ওয়েস্ট ইন্ডিজে টেস্টের পর টি-টোয়েন্টিতে ভরাডুবি হয় বাংলাদেশের। শ্রীহীন শুরুর পর ওয়ানডেতে দাপুটে প্রত্যাবর্তন করে টাইগাররা। ৩ ম্যাচ সিরিজে ক্যারিবীয়দের হোয়াইটওয়াশ করে তামিম ইকবালের দল। দুর্দান্ত অর্জনের পরও রোমাঞ্চিত নন টাইগার অধিনায়ক। জানালেন উন্নতি করার কথা।
হেড টু হেড পরিসংখ্যানে বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয় সংখ্যা এখন সমান ২১। এই ফরম্যাটে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে গত ১৪ ম্যাচে ১৩টিইতেই জিতেছে টাইগাররা। এর মধ্যে টানা জয় ১১টি। এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো উইন্ডিজদের হোয়াইটওয়াশ করলো বাংলাদেশ। এত কিছুর পরও এই অর্জনকে উঁচুতে রাখতে চান না তামিম। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমি এ জয়গুলোকে খুব উঁচুতে রাখতে চাই না।
এটা নিয়ে খুব বেশি রোমাঞ্ছিত না।’
গায়ানার স্পিনবান্ধব উইকেটে এক পেসার নিয়ে খেলতে নামে বাংলাদেশ। স্পিনাররা সুবিধাও পেয়েছেন বেশ। তামিম বলেন, ‘স্পিনারদের জন্য খুব বেশি সহায়তা ছিল। এ কারণে বিশ্ব জয় করে ফেলেছি, (বিষয়টা) এমন নয়। ভালো উইকেটে খেললে আমাদের আরও ভালো খেলতে হবে।’
শেষ ম্যাচে ৯ বল হাতে রেখে ৪ উইকেটের জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের দেয়া ১৭৯ রানের লক্ষ্যে ২ উইকেটে ৯৬ রান তোলে বাংলাদেশ। সেখান থেকে ২০ রান যোগ করতে আরও ৩ উইকেট হারায় টাইগাররা। ষষ্ঠ উইকেটে সোহানের সঙ্গে ৩১ রানের জুটি গড়ে বিদায় নেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। যে কারণে হঠাৎ চাপে পড়ে যায় টাইগাররা।
পরিস্থিতি সামলে দলকে জয় এনে দেন সোহান ও মিরাজ। এই আশঙ্কাজনক পরিস্থিতির উন্নতি করতে হবে জানিয়ে টাইগার অধিনায়ক বলেন, ‘উন্নতির শেষ নেই। উইকেট কঠিন ছিল, খেলার অযোগ্য ছিল না। ৭ বা ৮ উইকেটে যদি জিততাম, তাহলে উন্নতি হয়েছে বলতাম। কারণ একটা সময় নিশ্চিত ছিল না ম্যাচ কোনদিকে যাচ্ছে। বোলিং ব্যাটিং, সবখানেই উন্নতি লাগবে। জিতেছি বলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়নি। ধীরে ধীরে সমাধান করছি। জিততে শুরু করলে মানুষ দুর্বলতা লুকিয়ে ফেলে। আমি সেভাবে ভাবি না। চেষ্টা করছি, আশা করি সামনে ভালো হবে।’
ম্যাচের আগে অধিনায়ক তামিম ও কোচ রাসেল ডমিঙ্গো সাইডবেঞ্চের খেলোয়াড়দের পরখ করার কথা জানিয়েছিলেন। তবে ম্যাচে বাংলাদেশ নামে পূর্ণ শক্তির দল নিয়েই। এ বিষয়ে তামিম বলেন, ‘আমি চেয়েছিলাম। তবে ম্যানেজমেন্ট বলেছে পুরোশক্তির দল চায় তারা। আমরা জানতাম, একই উইকেটে খেলার ফলে একটাই পরিবর্তন আসতে পারে। একজন পেসারের জায়গায় তাইজুলকে খেলানো, আমিও এটা বুঝতে সক্ষম হয়েছি। কারণ কথা ছিল দল যখন ভালো করছে, তখন সেভাবেই শেষ করা উচিত।’
তবে সাইডবেঞ্চের খেলোয়াড় সামর্থ্য প্রমাণের সুযোগ দেয়ার পক্ষে জানিয়ে তামিম বলেন, ‘উন্নতি করতে হলে বেঞ্চের শক্তি দেখতেই হবে। নাহলে কীভাবে বুঝতাম তাইজুলের এই গুণ আছে, বা মোসাদ্দেকের বোলিংয়ের এই সামর্থ্য আছে। কোনো না কোনো সময় দেখতেই হবে। হয়তো একসঙ্গে পাঁচজনকে পরখ করবেন না, এক-দুই জন করে করতে হবে। ’
বিশ^কাপের পরও খেলতে চান তামিম
ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের দিনে তামিম জানিয়েছিলেন, ২০২৩ বিশ্বকাপেই শেষ হতে যাচ্ছে সিনিয়র চার ক্রিকেটারের ক্যারিয়ার। তবে ক্যারিবীয়দের হোয়াইটওয়াশ করার পর মত পাল্টিয়ে তিনি জানান, ২০২৩ বিশ্বকাপে থামার ইচ্ছা নেই তার। তৃতীয় ওয়ানডে শেষে তামিম বলেন, ‘একটা জিনিস স্পষ্ট করে দিতে চাই। গত প্রেজেন্টেশনে বলেছিলাম- আমাদের ৪ জনের সম্ভবত ইতি ঘটবে ২০২৩ বিশ্বকাপে। এটা আসলে ‘সিøপ অব টাং’ ছিল।
