিনিধিদল রাষ্ট্রপতি ভবনে গিয়ে তার হস্তক্ষেপের আর্জি জানান। তিনটি কৃষি আইন বাতিলের দাবিও জানিয়ে আসেন রামনাথ কোবিন্দকে।
অন্যদিকে, পাঞ্জাব-হরিয়ানার মতো বিভিন্ন রাজ্যের কৃষকরাই শুধু নন, আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে দেশটির অধিকাংশ শহুরে নাগরিকও। সোশ্যাল মিডিয়ায় জনমত গঠনে তারা যেমন সরব হয়েছেন, সশরীরেও অনেকে যোগ দিয়েছেন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে। তাদের বক্তব্য, ‘জমি না থাকলেও বিবেক আছে’। সেই কারণেই তারা কৃষকদের পাশে রয়েছেন।