প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীর ক্ষমতায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, নারীরা সমাজের সবচেয়ে নাজুক অংশ এবং যেকোনো সঙ্ঘাত দুর্যোগের সময় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তারা।
তিনি বলেন, ‘এটা প্রশ্নাতীত যে নারীরা সমাজের সবচেয়ে নাজুক অংশ, বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে। তারা বিভিন্ন ধরনের সহিংসতা, অপুষ্টি, অশিক্ষা এবং অন্য মৌলিক চাহিদার শিকার। যেকোনো সঙ্ঘাত ও দুর্যোগের সময় তাদের দুর্দশা বহুগুণ বেড়ে যায়।’
সোমবার আন্তর্জাতিক নারী শান্তি ও নিরাপত্তা বিষয়ক দু’দিনব্যাপী সেমিনারের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
ঢাকা সেনানিবাসের আর্মি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ পুলিশ এ সেমিনারের আয়োজন করে।
তিনি বলেন, নারীদের শান্তি ও নিরাপত্তার সমস্যা সমাধানের জন্য জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদ এক হাজার ৩২৫ নম্বর রেজুলেশন গৃহীত হয়েছে, যা নারী শান্তি ও নিরাপত্তা (ডব্লিউপিএস) এজেন্ডা প্রতিষ্ঠা করেছে এবং বাংলাদেশ রেজুলেশন প্রণয়নে অংশ নিতে পেরে গর্বিত।
শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ জাতীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে নারীদের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশনায় প্রণীত বাংলাদেশের সংবিধান নারীর সমঅধিকার নিশ্চিত করেছে।
তিনি সংবিধানের ২৮ (১) অনুচ্ছেদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, রাষ্ট্র শুধুমাত্র ধর্ম, বর্ণ, বর্ণ, লিঙ্গ বা জন্মস্থানের ভিত্তিতে কোনো নাগরিকের প্রতি বৈষম্য করবে না। একই অনুচ্ছেদের (২) ধারায় বলা হয়েছে, রাষ্ট্র ও জনজীবনের সর্বক্ষেত্রে নারীর পুরুষের সমান অধিকার থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার নারী নীতি ২০১১ প্রণয়ন করেছে। নীতিমালার আওতায় নারীদের সামগ্রিক উন্নয়ন এবং মূলধারার আর্থ-সামাজিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে এবং তাদের ক্ষমতায়নের পথে সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
তিনি আরো বলেন, রাজনীতি, প্রশাসন, শিক্ষা, ব্যবসা, খেলাধুলা, সশস্ত্র বাহিনীর মতো খাতে তাদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি ও অবদান বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক দৃশ্যপটকে বদলে দিয়েছে।
তিনি উল্লেখ করেন যে আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীদের অধিকতর অংশগ্রহণের কারণে বাংলাদেশে সকল ক্ষেত্রে লিঙ্গ সমতার উন্নতি হয়েছে।
সেমিনারে তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে লিঙ্গ সমতায় বাংলাদেশ শীর্ষে রয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শান্তিরক্ষা, শান্তি প্রতিষ্ঠা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও সহিংস উগ্রবাদ প্রতিরোধে নারীদের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ একটি রোল মডেল। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে তার সরকারই সশস্ত্র বাহিনীতে নারীদের নিয়োগের দ্বার খুলে দিয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ নারী শান্তিরক্ষীদের শীর্ষ অবদানকারী দেশ। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর মোট ৭০৪ জন নারী শান্তিরক্ষী জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছে। বর্তমানে ৩৭৩ জন নারী সদস্য বিভিন্ন শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োজিত রয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘অন্যদিকে, বাংলাদেশ পুলিশের মোট এক হাজার ৬২৪ জন নারী পুলিশ কর্মকর্তা শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন এবং বর্তমানে ১৫০ জন কর্মকর্তা কাজ করছেন।’
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে নারীরা এখন সরকারি সচিব, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এবং অনেক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে দায়িত্ব পালন করছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, অংশগ্রহণকারীরা রাখাইন রাজ্য থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গাদের সাথে মতবিনিময় করবেন জেনে তিনি আনন্দিত।
তিনি বলেন, ‘আমরা মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দিয়েছি। আমরা তাদের দুর্দশা ও দুঃখ-দুর্দশা বুঝতে পারি। কারণ ১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের একই ধরনের অভিজ্ঞতা ও ধাক্কা খেয়েছিল। আমি আশা করি, যুদ্ধ ও সংঘাতের শিকারদের বোঝার জন্য ইন্টারেক্টিভ অধিবেশনটি অংশগ্রহণকারীদের জন্য একটি দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৭ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ, কানাডা ও যুক্তরাজ্য কর্তৃক চালু হওয়া প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা প্রধানের বর্তমান চেয়ারম্যান হিসেবে সকলেই ডব্লিউপিএস এজেন্ডাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকারবদ্ধ।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘ডব্লিউপিএস-এ জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৯-২০২২ প্রণয়ন, আমরা এটি বাস্তবায়ন করছি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ২০২৫ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।’
সূত্র : ইউএনবি