আমি বলতে চেয়েছিলাম এটা আমাদের তিনজনের শেষ বিশ্বকাপ হতে পারে। বাকিরা কখন শেষ করবে, কতদিনে বলবে, এটা তো তাদের ওপর। আমারও ইচ্ছা আছে (আরও খেলার)। অনেক সময় বিতর্ক হয়ে যায়, তাই পরিষ্কার করলাম।’ বিশ্বকাপের অনেক দিন বাকি থাকলেও তামিম স্পষ্ট করে জানালেন, বিশ্বকাপ জয়ের লক্ষ্যে খেলতে যাবে তারা, ‘আমাদের লক্ষ্য ২০২৩ বিশ্বকাপ (জয়), কোনো সন্দেহ নেই।
ওই প্রক্রিয়াতেই আমরা আছি। আমি খুব সামনে তাকাতে চাই না। কী হয় না হয়, কে ইনজুরিতে পড়ে, কে না থাকে দলে।’ এর আগে অবসর প্রসঙ্গে তামিমের মন্তব্য ছিল এমন, ‘২০২৩ বিশ্বকাপ আমাদের সবার জন্য সবচেয়ে বড় ইভেন্টের একটি হবে। বিশেষ করে আমাদের চারজনের আমি, সাকিব, মুশফিক এবং মাহমুদুল্লাহ। আমাদের সম্ভবত সেখানেই শেষ হবে (বিশ্বকাপ)। আমরা আমাদের সেরাটা দিয়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।’ দলে সোহানের জায়গা পাকা!
পবিত্র হজব্রত পালনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে যাননি মুশফিকুর রহীম। ওয়ানডে সিরিজ থেকে ছুটি নেন সাকিব আল হাসান। চোটে পড়ে ছিটকে যান মিডল অর্ডার ইয়াসির আলী চৌধুরী। তিনজন না থাকায় সুযোগটা আসে নুরুল হাসান সোহানের। যা ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছেন তিনি। ধারাবাহিক পারফরম্যান্সে দলে জায়গা প্রায় পাকা করে ফেলেছেন সোহান এমনটাই মনে করেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে দুই ইনিংসে ব্যাট করেন সোহান। দুই ম্যাচেই অপরাজিত থেকে দলকে জেতান। প্রথম ম্যাচে অপরাজিত ২০ রান করে মাহমুদুল্লাহর সঙ্গে জুটিতে দলকে জেতান সোহান।
শেষ ম্যাচে যখন ব্যাটিংয়ে নামেন সোহান, তখন ১১৬ রানে ৫ উইকেট নেই বাংলাদেশের। বিপদে পড়া দলকে টেনে তোলেন। ৩৮ বলে অপরাজিত ৩২ রান করেন তিনি।
তামিম বলেন, ‘ব্যাটিং লাইনআপের শীর্ষ পাঁচ ব্যাটারের তিনজনকেই পাইনি আমরা। অন্যদের জন্য এটি ছিল দারুণ সুযোগ। আমার মনে হয় ওরা দারুণভাবে নিজেদের মেলে ধরেছে। বিশেষ করে সোহান। যখনই সুযোগ পেয়েছে, সে ঠান্ডা মাথায় ও ধীরস্থির হয়ে খেলেছে। আজকেও যেমনটি দেখিয়েছে। খুব ভালো ব্যাট করেছে সে।’
তামিম বলেন, ‘সে (সোহান) প্রায় জায়গা পাকা করে ফেলেছে। সামনে যদি ওকে খেলা মিস করতে হয় অন্যদের কারণে, অপেক্ষমাণ হিসেবে সবার আগে সেই থাকবে। এরকম সুযোগ এলে তাই যতটা সম্ভব কাজে লাগানো উচিত।’ ক্যারিবীয়দের হোয়াইটওয়াশ করার ম্যাচে ব্যর্থ হয়েছেন আফিফ হোসেন এবং মোসাদ্দেক হোসেন। আফিফ শূন্য রানে ফেরার পর ১৪ রান করেন মোসাদ্দেক। সোহানের দলে থিতু হওয়ার আভাস দেয়ার পর আফিফ- মোসাদ্দেকদের জায়গা হারানোর আশঙ্কার কথাও জানিয়েছেন তামিম, ‘আমি অবশ্যই খুশি হতাম যদি মোসাদ্দেক বা আফিফ খেলাটা শেষ করে আসতো। আমি কিন্তু আগে সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলাম, এই সিরিজে সাকিব-মুশফিক নেই। ওরা ফিরলে কিন্তু এখান থেকে দু’জনকে বেরিয়ে যেতে হবে।’
তামিম বলেন, ‘আমি নিশ্চিত, ওরা (আফিফ-মোসাদ্দেক) সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে। তবে সব সময় একটা কথা বলি, কিছু ক্রিকেটার হয়তো ৫-৬টি সুযোগ পাবে, কিছু পাবে ২টি। সবাইকে সমান সুযোগ দেয়া যাবে না হয়তো। যে দু’টি সুযোগ পাচ্ছেন, তার উচিত সেটা কাজে লাগানো।’