গডফাদার তৈরির নেপথ্যের গল্প

গডফাদার তৈরির নেপথ্যের গল্প

বিনোদন

গডফাদার’কে ধরা হয় উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত সিনেমার আদর্শ উদাহরণ। এমনকি আইএমডিবি রেটিংয়ে শীর্ষে থাকা ‘দ্য শশাঙ্ক রিডাম্পশন’ সিনেমাটি উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত হলেও, সমালোচকদের মতে ‘গডফাদার’-এর মতো সফলভাবে কেউই উপন্যাসকে চলচ্চিত্রের পর্দায় আনতে পারেননি। সম্প্রতি ‘গডফাদার’ মুক্তির ৫০ বছর পেরিয়েছে। জেনে নেওয়া যাক, যেভাবে তৈরি হয়েছিলো গডফাদার

‘গডফাদার’কে ধরা হয় উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত সিনেমার আদর্শ উদাহরণ। এমনকি আইএমডিবি রেটিংয়ে শীর্ষে থাকা ‘দ্য শশাঙ্ক রিডাম্পশন’ সিনেমাটি উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত হলেও, সমালোচকদের মতে ‘গডফাদার’-এর মতো সফলভাবে কেউই উপন্যাসকে চলচ্চিত্রের পর্দায় আনতে পারেননি। সম্প্রতি ‘গডফাদার’ মুক্তির ৫০ বছর পেরিয়েছে। জেনে নেওয়া যাক, যেভাবে তৈরি হয়েছিলো  গডফাদার

মারিয়া পুজোর লেখা ‘গডফাদার’ উপন্যাসটি যখন বিখ্যাত হয়নি, তখনই ৮০ হাজার ডলারের বিনিময়ে বইটির স্বত্ব কিনে নেয় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান প্যারামাউন্ট পিকচারস। সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলে থাকেন, বইটি যখন মাত্র একশ পৃষ্ঠা লেখা হয়েছিল, তখনই স্বত্ব কেনার পরিকল্পনা করছিল প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানটি। একেই হয়তো বলে প্রযোজকের চোখ! কারণ এটি যে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ব্যবসাসফল সিনেমা হতে চলেছে, তা হয়তো অদৃশ্য চোখে দেখতে পেয়েছিলেন তাঁরা।কিন্তু সিনেমাটি তৈরির শুরু থেকেই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান আর পরিচালকের মধ্যে ছোট ছোট বিষয়ে বিরোধ লেগেই ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত যে সিনেমাটি তৈরি করা গেছে, এটিই ছিল অবাক করা ব্যাপার। প্রথমত, সিনেমাটিকে সত্তর দশকের গল্প হিসেবে দেখানোর জন্য উপন্যাসের অনেক কিছুই চিত্রনাট্যে পাল্টে ফেলা হয়। কিন্তু পরিচালক ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলা চেয়েছিলেন, উপন্যাসের মতো সিনেমায় চল্লিশ-পঞ্চাশের দশকের গল্পই দেখাক। মুল চিত্রনাট্যকার ও উপন্যাসের লেখক মারিও পুজোকে তিনি রাজি করালেও প্রযোজক প্রতিষ্ঠান প্যারামাউন্ট পিকচারস তা মানতে চায়নি শুরুতে।

দ্বিতীয়বার নির্মাতা ফ্রান্সিসের সাথে আবার প্যারামাউন্টের দ্বন্দ্ব বাঁধে অভিনেতা নির্বাচনের সময়। ভিটো কর্লিয়নি চরিত্রের জন্য নির্মাতা ফ্রান্সিস তুখোড় অভিনেতা মারলন ব্র্যান্ডোকে নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী হন। কিন্তু প্রযোজনা সংস্থা প্যারামাউন্ট শুরুতেই এটি নাকচ করে। কারণ তখন সময়মতো না আসা, শুটিংয়ে দুর্ব্যবহারসহ দুর্নামে জর্জরিত ছিল ব্র্যান্ডোর ইমেজ। প্যারামাউন্ট পিকচারসের মিটিংয়ে পরিচালক ফ্রান্সিস রীতিমতো গড়াগড়ি খেয়েছিলেন মারলন ব্র্যান্ডোকে নেওয়ার জন্য। তখন কঠিন তিনটি শর্ত জুড়ে দিয়ে ব্র্যান্ডোকে নেওয়ার ব্যাপারে অনুমতি দেয় তারা।

প্রথমত, কপোলা ও ব্র্যান্ডোর যা পারিশ্রমিক তার তুলনায় অনেক কম দেওয়া হবে।

দ্বিতীয়ত, ব্র্যান্ডো যত বড় অভিনেতাই হন না কেন, এই সিনেমায় অভিনয়ের জন্য তাঁকে স্ক্রিন টেস্ট দিতে হবে।

