আরপিওর সংশোধনী প্রত্যাহারের আহ্বান গণতন্ত্র মঞ্চের

আরপিওর সংশোধনী প্রত্যাহারের আহ্বান গণতন্ত্র মঞ্চের

বাংলাদেশ

ভোট বন্ধে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা খর্ব করে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) আনা সংশোধনী প্রত্যাহার করে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ। জোটটির দাবি, আরপিওর সংশোধনী বিল পাস করে এখন নির্বাচন কমিশনকে প্রকারান্তরে ঠুঁটো জগন্নাথে পরিণত করা হলো।

শনিবার (৮ জুলাই) রাজধানীর তোপখানা রোডে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক।

‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশোধনী বিল ও সরকারের নীলনকশা’ শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে গণতন্ত্র মঞ্চ।

লিখিত বক্তব্যে সাইফুল হক বলেন, আরপিওর ধারা অনুযায়ী আগে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সাত দিন আগে যাবতীয় বকেয়া বিল পরিশোধের বাধ্যবাধকতা ছিল। এখন ক্ষুদ্রঋণ, টেলিফোন, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির বকেয়া বিল এক দিন আগে জমা দিলেও চলবে। এর মধ্য দিয়ে নির্বাচনে ঋণখেলাপি ও বিলখেলাপিদের দৌরাত্ম্য আরও বেড়ে যাবে। এসব কারণে এই সংশোধনী কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

আমরা অনতিবিলম্বে এই সংশোধনী প্রত্যাহার করে নেওয়ার আহ্বান জানাই। তা না হলে এই সংশোধনী প্রত্যাহারসহ অবাধ, গণতান্ত্রিক ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিপন্থি যাবতীয় ধারা ও তৎপরতা বাতিলে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার দাবি আদায় করব।

তিনি আরও বলেন, গত ৪ জুলাই সংসদে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশোধনী বিলটি পাস করে ভোট বন্ধে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা কমিয়ে আনা হয়। এই সংশোধনীর মাধ্যমে যে কোনো অনিয়মের কারণে ভোট বন্ধ রাখতে এই পর্যন্ত সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশনের যে ক্ষমতা ছিল বাস্তবে তা কেড়ে নেওয়া হলো। আরপিওর ৯১ (ক) অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশন যদি মনে করে যে, তারা আইনানুগভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে সক্ষম হবে না, তাহলে তারা নির্বাচনের যে কোনো পর্যায়ে ভোট বন্ধ রাখতে পারে। অর্থাৎ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য পরিস্থিতি অনুকূল না হলে নির্বাচন কমিশন ভোট গ্রহণের আগেই নির্বাচন বন্ধ করতে পারত। এখন এ ক্ষমতা সীমিত করে কেবল ভোটের দিন সংসদীয় আসনের কতিপয় কেন্দ্রের ভোট স্থগিত রাখতে পারবে, পুরো সংসদীয় আসনের নয়। সংশোধিত আরপিও অনুযায়ী, নির্বাচনের পরিবর্তে ‘ভোট গ্রহণ’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।

সাইফুল হক বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনের আসল ক্ষমতা ছিল আরপিওর ৯১ (ক) ধারা। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশোধনী বিল পাস করে এখন নির্বাচন কমিশনকে প্রকারান্তরে ঠুঁটো জগন্নাথে পরিণত করা হলো। এই সংশোধনীর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা আরও সংকুচিত করা হলো। এটা অত্যন্ত স্পষ্ট যে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে বাড়তি সুবিধা দিতে এবং জাতীয় নির্বাচনে সরকারি দলের নিয়ন্ত্রণ আরও জোরদার করতেই এই সংশোধনী আনা হয়েছে।

তিনি বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই, নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা শুরু থেকে গুরুতরভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। গোটা নির্বাচনী ব্যবস্থাই যেখানে ভেঙে দেওয়া হয়েছে সেখানে নির্বাচন কমিশনের অবশিষ্ট ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার এই তৎপরতা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকারি দলের স্বেচ্ছাচারিতা, আধিপত্য ও কর্তৃত্ব আরও বাড়িয়ে তুলবে। আর ক্ষমতাসীন সরকার যখন আরও একটি সাজানো একতরফা নির্বাচনের পাঁয়তারা করছে, তখন ভোট বাতিলে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা কমানো যে পুরোপুরি দুরভিসন্ধিমূলক তাও স্পষ্ট বোঝা যায়। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সরকার ও সরকারি দলের নীলনকশা বাস্তবায়ন করতেই যে এই সংশোধনী আনা হয়েছে তাও অত্যন্ত পরিষ্কার।

সাইফুল হক বলেন, সরকারি দলের আর একটি একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠানের পাঁয়তারার কারণে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নানা দিক থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ। আরপিওর এই সংশোধনী এই ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। সংবিধান নির্বাচন কমিশনকে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে দায়িত্ব দিয়েছে, আরপিওর এই সংশোধনী তারও পরিপন্থি। এর মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশনের হাত-পা বেঁধে ফেলা হলো।

সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *