ঈদের বাকি আর মাত্র একদিন। সারা দেশে বইছে উৎসবের আনন্দ। নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছে লাখো মানুষ। প্রতিদিন ঢাকা ছাড়ছে নগরবাসী। বাস, ট্রেন, লঞ্চ—সবখানেই ঘরমুখো মানুষের ভিড়। তবে এবারের ঈদযাত্রা অনেকটা স্বস্তিদায়ক।
ঢাকা থেকে বের হওয়ার মুখগুলোতে যানজট থাকলেও দূরযাত্রায় দুর্ভোগ নেই। এদিকে মানুষ বাড়ি ফেরায় ঢাকা ধীরে ধীরে ফাঁকা হতে শুরু করেছে। গত সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে ঈদযাত্রা শুরু হলেও বৃহস্পতিবার সবচেয়ে বেশি মানুষ ঢাকা ছাড়ছে। এ দিন ভোর থেকে গাবতলী, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ ও কমলাপুর রেলস্টেশন গিয়ে দেখা যায়, বেশ স্বাচ্ছন্দে হাজার হাজার মানুষ ঢাকা ছাড়ছে।
গতকাল বুধবারও ট্রেনযাত্রা ছিল স্বাভাবিক। কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, যাত্রীর উপচে পড়া ভিড় নেই। টিকিট ছাড়া কেউ প্ল্যাটফরমে ঢুকতে পারছে না। স্টেশনে টিকিটবিহীন যাত্রীর প্রবেশ ঠেকাতে তিন স্তরের তল্লাশির ব্যবস্থা রেখেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
ঢাকা রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক মাসুদ সারওয়ার বলেন, যাত্রী কম নয়, তবে টিকিট ছাড়া যাত্রী না থাকায় কম দেখাচ্ছে। নির্ধারিত সময়ে ট্রেন ছেড়ে যাওয়ায় জটলা তৈরি হচ্ছে না। সব মিলিয়ে প্রায় ২৮ হাজার আসনে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। সঙ্গে ২৫ শতাংশ স্ট্যান্ডিং টিকিট বরাদ্দ থাকছে।
তবে গতকালের তুলনায় বাসে যাত্রীর চাপ আজ বেশি ছিল। মহাখালী বাস টার্মিনালে সকাল থেকে যাত্রীর চাপ ছিল। আজ সবচেয়ে বেশি যাত্রী হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গতকাল ঘরমুখো মানুষের চাপ দেখা যায় সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে। সেখানকার পরিবহনগুলোর দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা অবশ্য মানুষের এই চাপকে বলছেন মোটামুটি। হানিফ এন্টারপ্রাইজের সায়েদাবাদ কাউন্টারের মাস্টার অজয় গণমাধ্যমকে জানান, ঢাকা-সিলেট রুটে যাত্রীর সংখ্যা আগের দিনের চেয়ে দ্বিগুণ ছিল। দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত তাদের কাউন্টার থেকে ১৬টি গাড়ি সিলেটের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এ ছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে দুপুর ১টা পর্যন্ত হানিফ পরিবহনের ১৫টি বাস ছেড়ে যায়।
আজকের তুলনায় গতকাল ভিড় কম ছিল গাবতলী বাস টার্মিনালে। দুপুরে অল্প কিছু কাউন্টার বাদে বেশির ভাগ কাউন্টারই খালি ছিল। সন্ধ্যার পর অবশ্য যাত্রীর চাপ বাড়তে শুরু করে। পদ্মাসেতুর কারণে গাবতলীতে যাত্রীর চাপ কমে গেছে বলে জানিয়েছেন সাউদিয়া পরিবহনের ব্যবস্থাপক আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, ঈদের মৌসুমে সকালে একটি গাড়ি ছেড়েছি। কিন্তু আগে পাঁচ থেকে সাতটি গাড়ি ছাড়া হয়ে যেত।
অনেকে গতকাল টিকিটের দাম নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাদের ভাষ্য, অনেক বাসেই টিকিটের দাম ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেশি রাখা হচ্ছে। সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী মাসুম বিল্লাহ সায়েদাবাদে পিরোজপুরগামী পালকি এক্সপ্রেসের গতকালের টিকিট নেন পাঁচ-ছয় দিন আগে। ৬৫০ টাকার টিকিট ৮০০ টাকা দিয়ে কিনতে হয়েছে বলে জানান তিনি।গতকাল সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ছিল দক্ষিণাঞ্চলগামী ঘরমুখো মানুষের ভিড়। পদ্মা সেতু চালুর পর গত বছরের মতো এবারও যাত্রীর চাপ স্বস্তিদায়ক। অনেকেই টার্মিনালে এসে টিকিট কেটে লঞ্চে চড়েছেন। এ ঘাট থেকে চাঁদপুর, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা, ঝালকাঠিগামী লঞ্চগুলো যাত্রা শুরু করছে। লঞ্চগুলো যাত্রীতে ভরপুর। টার্মিনালেই টিকিট কেটে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দিতে পেরে যাত্রীরা স্বস্তি প্রকাশ করেন।ঘরমুখো মানুষের চাপে গতকাল ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও মোড়ে যানজট তৈরি হলেও আজ মোটামুটি ফাঁকা। আজ রাজধানীর ফর্মগেট, বনানী, খিলগাঁও, বাসাবোসহ বিভিন্ন এলাকায় গতকালের তুলেনায় জ্যাম কম ছিল। বিশেষ করে রাজধানীর উত্তর প্রান্তে উত্তরা ও আবদুল্লাপুর এলাকায় যানজট সবচেয়ে কম। কাল ঢাকা আরও ফাঁকা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সড়কের পরিস্থিতি ও যানজট নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) কার্যালয়ে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ১৩০টি ক্যামেরার মাধ্যমে যানজটপ্রবণ জায়গাগুলো পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। কোথাও যানজট হলে তাত্ক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়ার প্রস্তুতি রয়েছে।
এদিকে বিআরটিএর চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, ‘গত দুই-তিন দিন আমাদের কাছে যে তথ্য আছে, তাতে কোথাও কোনো যানজট সৃষ্টি হয়নি। কোনো ধরনের অভিযোগ আমাদের কাছে নেই। এমনকি অতিরিক্ত ভাড়া আদায়েরও তেমন কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে নেই। ঈদ যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে ঢাকার ২০টি পয়েন্টসহ গুরুত্বপূর্ণ ৪৬টি পয়েন্ট নির্ধারণ করে আমাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত করেছি। ’