আর তৃতীয়ত, এক মিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি করতে হবে, যাতে ব্র্যান্ডোর কোনো কাজের জন্য বাজেটের বেশি টাকা খরচ না হয়।

সত্যিকার অর্থে, সেসময়ের জন্য মারলন ব্র্যান্ডোকে এই তিনটি শর্তে রাজি করানো ছিল প্রায় অসম্ভব। পরিচালক ফ্রান্সিস যখন মারলন ব্র্যান্ডোর কাছে যান চরিত্রটি নিয়ে এবং অনুরোধ করেন স্ক্রিনটেস্ট দেওয়ার, তখন কয়েক মুহুর্তের জন্য মারলন ব্র্যান্ডো যেন বনে যান গডফাদারের ভিটো কর্লিয়নি। পরিচালক একটি সাক্ষাৎকারে সেই পরিস্থিতি বর্ণনা করেছিলেন এভাবে, ‘তিনি প্রথম তাঁর বড় চুল খুলে শক্ত করে বাঁধলেন। চোয়ালটা সামনের দিকে নিয়ে গডফাদার সিনেমার প্রথম সংলাপটি বললেন। যেন কয়েক সেকেন্ড মাত্র! একটু আগের মারলন ব্র্যান্ডো মুহুর্তেই হয়ে গেলেন গডফাদার।

স্ক্রিনটেস্টের জন্য ধারণ করা কয়েক মুহুর্তের চলমান চিত্র দেখে সন্তুষ্ট হয়ে যায় প্যারামাউন্ট পিকচার্স। তারা মারলন ব্র্যান্ডোকে সাদরে আহবান জানায় গডফাদার সিনেমায় অভিনয় করার জন্য।

‘গডফাদার’ সিনেমায় বিখ্যাত সব দৃশ্য ও সংলাপ আছে। সিনেমাটির রন্ধ্রে রন্ধ্রে রয়েছে সে সময়ের মাফিয়া ও গ্যাংস্টারদের কোলাহল। এ সবকিছুই দাঁড়িয়ে আছে সিনেমাটির সম্পাদনা ও চলচ্চিত্রের উচ্চ মানের ভাষার কারণে। ‘গডফাদার’ সিনেমায় কমলা ফলকে মৃত্যুর প্রতীক হিসেবে দেখানো হয়। যখন কোনো মৃত্যু, বিশেষ করে খুন হতে দেখা যায়, তখনই আশেপাশে কমলার আধিক্য দেখতে পাওয়া যায়। ভিটো কর্লিয়নি চরিত্রটিকে প্রথমবার যখন খুন করার জন্য আক্রমণ করা হয়, তখন তিনি একটি দোকানের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন যেখানে কমলা বিক্রি হচ্ছিল।

কিংবা মাইকেল কর্লিয়নিকে একটি সভায় ডেকে হত্যা করার জন্য আক্রমণের সময় খাবার টেবিলের উপর হঠাৎ একটি কমলা গড়িয়ে পরতে দেখা যায়। এটিকে চলচ্চিত্রের ভাষায় বলা হয়— ফোরশেডয়িং।

সবচেয়ে দারুণ ছিল এই সিনেমার চিত্রগ্রহণ। পুরো সিনেমা জুড়ে একটি অন্ধকার জগতের আবহ তৈরি করা হয়েছিল। এমন গল্পও প্রচলিত আছে যে, সিনেমাটি শুরুর সময় আলো-আঁধারির একটি আবহ তৈরি করার জন্য প্রায় এক সপ্তাহ শুটিং পিছিয়েও দেওয়া হয়েছিল।

শুটিংয়ের মাঝামাঝি সময়ে প্রযোজক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পরিচালকের দ্বন্দ্ব তুঙ্গে উঠে গিয়েছিল। পরিচালক হিসেবে ফ্রান্সিসকে বরখাস্ত করার কথাও ভাবছিল প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু বেঁকে বসেন মারলন ব্র্যান্ডো। সাফ জানিয়ে দেন, পরিচালককে বরখাস্ত করা হলে তিনিও কাজ করবেন না।

প্রচুর চাপ, উভয় দিকের দ্বন্দ্ব ও বিভিন্ন বড়সড় বাধাকে পেছনে ফেলে যখন সিনেমাটি মুক্তি পেল, তখন বিশ্বজুড়ে কী ঘটলো এই পঞ্চাশ বছরে তা নিশ্চয়ই দর্শক মাত্রই জানেন।

Visits: 0

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *