যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইয়েমেনের রাজধানী সানায় পদদলিত হয়ে অন্তত ৮৫ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে। এছাড়া পদদলিত হয়ে কমপক্ষে আরও ৩২২ জন আহত হয়েছেন। যাকাতের অর্থ বিতরণের সময় পদদলনে হতাহতের এই ঘটনা ঘটে।
বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইয়েমেনের রাজধানীতে দাতব্য সহায়তা হিসেবে যাকাতের অর্থ বিতরণের সময় পদদলিত হয়ে ৮০ জনেরও বেশি লোক নিহত এবং আরও শত শত লোক আহত হয়েছেন বলে হুথি কর্মকর্তারা বৃহস্পতিবার এএফপিকে জানিয়েছেন।
আরব উপদ্বীপের দরিদ্রতম এই দেশটি বহু বছর ধরে যুদ্ধপীড়িত এবং এই কারণে দেশটির বেশিরভাগ মানুষই দরিদ্র।
একজন হুথি নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেছেন, সানার বাব আল-ইয়েমেন জেলায় পদদলিত হওয়ার পর কমপক্ষে ‘৮৫ জন নিহত এবং ৩২২ জনের বেশি আহত হয়েছেন’। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি এএফপিকে বলেন, ‘মৃতদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে।’
ইয়েমেনের দ্বিতীয় একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তাও হতাহতের এই সংখ্যা নিশ্চিত করেছেন।হুথি নিয়ন্ত্রিত ইয়েমেনের রাজধানী সানায় অবস্থানরত এএফপির একজন সংবাদদাতা জানিয়েছেন, রাজধানী একটি স্কুলের ভেতরে এই ঘটনা ঘটেছে। সেখানে যাকাতের অর্থ বিতরণ করা হচ্ছিল।
নিহত ও আহতদের নিকটবর্তী হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে এবং যাকাত বিতরণে অনিয়মের জন্য দায়ীদেরকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে। এই ঘটনায় তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
হুথির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবশ্য হতাহতের সঠিক সংখ্যা প্রদান করেনি। তবে তারা বলেছে, কয়েকজন ব্যবসায়ীর এলোমেলোভাবে অর্থ বিতরণের সময় পদদলিত হওয়ার কারণে কয়েক ডজন লোক মারা গেছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত ভিডিওগুলোতে একটি বড় কমপ্লেক্সের ভেতরে মাটিতে মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। সেসময় চারপাশে অবস্থান করা লোকেদের চিৎকার করতেও দেখা যায়। তবে এএফপি স্বাধীনভাবে এই ভিডিও ফুটেজটি যাচাই করতে পারেনি।অন্যদিকে উদ্ধার অভিযানে সংশ্লিষ্ট দু’জন প্রত্যক্ষদর্শী বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, শত শত মানুষ যাকাতের অর্থ গ্রহণের জন্য একটি স্কুলে ভিড় করেছিলেন। এসময় সেখানে জনপ্রতি ৫ হাজার ইয়েমেনি রিয়াল বা প্রায় ৯ মার্কিন ডলার করে সেখানে দেয়া হচ্ছিল।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পৃথক এক বিবৃতিতে আরও বলেছে, যাকাতের অর্থ প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজনের জন্য দায়ী দুই ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়েছে এবং এই ঘটনায় তদন্ত চলছে।
২০১৪ সালে ইরান-সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীরা রাজধানী সানা দখলে নিলে ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এর পরের বছর আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারকে সমর্থন করতে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়। গত অক্টোবরে মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও গতবছর জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় ৬ মাসের যুদ্ধবিরতি নাটকীয়ভাবে হ্রাস পায়। এই যুদ্ধকে জাতিসংঘ বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ মানবিক ট্র্যাজেডিগুলোর একটি হিসেবে বর্ণনা করেছে।
জাতিসংঘের মতে, ইয়েমেনের দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করে। যারমধ্যে হুথি নিয়ন্ত্রিত এলাকার সরকারি-কর্মচারীরাও রয়েছে, যারা বছরের পর বছর বেতন পাননি।