এ বছরের শুরুতে জাতীয় দলের একটা সংবাদ সম্মেলনে পেপেকে নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো বলেছিলেন, ‘পেপে পর্তুগাল দলের ফার্নিচার।’ এমন কথার পর সামনে বসা সাংবাদিকরা কিছুটা স্তব্ধ হয়ে যান। মূলত ফার্নিচার শব্দটি তিনি বড় সম্পদ অর্থেই ব্যবহার করেছেন।
হ্যাঁ, শুধু পেপে নন; রোনালদোও এই দলের পিলার। তাঁদের মধ্যে বোঝাপড়াটা দারুণ। একসঙ্গে রিয়াল মাদ্রিদ মাতিয়েছেন। এর পর হয়তো দু’জনের পথ দু’দিকে বেঁকে যায়, কিন্তু থেমে নেই জাতীয় দলের খবরদারিটা। ড্রেসিংরুমে তাঁরাই রাজা। দু’জনের কথা বাকিদের শুনতে হয়। না শুনে উপায় আছে! অভিজ্ঞতা বলি আর বয়স বলি- সব দিক থেকেই তো তাঁরা এগিয়ে। তাই অনেক সময় রোনালদোকে কোচের ভূমিকাও নিতে হচ্ছে। এবার কাতারের মহামঞ্চেও তাঁরাই সারথি।
দু’জনই হয়তো নিজেদের শেষ বিশ্বকাপ খেলবেন। এর পর আর দেখা যাবে না পর্তুগালের জার্সি গায়ে কোনো মহাআসরে। সেই ২০০২ সালে প্রথম দেখা। এর পর বন্ধুত্ব। দেশ ও ক্লাব মিলিয়ে অনেকটা পথ হাতে হাত, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পথ চলেছেন, জয় করেছেন একের পর এক ট্রফি। সব মিলিয়ে তাঁদের দু’জনের সম্মিলিত শিরোপা ১৫টি।
স্পোর্টি সিপিতে থাকাকালে পেপের সঙ্গে বন্ধুত্বটা জমে ওঠে। এক সাক্ষাৎকারে সেই স্মৃতি রোমন্থন করেন রোনালদো, ‘আমি তার বন্ধু। ২০ বছর আগে আমাদের দেখা হয়। সে ক্রমেই আমার আপন হয়ে যায়। তাকে সবাই সম্মান করে। দল জানে, সে কতটা গুরুত্বপূর্ণ আমােেদর জন্য।’
রোনালদোর জন্য বিশ্বকাপটা বেশিই স্পেশাল। এমন একজন মহানায়কের হাতে যদি সোনালি ট্রফিটা না-ই ওঠে, তাহলে হয়তো আফসোস থেকেই যাবে। এবারের আগে চারটি বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছেন সিআর সেভেন। খুব একটা প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি তাঁর দল। এবার ফার্নান্দো সান্তোসের নিখুঁত বিচার-বিশ্নেষণে দারুণ একটা দল গড়েছে পর্তুগিজরা।
তরুণের সঙ্গে অভিজ্ঞও আছেন, যাঁরা কিনা কাতার মাত করতে পারেন সহজেই। তা ছাড়া আর ১০টি দেশ যেখানে কন্ডিশন নিয়ে দুশ্চিন্তায়। পর্তুগালের প্রাণভোমরা রোনালদো বলে দিয়েছেন, কন্ডিশন কোনো বাধা হবে না তাঁদের জন্য। তাঁরা প্রস্তুত। তাঁর এমন আত্মবিশ্বাসই বলে দিচ্ছে পর্তুগাল আগের আসরগুলো থেকে এবার বড় কিছু করতে চায়।
আজ থেকে শুরু হওয়া সেই মহাযজ্ঞের গ্রুপ পর্বে পর্তুগাল প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়েছে উরুগুয়ে, দক্ষিণ কোরিয়া ও ঘানাকে। ২৪ নভেম্বর বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায় পর্তুগিজদের প্রথম ম্যাচ ঘানার সঙ্গে। আপাতত তাদের দৃষ্টি সেই ম্যচেই। শুরুটা জয় দিয়েই রাঙাতে চায় পর্তুগাল। এরই মধ্যে শেষ প্রস্তুতি ঝলক দেখিয়েছে।
রোনালদোকে ছাড়াও নাইজেরিয়াকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দেয়। যেটা মূল মঞ্চে পা রাখার আগে সান্তোসের দলের জন্য ইতিবাচক দিক। তবে গ্রুপ পর্বটা টপকানো সহজ হবে না পর্তুগালের জন্য। ঘানাও এবার কোমর বেঁধে নামতে চায়। আরেক দল উরুগুয়েও আছে ছন্দে। এশিয়ার অন্যতম পরাশক্তি দক্ষিণ কোরিয়াও ছাড় দিতে নারাজ। সেক্ষেত্রে পর্তুগাল ভুল করলেই পড়তে পারে বিপাকে।
Hits: 0